ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বৃহৎ খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কো-অপ
Published: 20th, May 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ সুপারমার্কেট ব্র্যান্ড কো-অপ শিগগিরই ইসরায়েলের সব পণ্য বর্জন করে একটি নজির গড়তে পারে। যদি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তবে কো-অপ প্রথম কোনো ব্রিটিশ খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হবে, যারা ইসরায়েলি পণ্য সম্পূর্ণভাবে বর্জন করবে। এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগ।
গত শনিবার অনুষ্ঠিত কো-অপের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রস্তাবটি বিপুল সমর্থন পেয়ে গৃহীত হয়। ৭৩ শতাংশ ভোটার প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন। এতে বোর্ডকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে ‘নৈতিক সাহস ও নেতৃত্ব’ প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়। সদস্যদের ভাষায়, এটি গাজার ওপর ইসরায়েলের ‘ধ্বংসযজ্ঞ’-এর বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ।
প্রস্তাবটি বাধ্যতামূলক না হলেও কো-অপের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ নীতিমালা পর্যালোচনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সরবরাহ নীতিগুলো পর্যালোচনা করি, যাতে আমাদের মূল্যবোধ, নীতিমালা এবং সদস্যদের ইতিমধ্যে স্পষ্ট করা মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।’
গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ এ পর্যালোচনা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তখনই কো-অপ তাদের দোকান থেকে ইসরায়েলি পণ্য সরিয়ে ফেলতে পারে।
এ প্রস্তাবের পক্ষে কাজ করেছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) নামের একটি সংগঠন। ভোটের ফলাফলকে তারা ফিলিস্তিনের প্রতি যুক্তরাজ্যের ব্যাপক জনসমর্থনের প্রতিফলন হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটির মুখপাত্র লুইস ব্যাকন বলেন, ‘এই ভোট দেখিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার পক্ষে আছেন এবং তাঁরা ইসরায়েলের বর্ণবৈষম্যমূলক অর্থনীতিকে সমর্থন করতে চান না। কো-অপকে এখন তাদের সদস্যদের কথা শুনতে হবে এবং সব ইসরায়েলি পণ্য তুলে নিতে হবে।’
কো-অপ সব সময় নৈতিক অবস্থানের কারণে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য সুপারমার্কেট থেকে আলাদা। ২০০৭ সালে তারা প্রথম ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা হিসেবে দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে তৈরি পণ্য বর্জন করে। নতুন প্রস্তাবের পক্ষে থাকা সদস্যরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার পর কো-অপ রুশ পণ্য বিক্রিও বন্ধ করেছিল। তাই ইসরায়েল ইস্যুতেও একই ‘নৈতিকতা ও মূল্যবোধ’ অনুসরণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এমন এক সময়ে এ ভোট অনুষ্ঠিত হলো, যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় করপোরেট সহযোগিতা থাকার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। কো-অপ সদস্যরা যুক্তি দিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতিশ্রতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবটি পাস হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন ইউকে লইয়ার্স ফর ইসরায়েল নামের একটি বিতর্কিত আইনি সংগঠন এটিকে প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তারা কো-অপের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো’ এবং ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ তোলে। তবে কো-অপ তাদের সদস্যদের এ প্রস্তাবের ওপর ভোট দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল, যা তাদের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রমাণ।
যদিও এ ভোটের ফলে কো-অপের পরিচালনা পর্ষদ কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য নয়, তবু বহু সদস্য ও অধিকারকর্মীদের মতে, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না করলে কো-অপের মূল্যবোধভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি মারাত্মকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প রস ত ব সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’