বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে চলতি মৌসুমে (মার্চ থেকে মে মাস) দুই পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজন ভারতীয়। অন্যজন ফিলিপাইনের নাগরিক। পর্বতারোহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেপালের কর্মকর্তারা গতকাল শুক্রবার এ কথা জানান।

ভারতীয় ওই পর্বতারোহীর নাম সুব্রত ঘোষ। বয়স ৪৫ বছর। গত বৃহস্পতিবার ‘হিলারি স্টেপের’ ঠিক নিচে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার বা ২৯ হাজার ৩২ ফুট ওঠার পর ফিরতি পথ ধরেছিলেন সুব্রত।

হিলারি স্টেপ ‘ডেথ জোন’ হিসেবে পরিচিত এলাকায় অবস্থিত। ৮ হাজার ফুট উঁচু ওই জায়গায় বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক অক্সিজেন নেই।

আরও পড়ুনএক সপ্তাহে এভারেস্ট জয় কি সত্যিই সম্ভব৩০ এপ্রিল ২০২৫

আয়োজক প্রতিষ্ঠান নেপালের স্নোওয়ে হরাইজন ট্র্যাকস অ্যান্ড এক্সপিডিশনের বোধরাজ ভান্ডারি বলেন, ‘সুব্রত হিলারি স্টেপ থেকে নিচে নামতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।’

সুব্রতের সঙ্গে আসলে কী ঘটেছিল, এর বেশি বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

বোধরাজ ভান্ডারি জানান, ভারতীয় এই পর্বতারোহীর মরদেহ এভারেস্টের বেসক্যাম্পে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। পোস্টমর্টেম করা হলে তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

আরও পড়ুনএভারেস্টে আরোহণের ফি ৩৬ শতাংশ বাড়ছে২২ জানুয়ারি ২০২৫

এদিকে ফিলিপাইনের পর্বতারোহীর নাম ফিলিপ সান্তিয়াগো। তাঁরও বয়স ৪৫ বছর। বুধবার দিনের শেষভাগে মারা যান তিনি। নেপালের পর্যটন বিভাগের কর্মকর্তা হিমাল গৌতম বলেন, ওই সময় ফিলিপ মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের পথে সাউথ কোল অংশে ছিলেন।

হিমাল গৌতম জানান, চতুর্থ সর্বোচ্চ ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর ফিলিপ বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই নিজের তাঁবুতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। ওই সময় ফিলিপের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুনএভারেস্টে হারিয়ে যাওয়া ৯ বিখ্যাত অভিযাত্রীর গল্প ২৭ মে ২০২৪

এই দুই পর্বতারোহী বোধরাজ ভান্ডারির আন্তর্জাতিক পর্বতারোহণ অভিযান সংস্থার সদস্য ছিলেন।

চলতি মে মাসে শেষ হতে যাওয়া এবারের পর্বতারোহণ মৌসুমে নেপালের কর্তৃপক্ষ এভারেস্ট জয়ে ৪৫৯টি অনুমতিপত্র ইস্যু করেছে। গত সপ্তাহে প্রায় ১০০ পর্বতারোহী ও তাঁদের গাইড সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেছেন। এভারেস্ট অভিযানের ১০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে বন্ধুর এ পথে অন্তত ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুনএভারেস্টে পাওয়া শত বছর আগের পায়ের খণ্ডাংশটি কার ১৩ অক্টোবর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ