‘৪৫ দিনের শিশুকেও পিতৃহীন করে দিল ওরা’
Published: 20th, May 2025 GMT
মাগুরা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে প্রতিবেশীর ছুরিকাঘাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শিপন শেখ (২৭) নামের এই ব্যক্তি।
আগের দিন রোববার রাতের ওই ঘটনায় শিপন শেখের ভাতিজা মো. হাসান ইসলাম (২২) ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন হাসান ইসলামের বাবা আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা নির্মাণশ্রমিক পাঞ্জু শেখ ও শিপন শেখের ভাই মিজান শেখ। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিবদমান দুটি পক্ষের বাড়ি পাশাপাশি। রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আলম মোল্লার ঘরে উঁকি দেওয়ার অভিযোগে রিপন শেখ নামের একজনকে আটক করেন ওই বাড়ির লোকজন। পরিবারের দাবি, রিপন মানসিকভাবে অসুস্থ। তুচ্ছ ঘটনায় তাঁকে ধরে একটি গাছে বেঁধে মারধর আলম মোল্লা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে রিপনকে উদ্ধার করতে যান তাঁর আপন দুই ভাই মিজান শেখ, শিপন শেখ, চাচাতো ভাই পাঞ্জু শেখ ও ভাতিজা হাসান ইসলাম। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আলম মোল্লার ছেলে আল আমিন মোল্লা (২৩) ঘর থেকে ছুরি এনে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হাসানসহ চারজনকে জখম করেন। তাঁদের মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক হাসান শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার হাসানের মরদেহ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসানের চাচা শিপন শেখের মৃত্যুর খবর আসে।
এক পক্ষ বাড়িছাড়া, অন্যদিকে কান্নার রোলবিবদমান দুটি পক্ষের বাড়ি পাশাপাশি। দুটি বাড়ির উঠান একই। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নিহত হাসান ইসলামের মা চম্পা বেগম স্বজনদের ধরে আহাজারি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘রাতের বেলা আমি ওর বাপকে কলাম তুমি যায়ে না। কিন্তু চাচাতো ভাইরে ধরে গাছে বান্দে বাড়োচ্ছে শুনে সে আর আমার ছেলে গেল। আমার ছেলেরে কোপানোর পর সে কচ্ছিল মা আমি মরে গেলাম রে। আমার ওড়না দিয়ে ছেলের রক্ত আটকানোর চেষ্টা করলাম; কিন্তু ছেলেটা আমার মারা গেল। আমার বুক খালি করে দিল।’
নিহত মো: হাসান ইসলাম ও শিপন শেখ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা ‘আইএস তহবিলে’ অর্থ পাঠাত
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি কর্মীদের একটি চক্র সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সেলগুলোকে’ অর্থ পাঠাত বলে দাবি করেছে দেশটির পুলিশ। মালয়েশিয়ার পুলিশ বলছে, চক্রটি ‘গেরাকান মিলিটান র্যাডিকাল বাংলাদেশ’ বা জিএমআরবি নামে পরিচিত। তারা হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো অ্যাপে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্র মতবাদ প্রচার করত।
মালয়েশিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। আটকরা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে বড় ধরনের হামলা চালায় আইএস। ওই হামলার পর শত শত সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করেছিল দেশটির পুলিশ। কয়েক বছর ধরে আঞ্চলিক পর্যায়ে অভিযান জোরালো হওয়ায় এ ধরনের গ্রেপ্তার কমেছে। মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিল্প, খামার ও নির্মাণ খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা খালিদ ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশিদের চক্রটি অন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্য থেকে সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তারা সামাজিক মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ‘উগ্রবাদী মতাদর্শ’ ছড়াচ্ছিল। তিনি বলেন, চক্রটি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘আইএসের জন্য’ অর্থ পাঠাত। মালয়েশিয়া পুলিশের বিশেষ শাখার সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগ অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা ঠিক কত অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা তদন্তাধীন। আমাদের ধারণা, সদস্য ফি ও চাঁদা থেকেই এ অর্থ এসেছে।’
পুলিশের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়া স্টার জানায়, জিএমআরবি নামে পরিচিত চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামকে সদস্য সংগ্রহ ও উগ্র মতবাদ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। খালিদ ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের ধারণা, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের সদস্য সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৫০০ রিঙ্গিত ফি দিতে হয়। তবে অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করে সদস্যদের ওপর।’
আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইএস সেলগুলোর সঙ্গে চক্রটির কোনো সংযোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশপ্রধান বলেন, আমরা অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে এ জঙ্গি নেটওয়ার্ক উন্মোচনে কাজ করছি। পুলিশ কর্মকর্তা খালিদ ইসমাইল জানান, আটকদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ১৬ জন এখনও পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, যাদের সংশ্লিষ্টতা কম, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সম্পৃক্ততা বেশি পাওয়া গেলে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৭ জুন ৩৬ বাংলাদেশিকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর প্রথম প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম। এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে আটক করেছে, আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়েছি তাদের কাছে। আশা করছি, দু-চার দিনের মধ্যে জানতে পারব যে বাস্তবে তাদের বিষয়টা কী।’ তিনি জানান, কয়েকজনের বিরুদ্ধে বোধহয় তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছে; তাদের আদালতে বিচার সম্পন্ন হবে। বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। স্বাভাবিকভাবে আমাদেরও চেকআপ করতে হবে। আসলে তাদের কতটুকু কী সম্পৃক্ততা আছে, কোন সংগঠনের সঙ্গে, সেটা আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে।
এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জঙ্গি সন্দেহে মালয়েশিয়ায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কী ধরনের তৎপরতার সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত ছিল, সেটি বের করবে গোয়েন্দারা। তবে কবে নাগাদ তাদের ফেরত পাঠানো হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ।