চীন ও ভারতের মধ্যে কোনো সশস্ত্র সংঘাত না হলেও, একধরনের ঠান্ডা লড়াই যে অব্যাহত রয়েছে, তা আবারও বোঝা গেল আজ বুধবার। আজ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশের নতুন করে চীনা নাম রাখার বেইজিংয়ের বিরোধিতা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। চীনের পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশে অবস্থিত তিব্বতের নিচের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকে চীন ইতিহাসগতভাবে তাদের প্রদেশ বলে মনে করে। সেই কারণে তারা মাঝেমধ্যেই এককভাবে অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরণ নিজেদের মতো করে। সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে আবার, যার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত।

এক প্রশ্নের উত্তরে আজ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি যে চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের নামকরণের নিরর্থক এবং অযৌক্তিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নীতিগত সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে আমরা এ ধরনের চেষ্টা সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। হঠাৎ নামকরণের মধ্য দিয়ে এই অনস্বীকার্য বাস্তবতাকে পরিবর্তন করা যাবে না—অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।’

চীন সম্প্রতি ভারতের সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছু জায়গার নাম এককভাবে প্রকাশ করেছে। যে অঞ্চলগুলোর নামকরণ চীন করেছে, তার অধিকাংশই ভারতের মধ্যে। দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে চীন কিছু বছর ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তা সত্ত্বেও চীনের বেসামরিক নাগরিক–বিষয়ক মন্ত্রণালয় অরুণাচল প্রদেশের স্থানগুলোর সর্বশেষ নাম প্রকাশ করে বলেছে, অরুণাচল প্রদেশ বা তাদের ভাষায় ‘জাংনান’ তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অংশ। মোট ২৭টি স্থানের নাম এবারে চীন তাদের মতো করে পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫টি পাহাড়, ৫টি আবাসিক এলাকা, ৪টি পাহাড়ের গিরিপথ, ২টি নদী ও ১টি হ্রদ।

প্রতিটি স্থানের নাম চীনা অক্ষর, তিব্বতি ও পিনয়িন (মান্দারিন চীনার রোমান হরফে লেখা বানান) ভাষায় প্রকাশ করার পাশাপাশি মানচিত্রে স্থানগুলোর অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের স্থানাঙ্ক এবং একটি উচ্চ রেজল্যুশনের মানচিত্রসহ দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে অরুণাচলের নাম পরিবর্তন করছে চীন

ভারতের অরুণাচলকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করার চীনের এই চেষ্টা আজকের নয়। দীর্ঘ সময় ধরেই তারা এটা করছে এবং বস্তুত প্রতিবছরই করে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে চীন অরুণাচল প্রদেশের ৩০টি জায়গার নাম পরিবর্তন করে তাদের ভাষায় রেখে দিয়েছিল।

২০২৪ সালের এপ্রিলে চীন তার নিজস্ব ভাষায় অরুণাচল প্রদেশের ৩০টি স্থানের নাম পরিবর্তন করে। এর আগে ২০১৭ সালে অরুণাচল প্রদেশে ৬টি স্থানের নাম পরিবর্তন করে। এরপর ২০২১ সালে ১৫টি এবং ২০২৩ সালে ১১টি স্থানের নাম পরিবর্তন করে চীন। বর্তমানে চীন আবার অরুণাচল প্রদেশের অনেক জায়গার নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

চীনের এই নামকরণের প্রক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারতও চীনের একাধিক জায়গার নামকরণ সংস্কৃত ভাষায় করেছে বা করছে। সেনাবাহিনীর যুদ্ধতথ্য বিভাগ কর্তৃক নাম পরিবর্তনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এর জন্য ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গে ১৭৮৪ সালে স্থাপিত এশিয়াটিক সোসাইটিকে তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গার সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক নাম নিয়ে খুঁজে বের করার তাগাদা দিয়েছে বলেও ভারতের প্রচার মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ন মকরণ

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
  • পাড়ার মঞ্চ থেকে বড় পর্দায় 
  • বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%