আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।

আজ সোমবার দুপুরে এই দাবিতে একটি আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের কাছে তুলে দেয় গণ অধিকার পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল।

লিখিত আবেদনে বলা হয়, ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইভাবে তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর চালানো গণহত্যাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এ ছাড়া দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল, তার অন্যতম সহযোগী ও বৈধতাদানকারী হিসেবে সক্রিয় ছিল জাতীয় পার্টিসহ জোটবদ্ধ বাকি দলগুলো। বিগত তিনটি একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টি।

আবেদনে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরপর তিনটি নির্বাচনে জনগণকে ভোট দিতে না দেওয়া, গুম, ক্রসফায়ার, আয়নাঘরে নির্যাতন, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রতিবেশী দেশের হাতে তুলে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করাসহ বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের ওপর চালানো বর্বর আওয়ামী দুঃশাসনের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের মৌলিক মানবাধিকার হরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের রাষ্ট্রদ্রোহী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই বাংলাদেশের ওপর নির্মম বর্বরতা চালানো ও ধারাবাহিক দুঃশাসনের প্রধান হোতা আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী প্রতিটি দলকে গণহত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করার আহ্বান জানাচ্ছে গণ অধিকার পরিষদ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের দোসরদের নিবন্ধন বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আশা করে গণ অধিকার পরিষদ।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, মাহফুজুর রহমান খান, হাবিবুর রহমান রিজু, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় প র ট সহ গণহত য দলগ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে 

পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।

শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্‌ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।

১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। 

একনজরে জয়দেব

চারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।

ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। 

পাহাড় আর ঝিরির পথে পথে

খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।

জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে। 

সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে। 

জয়দেব রোয়াজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ