সংঘর্ষের জেরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ৩ মাস ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় বেড়ে গেছে সেশনজট। নতুন ব্যাচের ক্লাসও শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকায় সহসা কাটছে না সংকট। একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। সংকট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। কুয়েটে এমন অচলাবস্থা আগে কখনও কেউ দেখেনি।
কুয়েটের শিক্ষার্থী মো.
এদিকে নতুন ব্যাচের ১ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। গত ২৪ এপ্রিল থেকে তাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল।
গত ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হলেও ওই দিন থেকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের লাঞ্চিতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্ত রয়েছে শিক্ষক সমিতির। এছাড়া ১৮ মে থেকে একাডেমিক কাজ থেকেও বিরত রয়েছেন তারা।
শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ হিসেবে গত ১২ মে কুয়েট কর্তৃপক্ষ ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে শোকজ করে। এর প্রতিবাদে ১৩ মে থেকে আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ১৫ মে’র মধ্যে তাদের শোকজ নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কেউই দেয়নি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, অপসারিত উপাচার্যের সময়ে গঠন করা তদন্ত কমিটির পক্ষপাতিত্বমূলক প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদেরকে শোকজ করা হয়। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের কাছে নতুন করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য দাবি জানিয়েছি।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষীদের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। যার কারণে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা ৪ মে থেকে ক্লাস বর্জন করছি। তার আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কুয়েট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে ক্লাস হয়নি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার তারা এক ঘণ্টা প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। মঙ্গলবারও তাদের একই কর্মসূচি রয়েছে।
এদিকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখন দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক গ্রুপ শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে। গত ৩ মাস ধরে আন্দোলন করা অন্য গ্রুপ আপাতত চুপচাপ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ শিক্ষকদের পক্ষে অবস্থায় নেওয়ায় অন্য গ্রুপ কিছুটা চাপে পড়েছে। এখন তারা কী করবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েটের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ দাবিতে অনড় থাকায় মূলত সংকট নিরসন হচ্ছে না। উভয় পক্ষই একে অপরকে ছাড় দিতে নারাজ।
এ ব্যাপারে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী বলেন, যোগদানের পর ভেবেছিলাম ২/৪ দিনের মধ্যে ক্লাস শুরু করে দিতে পারবো, কিন্তু তা হয়নি। এখানে যে এতো জটিলতা সৃষ্টি হয়ে আছে তা আমার আগে জানা ছিল না। আমি আসার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সংকট সমাধানের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আলতাফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এই সংকট না হলে আমার ছেলে এতোদিনে কুয়েট থেকে পাশ করে বেরিয়ে চাকরি পেয়ে যেতো। কিন্তু যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। সংকট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
আরেক অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, এর আগে কখনও এতো দীর্ঘ সময় ধরে কুয়েটে অচলাবস্থা হয়নি। সংকট নিরসনে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।
প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়। ওই দিন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্চিত করে। ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েট কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করেছিল। ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এক ড ম ক ক শ ক ষকদ র উপ চ র য জন শ ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে মেয়ে ও জামাতার মারধরে বৃদ্ধ নিহত, আটক ১
বন্দরে পারিবারিক কলহের জেরে নাসির উদ্দিন দাদন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে মারধরে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ের জামাতা চঞ্চল মিয়া কে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে বন্দর উপজেলার দক্ষিণ কলাবাগ খালপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাসির উদ্দিন ওই এলাকার মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, অনেক বছর আগে প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নাসির উদ্দিন দাদন রমিজা বেগমকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার সময় আনোয়ারা নামে এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
সেই সঙ্গে দ্বিতীয় সংসারে পালিত কন্যা হিসেবে ঝিনুক বেড়ে উঠে। তবে সম্প্রতি নাসির উদ্দিন দাদনের সংসারের কর্তৃত্ব ছিল পালিত কন্যা ঝিনুকের কাছে।
এ নিয়ে আনোয়ারা ও তার জামাতার সাথে তাদের বিরোধ তৈরি হয়। সংসারে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এর জের ধরে আজ দুপুরে নাসির উদ্দিনের প্রথম সংসারের মেয়ে আনোয়ারা ও তার স্বামী চঞ্চল তাকে কিল-ঘুষি মারে।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে মেয়ের জামাতা চঞ্চল মিয়াকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
নিহতের পালিত কন্যা ঝিনুক বলেন, সোমবার বাড়ির পাশের সড়কে থুথু ফেলাকে কেন্দ্র করে তারা আমাকে গালিগালাজ করে ও হুমকি দেয়। এর জের ধরে আজ দুপুরে রেললাইন এলাকা দিয়ে রিকশা যোগে যাওয়ার সময় আমার বাবাকে মারধর করে আমার সৎ বোন ও তার জামাতা। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে মেয়ে ও মেয়ের জামাতা বৃদ্ধকে কিল ঘুষি মারে।
এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ের জামাতাকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।