শেয়ারবাজারের চলমান সংকট নিরসনে বিদেশি পরামর্শক দিয়ে সংস্কার করাসহ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের পাঁচ নির্দেশনা ইতিবাচক। বিশেষত বহুজাতিক এবং বেসরকারি খাতের বড় এবং ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শেয়ারবাজারের উন্নতি হবে। তবে এগুলো মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এসব পদক্ষেপ এগিয়ে নেবে কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন মত পাওয়া গেছে। 
জানতে চাইলে আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

সাইফউদ্দিন সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্তের সবগুলোই মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ইস্যু। সরকারপ্রধান যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে অনেক আগে থেকে সুপারিশ করা হচ্ছে।  

দেশের অন্যতম ব্রোকারেজ হাউসের এই প্রধান নির্বাহী বলেন, আগে কোনো সরকারের আমলে শেয়ারবাজার তেমন গুরুত্ব পায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছেন, যা বেশ আশাব্যঞ্জক। তবে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর  বৈঠকটি হলে সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর হতো। তার পরও ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানো ও বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির বিষয়টি ইতিবাচক এবং এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল আছে। তিনি বলেন, সরকারপ্রধান যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন হবে বলে তারা আশা করেন। 
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আরেক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এসব সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো হবে। ২০০৭ সালের অন্তর্বর্তী সরকারও ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু  রাজনৈতিক সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।

এদিকে বিদেশিদের নিয়ে সংস্কার করার প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স আর কাজ করবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, কমিশন গঠিত টাস্কফোর্স এখনও বাতিল করেনি। এটি কাজ করছে। 
টাস্কফোর্সের সদস্য ড. আল-আমীন মনে করেন, বিদেশিদের দিয়ে সংস্কার  করার বিষয়টি হয়তো ‘অপশন’ রাখার মতো বিষয়। তাঁর মনে হয়, এর দরকার পড়বে না। তিনি সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, তা টাস্কফোর্সের ইতোমধ্যে দেওয়া সুপারিশে আছে। তিনি মনে করেন, টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো সরকার আমলে নিয়েছে।
টাস্কফোর্সের অপর এক সদস্য মাজেদুর রহমান মনে করেন, শেয়ারবাজার সংস্কারে এমন কিছু বিষয় আছে, যা খুবই উচ্চ পর্যায়ের পেশাদারদের দিয়ে করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হলে ভালো হয়। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারকে ঠিক করতে হলে বড় ধরনের ‘ঝাঁকুনি’ দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ব্রোকার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে বড় সংস্কার করতে হবে। এখন জবাবদিহির সংকট রয়েছে। দায় এবং জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।

বাজার পরিস্থিতি
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পরদিন গতকাল সোমবার ডিএসইতে ১৫৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫৬টির এবং অপরিবর্তিত ৪৬টির। তবে তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টির দর বেড়েছে। প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪৯২১ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক এবং বীমা খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি মূল ভূমিকা রেখেছে। তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটির দর কমার  বিপরীতে ২৭টির দর বেড়েছে। ব্যাংক এবং বীমা খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধির বিপরীতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র খাতের বেশির ভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। এদিকে গতকালের তুলনায় লেনদেন ২ কোটি টাকা কমে ৩৬৪ কোটি টাকায় নেমেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র পর য য় র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

লিবরা ইনফিউশনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি

পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এরই ধরাবাহিকতায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে সাতটি নির্দেশনা সাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি আরএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

হস্তান্তর হবে ঢাকা ব্যাংকের প্রয়াত উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার 

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ- পরিচালক মো. বনি ইয়ামিন খান, সহকারী পরিচালক মো. সাকিল আহমেদ ও ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ খান।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িক অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করা হবে। এছাড়া সঠিক নথির মাধ্যমে কমিশনের বিধান অনুসারে আয় ও ব্যয় নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের সম্পদ, দায় এবং নগদ অর্থের পরিমাণের সত্য যাচাই করা হবে। এছাড়া আর্থিক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান পালন হয়েছে কিনা তা যাচাই করবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ঋণের দায়বদ্ধতা যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে লিবরা ইনফিউশনের ১০টি বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তাদের ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

কোম্পানিটির ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পদ, দায়, ইক্যুইটি, মুনাফা এবং নগদ অর্থের পরিমাণের সত্য এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করেছে কি-না তা যাচাই করা। এছাড়া আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান পালন হয়েছে কিনা তা যাচাই করবে তদন্ত কমিটি।

কোম্পানিটির বিক্রয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত নগদ, বকেয়ার পরিমাণ, ব্যয়, ইনভেন্টরি (মজুদ পণ্য), কাঁচামাল ক্রয় এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাই করা।

কোম্পানিটির ইউনিট-২-এ স্থায়ী সম্পদের কোনো অবচয় হয়েছে কি-না, তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা। ইউনিট-২ এর ভবন নির্মাণ ও পুনর্মূল্যায়নের জন্য ডেফার্ড কর দেখানো হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করা।  

সেই সঙ্গে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের কাছে বকেয়া ঋণের দায়বদ্ধতা ও অবস্থান যাচাই করা। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণের দায়বদ্ধতার তথ্য যাচাই করা। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি লিবরা ইনফিউশন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বোনাস ও ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ রয়েছে। এরপর থেকে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিগত ৪ বছর ধরে কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো তথ্য নেই।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি

লিবরা ইনফিউশন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২২ লাখ ৫২ হাজার ৮৮০টি। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৪.৪২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪.২৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬১.৩৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৭৯৭.১০ টাকায়।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বহুজাতিক কোম্পানি আনতে করছাড় যথেষ্ট নয়
  • সুবিধা কম, তাই তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ নেই বহুজাতিক কোম্পানির
  • পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট রেখে যেতে চাই: বিএসইসি চেয়ারম্যান
  • লিবরা ইনফিউশনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি