জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা ছাত্র ইউনিয়নের
Published: 14th, May 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।
বুধবার (১৪ মে) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ইমন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়েছে।
পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মত আন্দোলন দমনে ‘সিলেকটিভ’ আচরণ অন্তবর্তী সরকারের ফ্যাসিস্ট মনোভাবের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতা, বাজেটে বৃদ্ধি এবং সব প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়ার তিন দফা দাবি নিয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি।
আরো পড়ুন:
বাকৃবির ভাসানী হলে পুনরায় ‘গেস্টরুম’ চালুর অভিযোগ
গবি ক্যান্টিনে ফের দুরবস্থা, স্থায়ী সমাধান দাবি
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে জবি শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মিছিল কাকরাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিপেটা করে। এছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে এবং জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে পুলিশ ‘হাসিনা স্টাইলে’ আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছে। পুলিশের এ হামলায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তামজিদ হায়দার চঞ্চল ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার পুলিশের এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তবর্তী সরকার আওয়ামী লীগের মতই আন্দোলন দমনে সিলেকটিভ আচরণ করছে। সরকারের পছন্দে এবং প্রেস্ক্রিপশনে সংঘটিত আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের ‘স্পেশাল ট্রিটমেন্ট’ আর এর বাইরে শ্রমিক, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের অবৈধ বল প্রয়োগের নমুনা আমরা দেখছি। এর মধ্য দিয়ে সরকার তার দলনিরপেক্ষ ভূমিকা হারিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ন্যায় আন্দোলনে পুলিশের হামলা প্রমাণ করে, ফ্যাসিস্টের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা পুরোপুরি বলবৎ রয়ে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরও নাগরিকদের আন্দোলন দমন আওয়ামী কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। পুলিশ দিয়ে জনগণকে দমন করে যে গদি রক্ষা করা যায় না, এর প্রমাণ শেখ হাসিনার সরকার।
নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং জনগণের উপর পুলিশের অবৈধ বল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় ও যৌক্তিক তিন দফা দাবি অবিলম্বে পূরণ করতে হবে।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ স্বামীকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাওয়ান, দেন আঙুর ফলও, এরপরে করেন হত্যা
দেড় মাস আগে পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবীরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী সালমা বেগম। হত্যার পরিকল্পনায় তিনি ছাড়াও তাঁর আত্মীয় রাজীব হোসেন ও মরিয়ম বেগম অংশ নেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, দেড় মাস আগে কেনা হয় একটি দা ও রশি। দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে তিনজন খুনি ঠিক করেন সালমা বেগম। সেই তিনজন হলেন ফজলে রাব্বি শুভ (২৩), রাফি খান (১৮) ও পলি বেগম (৩৫)।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সালমা বেগম যাত্রাবাড়ীর একটি ওষুধের দোকান থেকে ঘুমের বড়ি কিনে আনেন। গত ২৭ এপ্রিল সেটি গুঁড়ো করে ভাতের সঙ্গে মেশান। অফিস থেকে ফেরার পর হুমায়ুন কবীরকে (৪৫) ঘুমের ওষুধ মেশানো ভাত খাওয়ান। এরপর আঙুর ফল খাওয়ান। পরে ঘুমে অচেতন হলে ভাড়াটে তিন খুনির সহযোগিতায় পুলিশ সদস্য স্বামী হুমায়ুনকে খুন করেন সালমা বেগম (৩৫)।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দেওয়া সালমা বেগমসহ পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে পুলিশ সদস্য হুমায়ুনকে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম। রাজীব হোসেন নামের একজনের সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে হুমায়ুনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর মতবিরোধ হয়। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
গত ২৭ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে ভাড়া বাসায় খুন হন পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবীর। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় নিহত পুলিশ সদস্য হুমায়ুনের ভাই খোকন হাওলাদার অভিযোগ করেন, রাজীব হোসেন নামের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের জের ধরে হুমায়ুনকে হত্যা করেন সালমা বেগম।
স্বীকারোক্তিতে সালমা বেগম বলেছেন, ১৫ বছর আগে হুমায়ুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁদের দুই সন্তান হয়। তাঁর স্বামীর আচরণ খারাপ ছিল। এ জন্য কয়েক মাস আগে স্বামীকে একজন ফকিরকে দেখান, যাতে তাঁর স্বামীর আচরণ ভালো হয়। এ জন্য ১০ হাজার টাকাও দেন ফকিরকে। এই টাকাটা তাঁকে দিয়েছিলেন তাঁর আত্মীয় রাজীব হোসেন (রাজীব হচ্ছেন নিহত হুমায়ুন কবীরের ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর ভাই)। স্বামীকে ফকির দেখানোর পরেও তাঁর আচরণ ভালো হয়নি। স্বামীর নির্যাতন আগের মতোই অব্যাহত থাকে।
জবানবন্দিতে সালমা দাবি করেন, যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জের যে বাসায় তাঁরা ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার চতুর্থ তলায় থাকেন তাঁর আত্মীয় মরিয়ম বেগম। স্বামীর অত্যাচারের বিষয়টি তিনি মরিয়মকে বলেন। পরে অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য পুলিশ কনস্টেবল স্বামী হুমায়ুনকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন সালমা বেগম। দেড় মাস আগে মরিয়মের বাসায় এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে রাজীবও উপস্থিত ছিলেন।
সামলার জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী, স্বামীকে হত্যার জন্য তিনি বাজার থেকে একটি দা কিনে আনেন। পরে যাত্রাবাড়ীর একটি ফার্মেসি থেকে তিনটি ঘুমের বড়ি কিনে আনেন। ঘুমের বড়ি কিনে আনার পরামর্শ দেন সালমার আত্মীয় মরিয়ম। ঘুমের বড়ি কিনে আনার পর সেই বড়ি তিনি দেন মরিয়মকে। মরিয়ম তিনটি ঘুমের বড়ি গুঁড়ো করে পত্রিকায় মুড়ে তাঁকে দেন। সেদিন (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার সময় হুমায়ুন দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফেরেন। পরে হাতমুখ ধুয়ে তিনি খেতে বসেন। তাঁকে ভাত খেতে দেন সালমা বেগম। সেই ভাতে তিনি আগেই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেখেছিলেন। ভাত খাওয়া শেষ করার পর তিনি হুমায়ুনকে বেশ কয়েকটি আঙুর খেতে দেন। আঙুর খাওয়ার পরপরই আবোলতাবোল বকতে থাকেন হুমায়ুন। পরে তিনি খাটে ঘুমিয়ে পড়েন।
সালমা বেগমসহ গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তির তথ্য অনুযায়ী, ভাড়াটে খুনি ফজলে রাব্বি, রাফি খান ও পলি বেগম বাসার চারতলায় মরিয়মের বাসায় অবস্থান নেন। রাত ১১টার সময় পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন ঘুমিয়ে পড়লে সালমা বেগম চারতলায় যান মরিয়মের বাসায়। তিনি জানান, তাঁর স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছে। পরে তিনি আবার নিজের কক্ষে আসেন। রাত যখন আড়াইটা বাজে, তখন ঘুমে অচেতন হুমায়ুন কবির। চারতলার বাসা থেকে ভাড়াটে তিন খুনি তখন হুমায়ুনের বাসায় আসেন। পাশের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল হুমায়ুনের দুই সন্তান।
বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পলি বেগম ও মরিয়ম। হুমায়ুন যে কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানে ছিলেন সালমা, ফজলে রাব্বি ও রাফি খান। সালমা গামছা দিয়ে তাঁর স্বামীর হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। ফজলে রাব্বি ও রাফি দুই হাতে গ্লাভস পরে নেন। পরে ফজলে রাব্বি ও রাফি হুমায়ুনের গলায় রশি দিয়ে দুজন টান দেন। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে হুমায়ুন মারা যান। পরে ভাড়াটে খুনি রাব্বি ও রাফি হুমায়ুনের মরদেহ তিনতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। কিন্তু লোকজন চলে আসায় হুমায়ুনের মরদেহ আর নিয়ে যেতে পারেননি ভাড়াটে খুনিরা। খবর পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানা–পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে সালমা, মরিয়মসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।
সালমা বেগম জবানবন্দিতে বলেন, স্বামীকে খুন করার পর তিনি ফজলে রাব্বি ও রাফিকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তাঁদের দেওয়ার কথা ছিল দুই লাখ টাকা।
আসামি ফজলে রাব্বি শুভ (২৩), রাফি খান (১৮)