বোতল ছোড়ার ঘটনায় জবি ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদে আইনের ব্যাত্যয় ঘটেনি: পুলিশ
Published: 17th, May 2025 GMT
তথ্য উপদেষ্টাকে বোতল ছোড়ার ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ ইশতিয়াক হোসাইনকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার বয়স, পেশা, ব্যক্তিগত মানবাধিকার ও আইনের বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তারা বলছে, এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ মে রাত আনুমানিক ১০টায় আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য তথ্য উপদেষ্টা কাকরাইল মসজিদ এলাকায় যান। মতবিনিময়ের একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে আন্দোলকারীদের মধ্য থেকে কে বা কারা একটি পানির বোতল ছুঁড়ে মারে, যা আকস্মিকভাবে তার মাথায় আঘাত করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা, জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং এ ঘটনার নেপথ্য কারণ উদঘাটনের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মোহাম্মদ ইশতিয়াক হোসাইন নামক এক ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯টায় রাজধানীর আলুবাজার পুকুরপাড় এলাকায় তার মেস থেকে শনাক্ত করা ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এ বিষয়ে তার সঙ্গে মেসে বসবাসরত অন্যান্য সদস্যদের তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হয়। রাত আনুমানিক ৯টা ৫৫ মিনিটে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ওই ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ও অন্যান্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শুক্রবার দুপুর আনুমানিক ১২টায় তিনি ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এজন্য অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে অবহিত করেন। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী শুক্রবার দুপুরে তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয় এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এদিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় তাকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই এসআই ও ছয় কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রংপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে বুধবার (১৩ আগস্ট) তাদের বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
পাশাপাশি ওই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে।
তারাগঞ্জ থানার ওসি এমএ ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
মাগুরায় টাকা চুরির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৩
রংপুরে গণপিটুনিতে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা
সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন- তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই সফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, ধিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে আট পুলিশ সদস্যকে বুধবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই দিন ঘটনার সময় তারাগঞ্জ থানায় মোবাইল টিমের দায়িত্বে ছিলেন তারা।
শনিবার (৯ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস নামে দুইজনকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করেন এলাকাবাসী। নিহতরা সম্পর্কে আত্মীয়।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার লাল চাঁদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। রবিবার (১০ আগস্ট) বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। শনিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে প্রদীপ দাস তারাগঞ্জের রুপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় গিয়ে রুপলালকে ফোন করেন।
রুপলাল গেলে দুইজনে ভ্যানে চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করে লোকজন। এর একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুইজন। ফলে লোকজনের সন্দেহ আরো বৃদ্ধি পায়। এরপর রুপলাল ও প্রদীপকে মারধর করতে শুরু করেন এলাকাবাসী।
মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে তাদের বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফেলে রাখা হয়। রাত ১১টার দিকে আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে (৪০) মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে (৩৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার ভোরে তিনিও মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত রূপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ