যানজটের কারণে রাজধানীতে নিত্য ভোগান্তি লেগেই আছে। তার ওপর নগরজুড়ে বিভিন্ন সংস্থার সড়ক কাটাকুটি। আছে ভাঙা রাস্তাঘাট, একটু বৃষ্টি হলেই তাতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে চলছে হাঁসফাঁস অবস্থা। এতসব অস্বস্তির মধ্যে নগরবাসীর কপালে মাঝেমধ্যেই যুক্ত হয় সড়ক অবরোধ। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার এমনই আরেকটি ভয়াবহ যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের দিন পার করেছেন রাজধানীবাসী।
সকাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী পুরান ঢাকা থেকে লংমার্চ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তখনই সড়কে অচলাবস্থার শুরু। এর পরপরই পুরান ঢাকার বিভিন্ন পাড়ামহল্লা থেকে শত শত মানুষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগরভবনের সামনে অবরোধের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা নগরভবনের সামনে মানববন্ধন করে সড়কে যান চলাচল বন্ধর করে দেয়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রদল বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। ঢাবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এর পর দুপুরে সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। ফলে রাজধানী কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। যারা ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে বেরিয়েছিলেন, তারা কেউ নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। পাঁচ মিনিটের পথ চলতে গাড়ির ভেতরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতে হয়েছে তাদের। অনেকে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথ দিয়ে যেতে চাইলে সেখানেও একই ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত ছিল না। এ জন্য বাড়তি চাপ পড়েছে মেট্রো রেলে। যাত্রীর চাপ এতই বেশি হয়, অফ পিক আওয়ারেও অনেকে ট্রেনে ওঠার সুযোগ পাননি।
তার ওপর দুপুরে হঠাৎ বজ্রসহ ঝুমবৃষ্টির কারণে অবস্থা নাজুক আকার ধারণ করে। বৃষ্টি থামার পর সড়কগুলোতে ধুন্দুমার অবস্থা তৈরি হয়। অবস্থা এমন বেগতিক আকার ধারণ করে যে, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নির্বাকার হয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অফিস শেষে ঘরে ফিরতেও নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে সীমাহীন যন্ত্রণায়। নারী ও শিশুদের ভোগান্তি ছিল চরমে। তারা অনেক চেষ্টা করেও বাসে উঠতে পারেননি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের রমনা বিভাগের উপকমিশনার শফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বলেন, ‘ঢাকা শহরে এমনিতেই যানজটের শেষ নেই। তার ওপর পাঁচ-ছয় ঘণ্টা যদি মেইন মেইন সড়ক বন্ধ থাকে, তাহলে অবস্থা কী হয় বুঝুন। ডাইভারশন দিতে দিতে আজ শেষ হয়ে গেছি। এখনও ভিআইপি মুভমেন্ট নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
আর যানজটের কারণে মানুষ কোনো দিকেই ঠিকমতো মুভমেন্ট করতে পারছে না। সকাল থেকে মানুষের গালি খেতে খেতে হয়রান।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীতে ২৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। স্বল্প সময়ের এই বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। অবশ্য বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির। তিনি বলেন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত যথেষ্ট গরম ছিল। বৃষ্টির পর তা কমে গেছে অনেকটাই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার অনুরোধ
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার (১২ মে) এক সংবাদ বিবৃতিতে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে এ অনুরোধ জানানো হয়।
ডিএমপি জানায়, ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও অহেতুক রাস্তা অবরোধের ঘটনায় কার্যত ব্যাহত হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন বিদেশগামী যাত্রীরা এবং অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীরা।
এ পরিস্থিতিতে নগরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য অহেতুক সড়ক অবরোধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়।
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “নগরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যাতে তারা অহেতুক রাস্তা অবরোধ না করেন।”
ঢাকা/মাকসুদ/ইভা