যুদ্ধবিরতির পর ভারত–পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রথম আলাপ
Published: 12th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে আলাপ হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ফোনে কথা বলেন দুই বাহিনীর অভিযান-সংক্রান্ত বিভাগের প্রধানেরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।
২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর সংঘাতে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। টানা চার দিন সংঘাতের পর শনিবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। এরপর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, সেদিন দুই বাহিনীর অভিযান-সংক্রান্ত বিভাগের প্রধানেরা যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হন। আজ আবার তাঁরা ফোনালাপ করবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
আজকের ফোনালাপে আলোচনার বিষয়ে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন-নিউজ ১৮ জানিয়েছে, মূলত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন দুই দেশের সামরিক নেতারা। তবে দুই দেশের নেওয়া পাল্টাপাল্টি অন্য পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করা হবে না বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপগুলো প্রত্যাহার করা না হলেও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সমঝোতা বড় একটি অর্জন। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর শনিবার রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কিছু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও রোববার রাতভর নিয়ন্ত্রণরেখা-সংলগ্ন মানুষ শান্তিতে ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।
এ ছাড়া আজ ভারতের ৩২টি বিমানবন্দরও খুলে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সময় সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। এর আগের শনিবারই নিজেদের বিমানবন্দরগুলো খুলে দেয় পাকিস্তান। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরের বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ৩৪ বছর বয়সী ধর্মেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, ‘শহরে আবার জীবন ফিরে আসতে দেখে আমি খুশি।’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এ ভূমিকা নিয়ে নয়াদিল্লি চুপ থাকলেও প্রথম থেকেই ওয়াশিংটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। আজও হোয়াইট হাউসে উপস্থিত সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন। এ জন্য তিনি গর্বিত।
যুদ্ধবিরতির জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন পক্ষ প্রথম তৎপরতা শুরু করেছিল, তা এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তবে আজ পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কখনোই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়নি। এ ছাড়া নয়াদিল্লির অনুরোধের ভিত্তিতেই সমঝোতার জন্য যোগাযোগ করেছিল ইসলামাবাদ।
ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানই ‘জয়ী’ হয়েছে—এমন বয়ানও দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের নেতাদের পক্ষ থেকে। সংবাদমাধ্যম দ্য ডন–এর খবর অনুযায়ী, গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, শুধু সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী নয়, কূটনীতি ও গণমাধ্যম মিলিয়ে পাঁচটি ক্ষেত্রে ভারতকে পরাজিত করেছে পাকিস্তান। ভবিষ্যতে হামলার আগে ভারত দ্বিতীয়বার বিবেচনা করবে।
আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: এর মানে আসলে কী১৪ ঘণ্টা আগেনিজেদের এগিয়ে রাখতে কম প্রচেষ্টা করছে না ভারতও। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ‘সন্ত্রাসীদের’ একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করে ভারতের হামলায় পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির ফিরিস্তিও তুলে ধরেছে নয়াদিল্লি।
এদিকে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর আজ ভারত ও পাকিস্তানের শেয়ারবাজার বেশ চাঙা ছিল। ইকোনমিক টাইমস–এর খবর অনুযায়ী, দুপুরে ভারতের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্সে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও নিফটিতে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ উত্থান হয়। আজ সকালে পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক কেএসই ১০০–তে সূচকের উত্থান হয় ৯ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুনক্ষয়ক্ষতি লড়াইয়ের অংশ: ভারতের বিমানবাহিনী১৫ ঘণ্টা আগেপরিস্থিতি যখন উন্নতির দিকে, তখন রোববার কাশ্মীর সংকট সমাধানে সহায়তার আগ্রহও দেখান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কাশ্মীর সংকটকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বিষয় বলে মনে করে নয়াদিল্লি। তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপও নাকচ করে দিয়েছে দেশটি। তবে ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের নেতারা।
আজ সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিকে সিঙ্গাপুরে ভারতীয় হাইকমিশনার শিল্পাক আম্বুলে বলেন, ‘কাশ্মীর একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়। এটি আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় নয়। কাশ্মীর নিয়ে বিশ্বের কোনো দেশের মধ্যস্থতা কাজ করবে না বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন‘উদ্বেগজনক’ গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন জেডি ভ্যান্স১১ মে ২০২৫আরও পড়ুনভারত না পাকিস্তান, লড়াইয়ে জিতল কে১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে
প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।
সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে