শনিবার এমআরএ ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 16th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ভবনের উদ্বোধন করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, এমআরএ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি বিটিভি এবং বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
আরো পড়ুন:
সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা
দুটি নোবেল পাওয়ার জন্য চবি গর্ববোধ করতে পারে
আঞ্চলিক অর্থনীতি ও নেপালের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ সহযোগিতার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
এমআরএ ভবনের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল এবং এটি ২০২৩ সালের ২৬ জুনের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। ভবনটি ১৬ তলা ভিত্তির ওপর নির্মিত একটি বহুতল অফিস ভবন, যার মধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল, গেট, গার্ড রুম, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, সেপটিক ট্যাংক, সোক ওয়েল, সাইনেজ, ম্যুরাল এবং ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শি-পুতিন দৃঢ় ঐক্যে চ্যালেঞ্জের মুখে পশ্চিমা বিশ্ব
বিশ্বের দিকে দিকে যখন চলছে যুদ্ধের উন্মাদনা, তখন চীন-রাশিয়ার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ‘ইস্পাত কঠিন’ ঐক্য। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উত্তেজনাসহ পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে মস্কো-বেইজিং বন্ধুত্ব আরও সুসংহত হয়েছে। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মস্কো সফরে বিষয়টি যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশ দুটির এমন দৃঢ় ঐক্য চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে পশ্চিমা বিশ্বকে।
গত ৭-১০ মে রাশিয়া সফর করেন শি জিনপিং। নাৎসি জার্মানির পরাজয় স্মরণে রাশিয়ার ৮০তম বিজয় দিবস উদযাপনে বন্ধু ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে ছুটে যান তিনি। চায়ের আড্ডায় কাটিয়েছেন প্রায় ১০ ঘণ্টা। বিশ্লেষকরা বলছেন, শি জিনপিংয়ের এবারের মস্কো সফর চীন-রাশিয়া সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
মস্কোতে শি প্রায় ২০টি দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট। অর্থনৈতিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে দুই দেশ।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মনে করেন, চীনের প্রেসিডেন্টের রাশিয়া সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতির সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে বর্তমান বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা চীন-রাশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তি রচিত করেছে।
গত তিন বছর ধরে চীন-রাশিয়ার প্রতিরক্ষাগত সামঞ্জস্যতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ শুরুর সময় থেকেই তাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত দ্বৈততা ছিল। এছাড়া চীন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে প্রকাশ্যে সমর্থনও করেনি। তবে সংঘাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন বগু খাতে মস্কো-বেইজিং কৌশলগত ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বেড়েছে।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ডিস্টিংগুইশড ফেলো থমাস গ্রাহাম মনে করেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল-গ্যাস বেশি করে কিনছে চীন। যাতে পুতিন সেই টাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন। ২০২৩ সাল থেকে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা হয়ে উঠেছে বেইজিং। পাশাপাশি মাইক্রোচিপের মতো যেসব যন্ত্রাংশ অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার হয় তা রাশিয়াকে দিয়েছে চীন।
শক্তিশালী হচ্ছে অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব
চীন-রাশিয়ার শক্তিশালী অংশীদারিত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক সম্পর্ক। চীনের কাস্টমস অফিসের তথ্য বলছে, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে রেকর্ড ২৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। মস্কো-বেইজিং উভয়ই নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পশ্চিমা প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যের অধিকাংশই বর্তমানে ডলার বা ইউরোর পরিবর্তে রুবল ও ইউয়ানে পরিচালিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপ দেশ দুটির অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করছে।
রাশিয়ার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং চীনের উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা দুই দেশের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। পারমাণবিক শক্তি, মহাকাশ শিল্প ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ প্রযুক্তিগত দক্ষতার ক্ষেত্রগুলোতে চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চীন-রাশিয়া ঐক্যের ভূ-রাজনৈতিক সফলতাও স্পষ্ট। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সুসম্পর্ক সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের ঐক্যে ফাটল ধরানোর প্রচেষ্টা, যে কারোর জন্যই দুরাশার কারণ হবে। বহিরাগত কোনো জোটও এই ঐক্যের ভিত নড়াতে সক্ষম নয়।
রাশিয়ার জন্য ভুগতে হচ্ছে চীনকেও
মস্কোর সেনারা ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে চীনকেও ভুগতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে বেইজিংও। রাশিয়াকে সমর্থন করায় চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চীনের চাংশা তিয়ানয়ি স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন। অভিযোগ ইউক্রেনে ওয়াগনার গ্রুপের কার্যক্রম সহজ করতে রাডার স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহ করত প্রতিষ্ঠানটি।
২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সহায়তার অভিযোগে চীনের দুটি ড্রোন কোম্পানি ‘জিয়ামেন লিম্বাচ এয়ারক্র্যাফ্ট ইঞ্জিন কোং’ এবং ‘রেডলেপাস ভেক্টর ইন্ডাস্ট্রি শেনজেন কোং’-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৩ সাল থেকে শি ও পুতিন ৪০ বারেরও বেশি সাক্ষাৎ করেছেন, যা দু’দেশের গভীর পারস্পরিক আস্থা এবং আন্তরিক বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করেছে। দেশ দুটি এখন বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশের মডেল হয়ে উঠেছে।
সূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট, পিপলস ডেইলি অনলাইন