সোনারগাঁয়ে কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে বাড়ি ভাড়ায় রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ
Published: 17th, May 2025 GMT
সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বাড়ি ভাড়ায় রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নামে বাসা বরাদ্ধ নিয়ে থাকছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারী।
সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাদের মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া প্রদানের নিয়ম থাকায় তারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য গার্ড ও নাইট গার্ডের মূল বেতনের বাড়ি ভাড়া প্রদান করে বসবাস করছেন। ফাউন্ডেশনের পরিচালনা বোর্ডের ১২৭তম সভায় সরকার নির্ধারিত বাড়ি ভাড়া প্রদান করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসিক ভবনে বসবাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই সভার নির্দেশনা অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তারা ফাউন্ডেশনের আবাসিক ভবনে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে মাসের পর মাস সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ১২৭তম সভা ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে অনুষ্টিত হয়। ওই সভায় ফাউন্ডেশনের ১৩টি এজেন্ডা নিয়ে সভা হয়। সভায় ৮ নং এজেন্ডায় ফাউন্ডেশনের আবাসিক ভবনে বসবাসরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসা ভাড়া প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় সরকার নির্ধারিত বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একই বছরের ৩০অক্টোবর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সহকারী সচিব মো.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন, তাদের নামে বাসা ভাড়া বরাদ্ধ হলেও তারা ওই বাসায় বসবাস করছেন না। তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসবাস করেন তাই প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। ছোট চাকুরী তাই তাদের সঙ্গে প্রতিবাদ করে পারবেন না।
সরেজমিনে ফাউন্ডেশনের গিয়ে জানা যায়, অফিসার্স কোয়ার্টারের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব পাশে পরিচালকের একান্ত সহকারী মো. সারোয়ার হোসেন, স্টাফ কোয়ার্টারে প্রথম তলার উত্তর পাশে কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক দিলওয়ার হোসেন, তৃতীয় তলার উত্তর পাশে গার্ড মো. আয়নাল হক, দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশে মিউজিয়াম এটেনডেন্ট কাজী মিজানুর রহমান, দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশে গার্ড আবুল বাশার, প্রথম তলার দক্ষিণ পাশে গার্ড মো. জায়েদুল হক নয়ন, চতুর্থ তলার পশ্চিম পাশে অফিস সহায়ক সবি শংকর চাকমা, দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশে গার্ড মো. ইউনুস খাঁন ও দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে গার্ড মো. রানা মিয়ার নামে বরাদ্ধ রয়েছে।
সেখানে তাদের নামে পল্লী বিদ্যুতের মিটার রয়েছে। তাদের নামে বরাদ্ধ হলেও দুজন ছাড়া কেউ বরাদ্ধকৃত বাসায় বসবাস করেন না।
সূত্র জানায়, পরিচালকের একান্ত সহকারী মো. সারোয়ার হোসেনের বরাদ্ধকৃত কোয়ার্টারে থাকেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাখওয়াত হোসেন, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক দিলওয়ার হোসেনের কোয়ার্টারে থাকেন পরিচালকের একান্ত সহকারী মো. সারোয়ার হোসেন, গার্ড মো. আয়নাল হক কোয়ার্টারে থাকেন হিসাব রক্ষক আব্দুর রহিম, মিউজিয়াম এটেনডেন্ট কাজী মিজানুর রহমানের কোয়ার্টারে থাকেন অর্ভথনাকারী তাজমহল বেগম, গার্ড আবুল বাশারের কোয়ার্টারে থাকেন মিউজিয়াম এটেনডেন্ট কাজী মিজানুর রহমান, গার্ড মো. জায়েদুল হক নয়নের কোয়ার্টারে থাকেন পরিচালকের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক বুলবুল ইসলাম, অফিস সহায়ক সবি শংকর চাকমার কোয়াটারে থাকে মাসুদুর রহমান, গার্ড রানা মিয়ার কোর্য়াটারে থাকেন মো. হালিম উদ্দিন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক একে এম আজাদ সরকার বলেন, বিষয়টি আমার নজরে নেই। তবে খোঁজ নিয়ে রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ বসব স করছ ন কর মকর ত র রহম ন বর দ ধ সরক র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।