বড় ও ভালো কোম্পানি এলে শেয়ারবাজারের উন্নতি হবে
Published: 12th, May 2025 GMT
শেয়ারবাজারের চলমান সংকট নিরসনে বিদেশি পরামর্শক দিয়ে সংস্কার করাসহ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের পাঁচ নির্দেশনা ইতিবাচক। বিশেষত বহুজাতিক এবং বেসরকারি খাতের বড় এবং ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শেয়ারবাজারের উন্নতি হবে। তবে এগুলো মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এসব পদক্ষেপ এগিয়ে নেবে কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন মত পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
দেশের অন্যতম ব্রোকারেজ হাউসের এই প্রধান নির্বাহী বলেন, আগে কোনো সরকারের আমলে শেয়ারবাজার তেমন গুরুত্ব পায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছেন, যা বেশ আশাব্যঞ্জক। তবে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর বৈঠকটি হলে সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর হতো। তার পরও ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানো ও বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির বিষয়টি ইতিবাচক এবং এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল আছে। তিনি বলেন, সরকারপ্রধান যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন হবে বলে তারা আশা করেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আরেক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এসব সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো হবে। ২০০৭ সালের অন্তর্বর্তী সরকারও ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।
এদিকে বিদেশিদের নিয়ে সংস্কার করার প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স আর কাজ করবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, কমিশন গঠিত টাস্কফোর্স এখনও বাতিল করেনি। এটি কাজ করছে।
টাস্কফোর্সের সদস্য ড. আল-আমীন মনে করেন, বিদেশিদের দিয়ে সংস্কার করার বিষয়টি হয়তো ‘অপশন’ রাখার মতো বিষয়। তাঁর মনে হয়, এর দরকার পড়বে না। তিনি সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, তা টাস্কফোর্সের ইতোমধ্যে দেওয়া সুপারিশে আছে। তিনি মনে করেন, টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো সরকার আমলে নিয়েছে।
টাস্কফোর্সের অপর এক সদস্য মাজেদুর রহমান মনে করেন, শেয়ারবাজার সংস্কারে এমন কিছু বিষয় আছে, যা খুবই উচ্চ পর্যায়ের পেশাদারদের দিয়ে করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হলে ভালো হয়। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারকে ঠিক করতে হলে বড় ধরনের ‘ঝাঁকুনি’ দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ব্রোকার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে বড় সংস্কার করতে হবে। এখন জবাবদিহির সংকট রয়েছে। দায় এবং জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।
বাজার পরিস্থিতি
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পরদিন গতকাল সোমবার ডিএসইতে ১৫৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫৬টির এবং অপরিবর্তিত ৪৬টির। তবে তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টির দর বেড়েছে। প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪৯২১ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক এবং বীমা খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি মূল ভূমিকা রেখেছে। তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটির দর কমার বিপরীতে ২৭টির দর বেড়েছে। ব্যাংক এবং বীমা খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধির বিপরীতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন এবং বস্ত্র খাতের বেশির ভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। এদিকে গতকালের তুলনায় লেনদেন ২ কোটি টাকা কমে ৩৬৪ কোটি টাকায় নেমেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র পর য য় র সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
তামহার মালিকদের সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ, তদন্তের অনুরোধ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-০৮১) পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের নামে সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ এবং এ কাজে ওবায়দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির যোগসাজস তদন্ত করে খতিয়ে দেখার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গুলশানের জমি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে বিএসইসির পক্ষ থেকে দুদককে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দুদকে পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজার চাঙা করতে বাজেটে থাকছে একগুচ্ছ প্রণোদনা
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার ৫ নির্দেশনা
দুদকে পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিনিয়োগকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করে। পরবর্তীতে, মতিঝিল পুলিশ স্টেশন ডায়েরি দুদকে প্রেরণ করে। এ প্রেক্ষিতে, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি জি আর মামলা করে (মামলা নম্বর-৫৩/২০২৩)।
সম্প্রতি, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের ২৭ মার্চ চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে অবহিত করে, এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রির অর্থ মালিকপক্ষ আত্মসাৎ করেছেন এবং এ অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে ওবায়দুর রহমান সহায়তা করেছেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন, যা চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা উক্ত সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করবে বলে তাদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তিপত্র কমিশনে দাখিল করা হয়েছে।এমতাবস্থায়, উপযুক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরতের নিমিত্ত এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি বিক্রির অর্থ মালিকপক্ষের আত্মসাৎ ও ওবায়দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির সহায়তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তামহা সিকিউরিটিজের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের নামে সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর) পুনরায় অবরুদ্ধ করতে দুদককে অনুরোধ করেছিল বিএসইসি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে বিএসইসি। তাই বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা ফেরত পেতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করা এবং এ কাজে সহযোগিতাকারীর বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখার জন্য দুদককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০২১ সালে তামহা সিকিউরিটিজ অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে বিনিয়োগকারীর ৮৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ব্রোকারেজ হাউজটি দুইটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।এর মধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও ভুয়া বিবরণী ও পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট প্রদান করা হতো। হাউজটিতে গ্রহকদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও শেয়ারের বাজার মূল্যের ঘাটতি ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।
ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএসইসি ওই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এদিকে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) স্থগিত হওয়া ব্রোকার হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ব্রোকারেজ হাউজটির একটি সফটওয়্যারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব রাখা হতো, যা সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। এ ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন-তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, পরিচালক জাহানারা পারভীন ও ড. শাহনাজ বেগম, চারজন অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (আব্দুর রহমান তালাল, সাঈদ চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান), অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. গোলাম রসুল, শেরাটন শাখার ইনচার্জ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ এএম আলমগীর কবীর, শেরাটন শাখার ম্যানেজার ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ওয়ারিছ উদ্দিন, অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফায়েজুর রহমান, সেটলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ জি এম আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক মো. মামুন হোসেন ও অফিস সহকারী মো. হাসান।
তামহা সিকিউরিটিজ ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিবন্ধিত হয়।
ঢাকা/এনটি/এসবি