আ.লীগ-জাপাসহ ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে ইসিতে গণ অধিকার পরিষদ
Published: 12th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।
আজ সোমবার দুপুরে এই দাবিতে একটি আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের কাছে তুলে দেয় গণ অধিকার পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল।
লিখিত আবেদনে বলা হয়, ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইভাবে তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর চালানো গণহত্যাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এ ছাড়া দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল, তার অন্যতম সহযোগী ও বৈধতাদানকারী হিসেবে সক্রিয় ছিল জাতীয় পার্টিসহ জোটবদ্ধ বাকি দলগুলো। বিগত তিনটি একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টি।
আবেদনে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরপর তিনটি নির্বাচনে জনগণকে ভোট দিতে না দেওয়া, গুম, ক্রসফায়ার, আয়নাঘরে নির্যাতন, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রতিবেশী দেশের হাতে তুলে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করাসহ বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের ওপর চালানো বর্বর আওয়ামী দুঃশাসনের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের মৌলিক মানবাধিকার হরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের রাষ্ট্রদ্রোহী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই বাংলাদেশের ওপর নির্মম বর্বরতা চালানো ও ধারাবাহিক দুঃশাসনের প্রধান হোতা আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী প্রতিটি দলকে গণহত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করার আহ্বান জানাচ্ছে গণ অধিকার পরিষদ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের দোসরদের নিবন্ধন বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আশা করে গণ অধিকার পরিষদ।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, মাহফুজুর রহমান খান, হাবিবুর রহমান রিজু, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় প র ট সহ গণহত য দলগ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর ইনকিলাব মঞ্চের তিন প্রস্তাব
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে ইনকিলাব মঞ্চ। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী এ প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন।
এই তিন প্রস্তাব হলো প্রথমত দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। প্রথম ট্রাইব্যুনাল ব্যক্তির বিচার করবে। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল দলের বিচার করবে। দ্বিতীয়ত, অনেক আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছে, যারা কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। এদের নিয়ে অনেকে মামলা–বাণিজ্য করে। এদের জন্য একটা ‘তওবা কমিশন’ গঠন করার মাধ্যমে তাদের দায়মুক্তি দিতে হবে। তৃতীয়ত, আগামী ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান করা।
এ সময় শরিফ ওসমান হাদী সরকারের প্রতি এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার নতুন পুলিশ নিয়োগের আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, ‘বিসিএসে এত বছর যত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সব আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সুপারিশে হয়েছে। সেই আওয়ামী পুলিশরা কি এখন আওয়ামী লীগকে ধরবে? বাংলাদেশে এত যুবক বেকার। আপনারা এই ১০ মাসে নতুন করে পুলিশ নিয়োগ দিলে অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হতো। আমি সরকারকে বলব, আপনারা এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিন।’
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ১০ মাস পরে হওয়ার কথা ছিল না উল্লেখ করে ইনকিলাব মঞ্চের এই নেতা বলেন, ‘এটা তো তাদের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই করার কথা ছিল।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা মনে কইরেন না আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় আমরা আমাদের অন্যান্য দাবি ভুলে যাব। আপনাদের অতি দ্রুত গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে। শুধু জুলাই গণহত্যা নয়, একই সঙ্গে পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে শরিফ ওসমান হাদী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটা ধারা ছিল, এই ট্রাইব্যুনাল যেকোনো দলেরও বিচার করতে পারবে। কিন্তু গতকাল বলা হলো এটা আগে আইনে ছিল না, আইন সংশোধন করে নতুন করে তা যুক্ত করা হলো। কিন্তু এটা তো পূর্বের আইনে ছিল। তাহলে আমাদের প্রশ্ন হলো কোন উপদেষ্টা এই আইন বাদ দিয়েছেন?’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই মে মাসে যখন জনতা আন্দোলনে নামল, তখন আপনারা বলছেন, এই মে মাসেই দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল করবেন। তাহলে এত দিন সেটা করেন নাই কেন?’
শরিফ ওসমান হাদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপনে (লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন) জাতীয় পার্টির নাম নাই কেন? তারা কি দুধে ধোয়া? তারা কি বিনা ভোটে এমপি হন নাই? আওয়ামী লীগের শরিক ১৪–দলীয় জোটের নাম নাই কেন?’