গ্রামের এই দেশি ফলের বাজারে আসেন শহরের ক্রেতারাও
Published: 15th, May 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বরমী বাজারের সাপ্তাহিক হাটের ফলপট্টি এখন দেশি ফলে সয়লাব। এখানে প্রতি সপ্তাহের বুধবার হাট বসে। শতবর্ষী এ হাটের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চেনা চিত্র, টিনের ছাউনি দেওয়া দোকান আর ভোরের আলো ফোটার আগেই ব্যস্ত হয়ে পড়া ফলপট্টি।
ফলের মৌসুমে এই হাট যেন রঙিন এক উৎসবে পরিণত হয়। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু দেশি ফল, যা শুধু পেট ভরায় না, মনও ভরায়। ফলের মৌসুমে ভোর হলেই শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। হাটে ঝুড়ি, বাঁশের ডালি, পিঠে-মাথায় বস্তা নিয়ে একে একে হাজির হন চাষিরা। বাজারের ‘ফলপট্টি’ এলাকায় সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। কাঁঠালের মিষ্টি ঘ্রাণ, লিচুর টক-মিষ্টি সুবাস আর আমের সতেজতা যেন বাতাসকেও সজীব করে তোলে। হাটের দিনে বাজারে পা রাখাই দায়। শহর থেকে আসা ক্রেতা, স্থানীয় গৃহিণী, স্কুলছাত্র—সবাই ফল কিনতে আসেন।
বুধবার বেলা ১১টায় হাটে গিয়ে দেখা যায়, ফলপট্টিতে দেশি বিভিন্ন ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অর্ধেকের বেশি পেশাদার বিক্রেতা। পণ্যের মধ্যে আছে আম, লিচু, জামরুল, কলা, আনারস, পেঁপে, বেল, কলা, কাঁঠাল, শুকনা বরই, বাঙ্গি, অরবরই, করমচা, আমলকীসহ নানা ফল। দেশি পাকা আমের পাশাপাশি কাচা আমও বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হাটে কদমী, চায়না-৩, পাতিসহ কয়েক জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে হাটে। অনেকে হাট থেকে পাইকারি দরে ফল কিনে ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। কাঁঠাল এখনো তেমন পাকতে শুরু করেনি। আগাম কিছু পাকা কাঁঠাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তবে দাম চড়া।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পাকা আম আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাচা আমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। লিচু জাতভেদে ১০০টি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আনারস ২০ থেকে ৬০ টাকা, বেল ২০ থেকে ২০০ টাকা, কাঁঠাল ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বাঙ্গি ১৫ থেকে ৪০ টাকা, শুকনা বরই প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, করমচার কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং প্রতি হালি কলার দাম ১০ থেকে ৬০ টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে বরমী বাজারে স্থায়ী দোকান নিয়ে ফলের ব্যবসা করেন আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, অন্যান্য বাজারের তুলনায় বরমী হাটে ফলের দাম অনেক কম। সরাসরি কৃষকের হাত থেকে ফল কেনার সুযোগ থাকে। আশপাশের চারটি উপজেলা থেকে হাটের দিনে বিক্রেতারা ফল বিক্রি করতে আসেন।
কাপাসিয়া উপজেলা থেকে নিজের গাছের লিচু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন সুজন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘শহরে এই লিচু ৩০০ টাকা শ-এর নিচে পাইবেন না। আমরা বেচতেছি মাত্র ১৫০ টাকায়। এই লিচুর মধ্যে কোনো ওষুধ দেওয়া হয় নাই।’
সফিকুর রহমান নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘নিজের গাছের সাড়ে ১২ কেজি করমচা এনেছি। পাইকারি মাত্র ৭০০ টাকায় সব বিক্রি করে দিয়েছি। পরে ওই পাইকার সেগুলো প্রতি কেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। এভাবেই দাম বেড়ে যায়। আমরা দাম পাই না।’
বরমী এলাকার বাসিন্দা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফল ক ন
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।