পদ্মার শান্ত জলে ভেসে আসা বাতাস আর রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিমাখা সেই কুঠিবাড়ী। যার ঘ্রাণে আজও কুষ্টিয়ার আকাশ-বাতাস মুগ্ধ হয়ে থাকে। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে অবস্থিত এ ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ী শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির জীবন্ত ইতিহাস। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানেই কাটিয়েছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, রচনা করেছেন ‘গীতাঞ্জলি’র অমূল্য সব কবিতা, যা বিশ্বসাহিত্যে এনে দিয়েছে প্রথম নোবেল পুরস্কার।
বর্তমানে এই কুঠিবাড়ী একটি জাদুঘর। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, আসবাব, ছবি ও সাহিত্যকর্ম। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ (রবীন্দ্রজয়ন্তী), বিজয় দিবসসহ নানা উৎসবে ভরে ওঠে কুঠিবাড়ী প্রাঙ্গণ। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে পুরো অঙ্গন। পরিবারসহ আসা পর্যটক থেকে শুরু করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাহিত্যপ্রেমী, গবেষক, ইউটিউবার বা ব্লগার– সবাই যেন এ কুঠিবাড়ীতে এসে ফিরে পান এক অমলিন অভিজ্ঞতা।
একজন তরুণ দর্শনার্থীর ভাষায়, এখানে এলে রবীন্দ্রনাথ যেন মনের খুব কাছে চলে আসেন। তাঁর সাহিত্য শুধু পড়া নয়, যেন অনুভবেরও ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
কুঠিবাড়ীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক কর্মচঞ্চল পরিবেশ। স্থানীয় দোকানে বিক্রি হচ্ছে পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, রবীন্দ্রনাথের ছবি ও উক্তিসংবলিত টি-শার্ট, বই ও স্মারক। গড়ে উঠেছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ, যেখানে দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নেন, গল্পে মেতে ওঠেন। কুষ্টিয়ার বিখ্যাত কুলফি মালাই ও তিলের খাজা অন্যতম আকর্ষণ।
রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী ছাড়াও কুষ্টিয়ায় রয়েছে আরও অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান। ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত বাউলসাধক লালন শাহের মাজার ও আখড়া প্রতিবছর লালন স্মরণোৎসবের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিবিজড়িত লাহিনীপাড়া ও কুমারখালীর কাঙাল হরিনাথ জাদুঘরও গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কুমারখালীর সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র– সবকিছু মিলিয়ে কুষ্টিয়া হয়ে উঠেছে এক অনন্য সংস্কৃতির ভূখণ্ড।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ীকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আবহ একটি জেলার পরিচয় বদলে দিয়েছে। সাহিত্য, সংগীত, ইতিহাস আর মানুষের জীবনের গল্প মিলে এখানে প্রতিনিয়ত রচিত হচ্ছে নতুন কাব্য, নতুন কুসুমিত দিন।
আপনিও চাইলে ঘুরে যেতে পারেন এই রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী। শহরে আবাসিক হোটেল ও খাবারের হোটেলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। শহর থেকে কুঠিবাড়ী যেতে সময় লাগে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট। v
সাধারণ সম্পাদক সুহৃদ সমাবেশ, কুষ্টিয়া
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ রব ন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
হজযাত্রীর করণীয়
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।
এ বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম জানান, এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ, হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করা দরকার। হজ পালনের প্রশিক্ষণও নিতে হবে। হজ প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয় থেকে জানা যাবে। হজযাত্রীরা মাস্ক পরবেন। ৪০ দিনের ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র সঙ্গে রাখবেন। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বইপুস্তক পড়ে বা পরিচিত লোকজনের কাছ থেকেও হজবিষয়ক তথ্য জানতে পারেন। আর হজের প্রয়োজনীয় তথ্য www.hajj.gov.bd ঠিকানার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
হজে যাচ্ছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন, ‘হে আল্লাহ! আমার হজকে সহজ করো, কবুল করো’—দেখবেন, আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হজের দীর্ঘ সফরে ধৈর্য হারাবেন না। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখবেন, তাহলে অল্পতেই বিচলিত হবেন না।
আরও পড়ুনকাবার দরজায় কী লেখা আছে০৭ মে ২০২৫হজে যাওয়ার আগে
পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট সংগ্রহ ও তারিখ নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। নিয়ম মেনে ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য টিকা দিয়ে নিন। হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন। চাইলে প্রথম আলো কার্যালয় থেকে ‘হজ গাইড’ সংগ্রহ করতে পারেন।
www.prothomalo.com/widgets/hajj-guide/hajj_guide.pdf ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকেও নামিয়ে নিতে পারেন। যাঁরা পড়তে পারেন না, তাঁরা হাজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। হজের কোনো বিষয়ে ভিন্নতা দেখলে কথা–কাটাকাটি বা খারাপ ব্যবহার করবেন না। আপনি যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন, তাঁর সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন। তবে সে অনুযায়ী আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করবেন না।
হজের অবসরে নিয়মিত অনলাইনে প্রথম আলো ‘ইসলাম’ (www.prothomalo.com/religion/islam) বিভাগে নজর রাখতে পারেন। তাহলে হজের যাবতীয় বিষয় আপনার সহজ হয়ে যাবে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। যেমন: ১. পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ। ২. পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট। প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ এক টুকরা কাপড়। ইহরামের কাপড় সাদা এবং সুতি হলে ভালো হয়। নারীদের জন্য সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড় ৩. নরম ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল। ৪. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট)। ৫. গামছা, তোয়ালে। ৬. লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি (আপনি যে পোশাক পরবেন)। ৭. সাবান, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ বা মিসওয়াক। ৮. নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা। ৯. থালা, বাটি, গ্লাস। ১০. হজবিষয়ক বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক। ১১. কাগজ-কলম। ১২. চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা। ১৩. বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য)। ১৪. নারীদের জন্য বোরকা, ১৫. যত দিন বিদেশে থাকবেন, সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ নেবেন। ১৬. মুঠোফোন (সৌদি আরবে ব্যবহার করা যায়, এমন সিম কিনে নিতে হবে)। ১৭. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা স্যুটকেস (তালা-চাবিসহ)। বাংলাদেশের পতাকাখচিত ট্রলি ব্যাগ (৬৫ x ৪৫ x ২৫ সেন্টিমিটার) ও হাতব্যাগ নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর লিখতে হবে। এর বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত পবিত্র মক্কা মদীনার পথে প্রান্তরে বই পড়তে পারেন।
● হজের সফরে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে দুই লাগেজে (বড় লাগেজ ও হাতব্যাগ) ভাগ করে নিতে হবে।
● ধরা যাক, ৪০ দিনের জন্য ১০ সেট কাপড় নেবেন। এর থেকে চার সেট হাতব্যাগে ও বাকি ৬ সেট বড় লাগেজে নিতে হবে। একই সঙ্গে ৪০ দিনের ওষুধগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। ‘রোড টু মক্কার’ কারণে কারও কারও
ব্যাগ হারিয়ে যায়। তাই এই ব্যবস্থা।
● প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর নম্বর।
● মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন, তাই ভাষাগত সমস্যা তেমন হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কেনা ভালো।
আরও পড়ুনহজযাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে প্রথম আলোর হজ গাইড১০ মে ২০২৫জিনিসপত্রের বিধিনিষেধ
বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে
ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা অনুযায়ী বিমানে কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪৬ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নেওয়া যাবে না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, যেমন রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যাবে না।