নতুন স্বৈরাচার ঠেকানোর পথ জানতে হবে: সলিমুল্লাহ খান
Published: 19th, May 2025 GMT
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, বর্তমানে যে নতুন স্বৈরাচারের সম্ভাবনা আছে, সেটি আমাদের ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে। একটি স্বৈরাচারের পতনের পর সাধারণত যে নির্যাতিত হয়েছিল, সে অপরকে নির্যাতন করে। এটি হলো প্রকৃতির নিয়ম। সেটি যেন না হয়, তার রক্ষার পথ জানতে হবে।
সোমবার চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সংকটের তিন চেহারা: রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণ’ শীর্ষক এ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কলেজের উপাধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের ছেলেমেয়েরা যা করেছে, বছর না পেরোতেই মানুষ ভুলতে শুরু করেছে। নিহতদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। অথচ জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টের ওই সময়ে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহতের কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান কোনো সভ্য জাতির ইতিহাসে এমন রেকর্ড নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবে জেনারেল ডায়ার নামে এক ব্যক্তি গুলি করে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ জনকে হত্যা করেন। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর যুগবাণী বইয়ে লিখেছেন, নিহতের জন্য অবশ্যই স্মৃতিস্তম্ভ করা প্রয়োজন। তবে ডায়ারের নামেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা দরকার, যেন তাকে দেখে মানুষ মনে করতে পারে একজন কতটা জালিম হতে পারে। নজরুলের পুনরাবৃত্তি করে আমি সবিনয়ে অনুরোধ করতে পারি, আমাদের দেশেও যে জালিমরা এত হত্যা করেছে তাদের স্মৃতিস্তম্ভ করুন, যা দিনাজপুর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মানুষ মনে রাখবে।
আদিবাসীদের প্রশ্নে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের উপজাতি বলা আমি সঠিক মনে করি না। তাদের নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের সবচেয়ে বেশি কথা বলা উচিত। সব বড় বড় আলোচনার আগে একটা গণভোট করা উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ছাড়া অন্য জাতিগোষ্ঠীরা কী নামে পরিচিত হতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে এক প্রশ্নে সলিমুল্লাহ খান বলেন, দৌড় শেষ হওয়ার আগে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করা উচিত হবে বলে মনে করি না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রতি বছর শুনি বালুর বস্তা ফেলবে কিন্তু ফেলা আর হয় না’
কুমিল্লার তিতাসে গোমতী নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময় কিছু কিছু ভাঙন দেখা যায়। তবে স্রোত বাড়লেও ভারী বৃষ্টিপাতের সময় বেশি ভাঙন দেখা দেয়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিন কাটছে ভাঙনকবলিত নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের।
স্থানীয়দের দাবি, গত দুই বছরে কয়েকশ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। বর্ষা এখনও পুরোদমে শুরু না হতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। গোমতীর ভাঙন রোধে প্রয়োজন যথাযথ ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং খনন কার্যক্রম। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুমুর থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বিবির বাজার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। গোমতী নদী তিতাস উপজেলার মানিকনগর গ্রাম দিয়ে ১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে লালপুর ও দাউদকান্দি দিয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি বছরই গোমতীর ভাঙন দেখা যায়। ভাঙনে বিলীন হয় বসতভিটা ও ফসলি জমি। বাস্তুচ্যুত হয় বহু মানুষ। এই ভাঙন থেকে নিস্তার চায় এলাকাবাসী। এজন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মানিকনগর ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, জগতপুর, আসমানিয়া বাজার, দক্ষিণ নারান্দিয়া এলাকায় গিয়ে নদী ভাঙন দেখা গেছে। এসব এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ নারান্দিয়ায় নদীর দুই পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আসমানিয়া বাজারের অনেক দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে, অনেক দোকান ও বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকায় গত কয়েক বছর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ‘আমাদের চার কানি বাড়ি ছিল, যা গোমতী নদীর ভাঙনে কয়েক শতকে এসে ঠেকেছে। এটা যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের থাকার জায়গা থাকবে না। প্রতি বছর শুনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালুর বস্তা ফেলবে, কিন্তু বস্তা আর ফেলা হয় না। আমাদের দুঃখ কেউ শোনে না।’
ঘোষকান্দি গ্রামের কাইয়ুম মিয়া জানান, এখন গোমতী যে স্থানে আছে, তাঁর মাঝখানে তাদের বাড়ি ছিল। দাদার বাড়ি ভেঙেছে, বাবার বাড়ি ভেঙেছে, এখন তাদের বাড়িও হুমকিতে। বহু বছর ধরে নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলে ব্যবস্থা নিলে অন্তত বসতভিটা রক্ষা পেত।
আসমানিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, প্রতি বছর বর্ষা এলেই ভাঙন দেখা দেয়। বাজারের অনেক অংশ ভেঙে গেছে, হুমকির মধ্যে রয়েছে আরও অনেক বাড়ি ও দোকানঘর। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নারান্দিয়া ইউপি সদস্য ছবির আহমেদের ভাষ্য, প্রতি বছর বর্ষার সময় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। গত দুই বছরে প্রায় ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ বছরও যে অবস্থা, তাতে আরও অনেক পরিবার গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো আশা দেখছি না। এভাবে চললে নারান্দিয়ার দুটি গ্রাম গোমতী নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান জানান, তাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, জরুরি প্রয়োজনে যা বরাদ্দ পান তা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে এখানে কাজ করা সম্ভব হয় না। আলাদা একটি প্রকল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলতে হবে। নদীর তীর রক্ষার জন্য আলাদা প্রকল্প দরকার। বিষয়টির কথা বলছেন তারা, আশা করছেন এ ধরনের একটি প্রকল্প এখানে নেওয়া হবে।