ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দুই দিন পর ১২ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি সেখানে বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কেবল সামরিক অভিযানে ‘বিরতি’ দিয়েছে এবং ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ লক্ষ্য করে শুরু হওয়া অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘এখন অপারেশন সিঁদুর হলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে অপারেশন সিঁদুর একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে এবং একটি নতুন প্যারামিটার। এটি নতুন স্বাভাবিক অবস্থা নিয়ে এসেছে।’  

মোদির ভাষণ স্পষ্টতই ভারতীয় জনগণকে আশ্বস্ত করার জন্য ছিল না। কেননা, তাঁর ভাষণে সরকার তাদের নিরাপত্তা বা সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে এবং সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাইছে, এমন কিছু ছিল না। বরং এর উদ্দেশ্য ছিল সতর্ক করা– দেশ এখন একটি স্থায়ী যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছে।

এই নতুন পরিস্থিতি জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়; বরং মোদির জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের সন্তুষ্ট করার জন্য তৈরি করা, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় দ্বিধাগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মতে, সামরিকীকরণের পর এই নতুন স্বাভাবিকতা ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপর যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে, তার মূল্য দিতে হবে।
সত্য হলো, ভারত শাসিত কাশ্মীরে পেহেলগামে হামলার পর এস্টাবলিশমেন্ট ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে পুঁজি করতে উত্তেজনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেটি করতে গিয়ে তারা অজান্তেই নিজেদের একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। হিমাংশী নারওয়ালের মতো হামলার শিকার ব্যক্তিও শান্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডে তিনি বেঁচে গেলেও তাঁর স্বামী নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বিনয় নারওয়ালকে হারিয়েছিলেন। হিমাংশী মুসলিম ও কাশ্মীরিদের লক্ষ্যবস্তু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। এদিকে বিজেপি প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়েছিল এবং তারা মুসলিমবিরোধী বক্তব্যই গ্রহণ করেছিল।
ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় নেওয়া অথবা পর্যটনকেন্দ্রগুলো সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে অবহেলার ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তারা তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে রূপ দেয়। ঘৃণামূলক বক্তব্যের পরপরই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভারতের বেশ কিছু জায়গায় মুসলিম ও কাশ্মীরিদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং ভারত সরকারের সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে কোনো যোগসূত্র থাকা ব্যক্তিদের শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিক ৯টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার মানুষকে আটক বা গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তির পাকিস্তানি পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের নির্বাসিত করে পরিবারগুলো লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়। এর পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘোষণা করা হয়। একদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। অন্যদিকে মূলধারার সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে উন্মত্ত আহ্বান জানায়। প্রধান টিভি চ্যানেলগুলো পুরোপুরি মিথ্যাভাবে ঘোষণা করে, করাচি বন্দর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করেছে। টিভি স্টুডিওগুলো থেকে আসা যুদ্ধের চিৎকার ও ভুয়া খবর এবং বিজেপির আইটি সেলগুলোর উন্মত্ত বার্তা ছড়াতে থাকে। এগুলো সমর্থকদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে– পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং দেশটির পতন সন্নিকটে। 

একই সঙ্গে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারত সরকার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স থেকে ৮ হাজার অ্যাকাউন্ট ব্লক করার অনুরোধ করে। এতে বিবিসি উর্দু, আউটলুক ইন্ডিয়া, মাকতুব মিডিয়া, প্রবীণ সাংবাদিক অনুরাধা ভাসিন ও রাজনৈতিক কনটেন্ট নির্মাতা অর্পিত শর্মাও অন্তর্ভুক্ত। এখন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন– অভিযান শেষ হয়নি, তাই ভারতীয় জনগণের কাছ থেকে পূর্ণ আনুগত্য দাবি করা হবে। বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে সব ধরনের প্রশ্ন স্থগিত করতে বাধ্য হবে। মুসলমানরা জাতির প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণ করা দায় মনে করবে। এভাবে ভারতে গণতন্ত্র স্থগিত রয়েছে। কারণ দেশটি এখন একটি স্থায়ী শত্রু ও যুদ্ধের মুখোমুখি।

অপূর্বানন্দ: ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের 
শিক্ষক; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত
ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে হবে: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে চাই। এই জুলাই-আগস্টেই তাদের সম্মান দিতে হবে।’

শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভা ও বিশেষ অনুষ্ঠানের ভেন্যু পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে ১ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে সেখানে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে, যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনও প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবকে স্মরণীয় করে রাখতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমাদের দাবি ও প্রত্যাশা– খুব শিগগিরই শেখ হাসিনার বিচারকাজ দৃশ্যমান হবে। জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই নির্বাচনে জনগণের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয়লাভ করবে এবং জনগণের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব ও গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব, ড. মাহদী আমিন, ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোমবাতি প্রজ্বালনে শহীদদের স্মরণ করলো ছাত্রদল
  • মোমবাতি প্রজ্বালনে শহীদদের স্মরণ করলো ছাত্রদল, ৩৬ দিনের কর্মসূচি উদ্বোধন
  • গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে?
  • গণঅভ্যুত্থানের অর্জন নষ্ট করা যাবে না: গণতন্ত্র মঞ্চ
  • ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম 
  • অনড় অবস্থান নয়, নমনীয়তাই রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি
  • জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে হবে: রিজভী