ফতুল্লায় স্বামীর পরকীয়া সহ নির্যাতন সহ্য করতে না পেড়ে স্বামীর লিঙ্গ কেটে দিয়েছে স্ত্রী। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্বামীর লিঙ্গ কেটে স্বাভাবিক ভাবে বাসায় অবস্থান করছে গার্মেন্টস শ্রমিক স্ত্রী। 

মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে ফতুল্লার মুসলিমনগরস্থ আমেনা মার্কেট এলাকায় এঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় মানিককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহত স্বামী মানিক মিয়া জামালপুরের হাসেম ফকিরের ছেলে। সে স্ত্রী রোজিনাকে নিয়ে ফতুল্লার মুসলিমনগর নয়াবাজার আমেনা মার্কেট সংলগ্ন এলাকার আব্দুল্লাহর বাড়িতে  ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। 

বাড়ির মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিক ও রোজিনা নয়াবাজার আমেনা মার্কেট সংলগ্ন এলাকার আব্দুল্লাহর ভাড়াটিয়া বাসায় এক মাস হয় আসে। তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রতিনিয়ত জগড়া হতো।

মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী রোজিনা তার স্বামীর লিঙ্গ কেটে ফেলে দেয়ার খবরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে য়াওয়া হয়। তবে স্ত্রী রোজিনা স্বাভাবিক ভাবে তার ভাড়াটিয়া বাসায় রয়েছে। কেউ তাকে কিছু বলে নাই এবং থানা পুলিশকে অবগত করা হয়নি। 

এ বিষয়ে রোজিনার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সে বিসিক শিল্পনগরীর একটি গার্মেন্টে চাকরি করে। গত ২ বছর আগে ভাল বাসার সম্পর্ক করে মানিককে বিয়ে করে। বিয়ে করার জানতে পারে সে বিভিন্ন নারীদের সাথে অবৈধ ভাবে সম্পর্ক করে। এমনকি কোন কাজ কর্ম করে না।

তার পরও তাকে অনেক ভাল বাসার কারণে নিজের কাজ করে তার পছন্দের জামা কাপড় কিনে দেই এবং তার পছন্দের খাবার তৈরি করে দেই। কিন্তু আমার সামনে ঘরে বসে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলে।

এমনকি একেক দিন একেক মহিলার বাসায় গিয়ে রাত্রি যাপন করে। আমাকে ফেলে অনেক মহিলার সাথে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস করে। এমন ঘটনা জানতে পেড়ে তাকে জিজ্ঞেস করতে গেলে আমার উপর চালায় নির্যাতন। 

তিনি আরো বলেন, ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬৩ জেলার নারীদের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাকে এতো ভাল বাসার পরও যেহেতু আমাকে রেখে তার জিনিস টা এদিক সেদিক ব্যবহার করে যার কারনে জিনিস টাই কেটে দিলাম। যাতে জিনিস অন্য জায়গায় না যায়। তার জিনিস টা কেটে দিয়েছি, তার পরও তার সাথে আমি সংসার করবো। 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

উপহার দেওয়া সম্পর্কে ইসলাম

উপহার দেওয়া এবং গ্রহণ করা ইসলামে অত্যন্ত প্রশংসিত এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহের অংশ। এই নিবন্ধে আমরা ইসলামে উপহার দেওয়ার নীতি, এর তাৎপর্য এবং প্রয়োগের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

 কোরআনে উপহার দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি

কোরআনে উপহারকে সরাসরি ‘হাদিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের জীবনের সবকিছু—সম্পদ, পরিবার, ইমান—আল্লাহর উপহার। এই উপহারগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ কিছু চান না, তবে তাঁর আদেশ ও নিষেধ পালন আমাদের জন্য আরেকটি উপহার, কারণ এগুলো আমাদের জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।

নবীজি উপহার গ্রহণ করতেন এবং তার বিনিময়ে কিছু দিতেন।সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৫৩৬

কোরআনে বিশেষ করে নবীদের জন্য দেওয়া ‘জ্ঞানের উপহার’ (ইলম) এবং ধার্মিকদের জন্য জান্নাতের নিয়ামতের কথা উল্লেখ আছে। কোরআনে আটটি স্থানে নবী বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের জ্ঞান ‘আল্লাহ–প্রদত্ত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৪, সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯)

এ ছাড়া জান্নাতের পুরস্কারগুলোকে ‘নিয়ামত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা সফফাত, আয়াত: ৪০-৪৮)

আরও পড়ুনবিবাহে মহর, যৌতুক ও উপহার০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮হাদিসে উপহার দেওয়ার বিধান

রাসুল (সা.) উপহার গ্রহণ করতেন এবং এর বিনিময়ে কিছু দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি উপহার গ্রহণ করতেন এবং তার বিনিময়ে কিছু দিতেন।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৫৩৬)

ইসলামে উপহার দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন নেই, যেমন জন্মদিন বা বিশেষ উৎসব, যা পশ্চিমা ঐতিহ্য থেকে আলাদা।

প্রস্তাবিত উপহার কী কী?

ইসলামে উপহার ব্যবহারিক, উপকারী এবং গ্রহীতার জন্য মূল্যবান হওয়া উচিত। হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো উপহারের সুপারিশ নেই, তবে সুগন্ধি এবং খাবার জনপ্রিয় ছিল। নবীজিকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো প্রত্যাখ্যান করেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫৮২)

হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো উপহারের সুপারিশ নেই, তবে সুগন্ধি এবং খাবার জনপ্রিয় ছিল। নবীজিকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি কখনো প্রত্যাখ্যান করেননি।

সুগন্ধি জুমার দিন ও নামাজের আগে ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খাবার উপহার হিসেবে এলে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করতেন, ‘এটি সদকা না উপহার?’ যদি উপহার হতো, তিনি তা গ্রহণ করতেন; সদকা হলে তা খেতেন না। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৬৫৬)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীরা, তোমরা কেউ যেন প্রতিবেশীকে দেওয়া উপহারকে তুচ্ছ মনে না করো, এমনকি তা যদি ভেড়ার পায়ের মাংসও হয়।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ৩০৪)

বোঝা যায় যে উপহারের মূল্য নয়, নিয়ত ও ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ।

উপহার দেওয়ার প্রভাব কী?

উপহার দেওয়া হৃদয়ের মধ্যে মালিন্য দূর করে এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন আরেকজনকে উপহার দাও, উপহার হৃদয়ের মধ্যে মালিন্য দূর করে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একজন আরেকজনের সঙ্গে উপহার বিনিময় করো, এটি হৃদয়ের ক্রোধ দূর করে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২১৩০)

উপহার শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা বহন করে, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যেও।

আরও পড়ুনরাসুল (সা.) তাঁকে চাদর উপহার দিলেন০৬ এপ্রিল ২০২৫উপহার দিতে না পারলে কী করবেন?

যদি কেউ আর্থিক বা অন্য কারণে উপহার দিতে না পারেন, তবে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি উপহার পায় এবং তার কাছে কিছু ফেরত দেওয়ার থাকে, তবে তা দিক। যদি কিছু না থাকে, তবে তার প্রশংসা করুক এবং তার পক্ষে ভালো কথা বলুক। যে তা করে, সে কৃতজ্ঞতার দায়িত্ব পালন করে। আর যে কৃতজ্ঞতা গোপন করে, সে অকৃতজ্ঞ। আর যে এমন গুণ প্রকাশ করে যা তার নেই, সে দ্বিমুখী প্রতারণার পোশাক পরিধানকারীর মতো।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২০১৬)

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে উপহারের মূল উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়।

কীভাবে শুরু করবেন

উপহার দেওয়া একটি সুন্নত। এই সুন্নতের চর্চার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দূর করতে এগিয়ে আসতে পারি। আসুন দেখা যাক, কীভাবে উপহার দেওয়ার সুন্নতটি অভ্যাসে পরিণত করতে পারি:

হে মুসলিম নারীরা, তোমরা কেউ যেন প্রতিবেশীকে দেওয়া উপহারকে তুচ্ছ মনে না করো, এমনকি তা যদি ভেড়ার পায়ের মাংসও হয়।রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ৩০৪

১. ছোট উপহার দিয়ে শুরু করুন: যেমন একটি বই, সুগন্ধি বা খাবার উপহার দিন। এমনকি একটি হাসিও উপহার হতে পারে।

২. নিয়মিত উপহার দিন: বিশেষ দিনের অপেক্ষা না করে প্রতিবেশী, বন্ধু বা আত্মীয়দের ছোট উপহার দিন।

৩. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: উপহার পেলে ধন্যবাদ জানান এবং গ্রহীতার জন্য দোয়া করুন।

৪. নিয়ত সঠিক রাখুন: উপহার দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্পর্ক উন্নতির নিয়ত করুন।

৫. অমুসলিমদের উপহার দেওয়া: অমুসলিম বন্ধুদের উৎসবের সময় উপহার দেওয়া জায়েজ, যদি তা তাদের ধর্মীয় আচারের সমর্থন না করে। এটি সম্পর্ক জোরদার ও দাওয়াহর মাধ্যম হতে পারে।

উপহার দেওয়া ও গ্রহণ করা ভালোবাসা ও ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যম। কোরআন ও হাদিস আমাদের উপহারের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও সম্পর্ক গড়ার গুরুত্ব শেখায়। উপহারের মূল্য নয়, বরং নিয়ত ও ভালোবাসাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কৃতজ্ঞতা ও ভালো কথার মাধ্যমে উপহারের উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়। 

আরও পড়ুনপ্রতিবেশীর অধিকার ইমানের মানদণ্ড১৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনারগাঁ অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ
  • উপহার দেওয়া সম্পর্কে ইসলাম