একটি চাকা খুলে পড়লেও কীভাবে নিরাপদে নামল বিমান
Published: 16th, May 2025 GMT
কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পর পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত নিরাপদে অবতরণ করেছে। একটি চাকা ছাড়া বিমানটি নিরাপদে নামল কীভাবে, স্বাভাবিকভাবে সে প্রশ্ন এসেছে অনেকের মনে।
যে উড়োজাহাজটির চাকা খুলে পড়ে গেছে, সেটি ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজ। কানাডার তৈরি স্বল্পপাল্লার টার্বোপ্রপ যাত্রীবাহী এমন উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মূলত অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক গন্তব্যের ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
আজ শুক্রবার বেলা ১টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসে বিজি ৪৩৬ ফ্লাইটটি। এটি ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজ। এতে শিশুসহ মোট ৭১ জন যাত্রী ছিলেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, বেলা ২টা ২০ মিনিটে ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে পেরেছে। সব যাত্রীও নিরাপদে নেমেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা উড়োজাহাজের জন্য জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজ নিরাপদে নামাতে পাইলটের দক্ষতা ও উপস্থিত বুদ্ধির ওপরই নির্ভর করে অনেক কিছু। অনেক সময় এক পাশের চাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অবতরণ করতে গেলে উড়োজাহাজ কাত হয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়তে পারে। তাই পাইলটকে নির্ধারিত গতিতে, সুনির্দিষ্ট কোণে উড়োজাহাজকে রানওয়েতে নামাতে হয়, যাতে ভারসাম্য হারিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। তাই এ ধরনের জরুরি অবতরণের ক্ষেত্রে রানওয়েতে জরুরি সেবাদানকারী দল প্রস্তুত থাকে।
এ জন্য পাইলট শুরুতেই কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানিয়ে দেন। তখন বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে চলে আসে। পাইলট যাত্রীদের উদ্দেশে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও আশ্বাস দিয়ে মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করেন। অবতরণ শেষে যাত্রীদের নিরাপদে দ্রুত নামিয়ে আনা হয়।
বিমানের এক পাইলট প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার থেকে আসা উড়োজাহাজটির পেছনের এক পাশের দুটি চাকার মধ্যে একটি খুলে পড়ে যায়। ফলে পাইলট অন্য পাশের দুই চাকার ওপর ভর বেশি দিয়ে রানওয়েতে অবতরণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে পাইলটের দক্ষতা মূল ভূমিকা রেখেছে।
উল্লিখিত উড়োজাহাজ চালনায় যুক্ত ছিলেন ক্যাপ্টেন বিল্লাহ ও ফার্স্ট অফিসার জায়েদ। বিমানের ফেসবুক পেজে তাঁদের ব্যাপক প্রশংসা করে একটি পোস্ট করা হয়েছে।
তবে ওই পোস্টের নিচে কেউ কেউ লিখেছেন, এটা যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, কর্তৃপক্ষের অবহেলা। তবে বিমান–সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকৌশল শাখার গাফিলতির একটা ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস আগে বিমানের প্রকৌশলীদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের সুযোগ–সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। যেখানে তাঁদের আরও দক্ষতার সঙ্গে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। উল্ঠো তাঁদের ব্যর্থতার কারণে আকাশ থেকে বিমানের চাকা খুলে পড়েছে। এ ঘটনা বিমানের ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।
আরেক কর্মকর্তার ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর দেশে অনেক পরিবর্তন হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে নেওয়ার কোনো লক্ষণও নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক শ ন র পদ র একট র নওয় প ইলট ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫৩ ফিলিস্তিনি ১২ ঘণ্টা বিমানে আটকা
ভ্রমণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নয় মাসের গর্ভবতী এক নারীসহ ১৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে বিমানে আটকে রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। শুক্রবার এ ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকার কর্তৃপক্ষ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বিমানে আটকে থাকা যাত্রীদের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া এক ইমাম জানিয়েছেন, বিমানের ভেতরে প্রচণ্ড গরম ছিল এবং শিশুরা চিৎকার করে কাঁদছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কেনিয়ার নাইরোবিতে যাত্রাবিরতির পর বৃহস্পতিবার সকালে জোহানেসবার্গের ও.আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিলিস্তিনিদের একটি চার্টার বিমানে অবতরণ করে।
ফিলিস্তিনি যাত্রীদের কাছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কোনো বহির্গমন স্ট্যাম্প ছিল না, তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় কতদিন থাকবেন তাও উল্লেখ ছিল না এবং স্থানীয় ঠিকানাও ছিল না। এর ফলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এবং গিফট অফ দ্য গিভার্স নামে একটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ফিলিস্তিনিদের থাকার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়ার পর পরিবার ও শিশুসহ ১৫৩ জন যাত্রীকে বিমান থেকে নামতে দেওয়া হয়।
সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৩ জন যাত্রী অন্য দেশে চলে গেছেন, ১৩০ জন দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়ে গেছেন।
গিফট অফ দ্য গিভার্সের প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ সুলিমান জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে এটি ফিলিস্তিনিদের বহনকারী দ্বিতীয় বিমান যা দক্ষিণ আফ্রিকায় অবতরণ করেছে এবং যাত্রীরা নিজেরাই জানেন না যে তারা কোথায় যাচ্ছেন। দুটি বিমানই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে লোকদের বহন করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চার্টার বিমানটি কে পরিচালনা করেছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
ঢাকা/শাহেদ