নিউ নরমাল ভারতের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে
Published: 16th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দুই দিন পর ১২ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি সেখানে বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কেবল সামরিক অভিযানে ‘বিরতি’ দিয়েছে এবং ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ লক্ষ্য করে শুরু হওয়া অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘এখন অপারেশন সিঁদুর হলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে অপারেশন সিঁদুর একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে এবং একটি নতুন প্যারামিটার। এটি নতুন স্বাভাবিক অবস্থা নিয়ে এসেছে।’
মোদির ভাষণ স্পষ্টতই ভারতীয় জনগণকে আশ্বস্ত করার জন্য ছিল না। কেননা, তাঁর ভাষণে সরকার তাদের নিরাপত্তা বা সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে এবং সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাইছে, এমন কিছু ছিল না। বরং এর উদ্দেশ্য ছিল সতর্ক করা– দেশ এখন একটি স্থায়ী যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছে।
এই নতুন পরিস্থিতি জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়; বরং মোদির জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের সন্তুষ্ট করার জন্য তৈরি করা, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় দ্বিধাগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছিল। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মতে, সামরিকীকরণের পর এই নতুন স্বাভাবিকতা ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপর যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে, তার মূল্য দিতে হবে।
সত্য হলো, ভারত শাসিত কাশ্মীরে পেহেলগামে হামলার পর এস্টাবলিশমেন্ট ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে পুঁজি করতে উত্তেজনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেটি করতে গিয়ে তারা অজান্তেই নিজেদের একটি কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। হিমাংশী নারওয়ালের মতো হামলার শিকার ব্যক্তিও শান্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডে তিনি বেঁচে গেলেও তাঁর স্বামী নৌবাহিনীর কর্মকর্তা বিনয় নারওয়ালকে হারিয়েছিলেন। হিমাংশী মুসলিম ও কাশ্মীরিদের লক্ষ্যবস্তু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। এদিকে বিজেপি প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়েছিল এবং তারা মুসলিমবিরোধী বক্তব্যই গ্রহণ করেছিল।
ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় নেওয়া অথবা পর্যটনকেন্দ্রগুলো সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে অবহেলার ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তারা তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে রূপ দেয়। ঘৃণামূলক বক্তব্যের পরপরই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভারতের বেশ কিছু জায়গায় মুসলিম ও কাশ্মীরিদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং ভারত সরকারের সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে কোনো যোগসূত্র থাকা ব্যক্তিদের শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিক ৯টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার মানুষকে আটক বা গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তির পাকিস্তানি পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের নির্বাসিত করে পরিবারগুলো লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়। এর পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘোষণা করা হয়। একদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। অন্যদিকে মূলধারার সংবাদমাধ্যম পাকিস্তানকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে উন্মত্ত আহ্বান জানায়। প্রধান টিভি চ্যানেলগুলো পুরোপুরি মিথ্যাভাবে ঘোষণা করে, করাচি বন্দর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করেছে। টিভি স্টুডিওগুলো থেকে আসা যুদ্ধের চিৎকার ও ভুয়া খবর এবং বিজেপির আইটি সেলগুলোর উন্মত্ত বার্তা ছড়াতে থাকে। এগুলো সমর্থকদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে– পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং দেশটির পতন সন্নিকটে।
একই সঙ্গে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারত সরকার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স থেকে ৮ হাজার অ্যাকাউন্ট ব্লক করার অনুরোধ করে। এতে বিবিসি উর্দু, আউটলুক ইন্ডিয়া, মাকতুব মিডিয়া, প্রবীণ সাংবাদিক অনুরাধা ভাসিন ও রাজনৈতিক কনটেন্ট নির্মাতা অর্পিত শর্মাও অন্তর্ভুক্ত। এখন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন– অভিযান শেষ হয়নি, তাই ভারতীয় জনগণের কাছ থেকে পূর্ণ আনুগত্য দাবি করা হবে। বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে সব ধরনের প্রশ্ন স্থগিত করতে বাধ্য হবে। মুসলমানরা জাতির প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণ করা দায় মনে করবে। এভাবে ভারতে গণতন্ত্র স্থগিত রয়েছে। কারণ দেশটি এখন একটি স্থায়ী শত্রু ও যুদ্ধের মুখোমুখি।
অপূর্বানন্দ: ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত
ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার জম্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর বিএনপির দোয়া
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে । শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেল চারটায় শহরের মিশনপাড়াস্থ হোসিয়ারি কমিউনিটি সেন্টারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের অনুপ্রেরণা ও শক্তি। ওনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশে পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রপথিক হিসাবে দেশের মানুষকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
বিএনপিকে সারা দেশের একটি সুন্দর সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতাতা প্রকাশ করছি। আপনারা সবাই আমাদের গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আজ ঐতিহাসিক ১৫ই আগস্ট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন। বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর একজন গৃহবধূ থেকে বিএনপি'র হাল ধরেন তিনি।
স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে দুর্বল আন্দোলন করে তার পতন নিশ্চিত করেছিল। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯০ সালে নির্বাচনে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনি রাজপথে আন্দোলনকে দুর্বার করে রেখেছিল।
তিনি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। ফ্যাসিস শেখ হাসিনার মিথ্যা মামলায় তাকে কারাবন্দি করে রেখো তার মনোবলকে ভাঙতে পারেনি। কারণ তিনি ছিলেন আপোষহীন নেত্রী। আপনারা সবাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ পাক যেনো তাকে নেক হায়াত ও সুস্থতা দান করেন আমিন।
এসময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় এবং একই সাথে ‘৭১ এর মুক্তিযুেদ্ধ জীবনদানকারী শহীদগণ, ‘৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় দোয়া পরিচালনা করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এড. রফিক আহমেদ, ডা. মজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, হাবিবুর রহমান মিঠু, বরকত উল্লাহ, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মির্জা কামাল উদ্দিন জনি, মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, মহানগর কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক মো.ফয়সাল, বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন, আবুল হোসেন রিপন, শেখ সেলিম, নাজমুল হক, নজরুল ইসলাম সরদার, আলমগীর হোসেন চঞ্চল, ইকবাল হোসেন, আল আরিফ, শাহাদুল্লাহ মুকুল, সাইফুল ইসলাম বাবু, হিরা সরদার, মাহবুবুর রহমান, মহানগর মহিলাদলের সভানেত্রী দিলারা মাসুদ ময়না, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাদুল্লাহ মুকুল, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, গোগনগর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াজী, আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আঃ রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাঁরা মিয়া, ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহেন শাহ্ মিঠু, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাজু আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাজাদা আলম রতন, মহানগর ওলামা দলের আহ্বায়ক হাফেজ শিবলীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।