গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো এক সাংবাদিক নিহত
Published: 13th, May 2025 GMT
ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের বার্ন ইউনিটে দখলদার বাহিনীর বোমা হামলায় হাসান এসলাইহ নামে আরো এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস সাংবাদিক হাসান এসলাইহের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং বলেছে যে, তারা ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক ‘ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু, হত্যা এবং গুপ্তহত্যার’ তীব্র নিন্দা জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসলাইহকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘হত্যা’ করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় সাংবাদিকদের মধ্যে নিহতের মোট সংখ্যা ২১৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় মার্কিন–ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে হামাস
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০০ ছাড়াল
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আরো বলেছে, “আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, মার্কিন প্রশাসন এবং গণহত্যার অপরাধে সহায়তাকারী দেশগুলো, যেমন যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সকে এই জঘন্য, নৃশংস অপরাধের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী করছি।”
এদিকে নাসের হাসপাতালে হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা নাসের হাসপাতালের এলাকায় ‘একটি লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ চালিয়েছে’। ইসরায়েলের দাবি, সেখানে হামাস ‘একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কমপ্লেক্স পরিচালনা করছিল’।
তবে দাবির সমর্থনে তারা কোনো প্রমাণ দেয়নি। গত মাসে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের আশ্রয় নেওয়া একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় এসলাইহ আহত হন। সে সময় কমপক্ষে দুজন ওই হামলায় নিহত হয়।
অব্যাহত হামলার পাশাপাশি প্রায় ৭১ দিন ধরে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ জারি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের কারণে গাজায় কোনো খাবার, ওষুধ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ জন আহত হয়েছেন। তবে সরকারি মিডিয়া অফিস নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে। কারণ নিখোঁজ হওয়া হাজার হাজার মানুষকে এখন নিহতের তালিকায় রাখা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘গুপ্ত সংগঠনকে’ সুযোগ করে দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সব প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকৃতপক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো কিছু গুপ্ত সংগঠনকে দখলদারি ও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসুসহ অনেকে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছায়েদুল হক নিশান।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, হলগুলোতে দখলদারি বন্ধের অজুহাতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করবে। প্রশাসনের মদদপুষ্ট সংগঠনকে ক্যাম্পাস এবং হলে একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ করে দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এ ধরনের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মূল আশঙ্কা ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে নতুন করে গণরুম-নির্যাতন চালুর সুযোগ তৈরি হবে কি না, উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কিন্তু এই সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সংস্কার, আবাসন সংকট নিরসন, প্রশাসনের দলীয় আনুগত্য বন্ধসহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গিয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো জনতুষ্টিবাদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
গণ–অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো চর দখলের মতো করে রাজনৈতিক দলগুলো দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘এ ক্ষেত্রে নিয়ম ও যোগ্যতা মানদণ্ড হিসেবে কাজ করেনি। প্রশাসনিক এই কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের নয়, নির্দিষ্ট দল ও সংগঠনের স্বার্থ দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একই ভূমিকা আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতা দৃশ্যমান।’
অতীতের মতো ছাত্রশিবির এখনো গোপন রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, ‘এতে ছাত্রশিবিরকে সংগঠনগতভাবে তাদের নেতা-কর্মীদের অপকর্মের দায় নিতে হয় না। এমনকি যারা অতীতে ছাত্রলীগের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিল, তাদেরও প্রকাশ্যে আনতে হয় না। তথাকথিত সামাজিক কাজ এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মুখোশে তারা অনায়াসে নিজেদের সাংগঠনিক কাজ চালায় এবং বিরোধী মতকে দমন করতে পারে।’
আসন সংকটকে কেন্দ্র করে হলগুলোতে দখলের অপরাজনীতি চলে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এই সংকট দূর করে এবং প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আসন বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ বা সীমিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আরেকটি ফ্যাসিস্ট প্রক্রিয়া, সংস্কৃতি ও শক্তির উদ্ভব ঘটাবে বলে সতর্ক করেছেন গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, ‘ছাত্ররাজনীতি না থাকলে ভবিষ্যতে ফ্যাসিস্ট কোনো শক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো শক্তি আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাই শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, বরং সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই জরুরি।’