ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে আলাপ হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ফোনে কথা বলেন দুই বাহিনীর অভিযান-সংক্রান্ত বিভাগের প্রধানেরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।

২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর সংঘাতে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। টানা চার দিন সংঘাতের পর শনিবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। এরপর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, সেদিন দুই বাহিনীর অভিযান-সংক্রান্ত বিভাগের প্রধানেরা যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হন। আজ আবার তাঁরা ফোনালাপ করবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

আজকের ফোনালাপে আলোচনার বিষয়ে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন-নিউজ ১৮ জানিয়েছে, মূলত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন দুই দেশের সামরিক নেতারা। তবে দুই দেশের নেওয়া পাল্টাপাল্টি অন্য পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করা হবে না বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করা না হলেও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সমঝোতা বড় একটি অর্জন। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর শনিবার রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কিছু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও রোববার রাতভর নিয়ন্ত্রণরেখা-সংলগ্ন মানুষ শান্তিতে ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

এ ছাড়া আজ ভারতের ৩২টি বিমানবন্দরও খুলে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সময় সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। এর আগের শনিবারই নিজেদের বিমানবন্দরগুলো খুলে দেয় পাকিস্তান। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরের বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ৩৪ বছর বয়সী ধর্মেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, ‘শহরে আবার জীবন ফিরে আসতে দেখে আমি খুশি।’

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এ ভূমিকা নিয়ে নয়াদিল্লি চুপ থাকলেও প্রথম থেকেই ওয়াশিংটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। আজও হোয়াইট হাউসে উপস্থিত সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন। এ জন্য তিনি গর্বিত।

যুদ্ধবিরতির জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন পক্ষ প্রথম তৎপরতা শুরু করেছিল, তা এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তবে আজ পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কখনোই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়নি। এ ছাড়া নয়াদিল্লির অনুরোধের ভিত্তিতেই সমঝোতার জন্য যোগাযোগ করেছিল ইসলামাবাদ।

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানই ‘জয়ী’ হয়েছে—এমন বয়ানও দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের নেতাদের পক্ষ থেকে। সংবাদমাধ্যম দ্য ডন–এর খবর অনুযায়ী, গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, শুধু সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী নয়, কূটনীতি ও গণমাধ্যম মিলিয়ে পাঁচটি ক্ষেত্রে ভারতকে পরাজিত করেছে পাকিস্তান। ভবিষ্যতে হামলার আগে ভারত দ্বিতীয়বার বিবেচনা করবে।

আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: এর মানে আসলে কী১৪ ঘণ্টা আগে

নিজেদের এগিয়ে রাখতে কম প্রচেষ্টা করছে না ভারতও। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ‘সন্ত্রাসীদের’ একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করে ভারতের হামলায় পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির ফিরিস্তিও তুলে ধরেছে নয়াদিল্লি।

এদিকে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর আজ ভারত ও পাকিস্তানের শেয়ারবাজার বেশ চাঙা ছিল। ইকোনমিক টাইমস–এর খবর অনুযায়ী, দুপুরে ভারতের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্সে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও নিফটিতে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ উত্থান হয়। আজ সকালে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক কেএসই ১০০–তে সূচকের উত্থান হয় ৯ শতাংশের বেশি।

আরও পড়ুনক্ষয়ক্ষতি লড়াইয়ের অংশ: ভারতের বিমানবাহিনী১৫ ঘণ্টা আগে

পরিস্থিতি যখন উন্নতির দিকে, তখন রোববার কাশ্মীর সংকট সমাধানে সহায়তার আগ্রহও দেখান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কাশ্মীর সংকটকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বিষয় বলে মনে করে নয়াদিল্লি। তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপও নাকচ করে দিয়েছে দেশটি। তবে ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের নেতারা।

আজ সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিকে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় হাইকমিশনার শিল্পাক আম্বুলে বলেন, ‘কাশ্মীর একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়। এটি আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় নয়। কাশ্মীর নিয়ে বিশ্বের কোনো দেশের মধ্যস্থতা কাজ করবে না বলে আমি মনে করি।’

আরও পড়ুন‘উদ্বেগজনক’ গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন জেডি ভ্যান্স১১ মে ২০২৫আরও পড়ুনভারত না পাকিস্তান, লড়াইয়ে জিতল কে১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নয় দ ল ল ত র পর

এছাড়াও পড়ুন:

রঙিন হয়ে উঠেছে সাগরপাড়ের শহর

নির্মল নীল সমুদ্র আর রূপালি বালুকাবেলায় গড়া ফ্রান্সের কান শহরে আজ  পর্দা উঠছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন — কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮ আসরের। তারকাময় লালগালিচা, আন্তর্জাতিক সিনেমার ঝলক, আর নতুন প্রতিভা আবিষ্কারের প্রতীক্ষায় মুখর হয়ে উঠেছে  উৎসবের মূল প্রান্তর । শুধু গ্ল্যামার নয়, শিল্প ও সমাজে নানা বিধ বিষয় নিয়েও যেসব চলচ্চিত্র কথা বলে, তাদের জন্যও এই উৎসব হয়ে উঠেছে এক অনন্য মঞ্চ।

৭৮তম এই আসরটিও তার ব্যতিক্রম নয়- বরং প্রত্যাশার পাল্লা আরও ভারী, কারণ এবার উপস্থিত থাকছেন টম ক্রুজ, রবার্ট ডি নিরো, ওয়েস অ্যান্ডারসনের মতো আইকনিক মুখ, আর প্রতিযোগিতায় রয়েছে বিশ্বজুড়ে নির্বাচিত অসাধারণ ২২টি সিনেমা। কানে তাই  চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এই মে মাস যেন হয়ে উঠেছে এক রূপকথার মাস, যেখানে বাস্তব আর কল্পনার মাঝে চলাফেরা করে নিঃশব্দে পৃথিবী বদলে দেওয়া গল্পগুলো।

এই উৎসবের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে থাকছেন অভিনেতা লরাঁ লাফিত, যিনি ২০১৬ সালেও এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে ২২টি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আমেরিকান পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসনের "The Phoenician Scheme", রিচার্ড লিংকলেটারের "Nouvelle Vague", মিশরের তারিক সালেহর "Les Aigles de la République", এবং ফরাসি পরিচালক হাফসিয়া হারজি ও জুলিয়া দুকুরনোর চলচ্চিত্র।

উৎসবের উদ্বোধনী দিনে, ১৩ মে, চার্লি চ্যাপলিনের ১৯২৫ সালের ক্লাসিক "The Gold Rush" এর ৪কে রেস্টোরেশন সংস্করণ প্রদর্শিত হবে, যা এই চলচ্চিত্রের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করবে। এছাড়া, রবার্ট ডি নিরোকে তার চলচ্চিত্র জীবনের সম্মানে একটি সম্মানসূচক পালম দ'অর প্রদান করা হবে। ডি নিরো এর আগে "Taxi Driver" (১৯৭৬) এবং "Mission" (১৯৮৬) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য কান উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন।

উৎসবের বিচারক মণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে থাকছেন ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ, যিনি ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো কান উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন।

উৎসবে আরও প্রদর্শিত হবে টম ক্রুজের "Mission: Impossible – The Final Reckoning", স্পাইক লির "Highest 2 Lowest", এবং আমেলি বোনিনের "Partir un jour", যা উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া, স্কারলেট জোহানসন এবং ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট তাদের পরিচালিত চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।

এই বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসব বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে, যার মধ্যে রয়েছে গাজা ও ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত ডকুমেন্টারি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ