সোনারগাঁয়ে সুস্থ সমাজ গঠনে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা
Published: 20th, May 2025 GMT
সোনারগাঁয়ের রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে সোনারগাঁয়ে সুস্থ সমাজ গঠনে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকায় মাদক, কিশোর গ্যাং, দূর্নীতি, ধূমপান, পরিচ্ছন্নতার অভাব, নাগরিক অধিকার হরণ এবং নিরাপত্তাহীনতার অবক্ষয় রোধের জন্য মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০মে) সন্ধ্যায় উপজেলার সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্ট এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় “সামাজিক অবক্ষয় রোধে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা সভায় রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে অংশ নেয় বিসমিল্লাহ এনএম জুলফিকার ফাউন্ডেশন এবং পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি,বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন।
এ সময় সমস্যার গভীরতা ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বক্তারা বলেন, মাদকাসক্তি আজ কিশোর-যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান রোধে সমাজিক নজরদারি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, ধূমপানের প্রতি তরুণদের আকর্ষণ শুধু স্বাস্থ্য নয়, নৈতিকতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গণমাধ্যমকে ধূমপানবিরোধী প্রচারণায় আরও জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ সময় দুর্নীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকায় সাংবাদিকরা বলেন, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি রোধে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং জনমত গঠন একান্ত প্রয়োজন। তারা আরো বলেন, “সত্য প্রকাশে ভয় নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই সংবাদ মাধ্যমকে কাজ করতে সুযোগ তৈরির সহযোগিতা করতে হবে।”
পরিচ্ছন্নতা, অধিকার ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বলেন, পরিচ্ছন্নতা শুধু নগর সৌন্দর্য নয়, এটি নাগরিক সংস্কৃতির অংশ। শহর ও গ্রামের প্রতিটি মানুষকে নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সচেতন হতে হবে।
তারা আরও বলেন, নারীর নিরাপত্তা, শিশুর অধিকার, সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা ছাড়া কোনো সভ্য সমাজ গড়ে উঠা সম্ভব নয় ।
এ সময় রেনাসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা যদি এখনই এগিয়ে না আসি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম ভাবে সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকদের সমন্বয়ে আমরা একটি নিরাপদ, মানবিক ও নৈতিক সমাজ গড়তে পারব। ”
এ সময় রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের এর সভাপতি মোহাম্মদ আতাউর রহমান এর সভাপতিত্বে ও পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিসমিল্লাহ এন এম জুলফিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নাদিরা আক্তার নিরা, সোনারগাঁ টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ব্যাপারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ এর সভাপতি সরদার এম এ মঈন,সনমান্দী জনকল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদ, সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহজালাল, সামির সরকার, মোক্তার হোসেন, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মিজানুর রহমান, নাট্য পরিচালক আব্দুল মালেক ও আব্দুল হক সাহেব, সোনারগাঁও উপজেলা মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ শামীম মিয়া প্রমুখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ ম হ ম মদ স ন রগ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
হজ, কলেরা ও কোয়ারেন্টিন
হজ পবিত্র ধর্মীয় আচার হলেও ইতিহাসে এটি বারবার মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের হেজাজ অঞ্চল, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনায়, বিভিন্ন সময়ে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে কলেরা ছিল অন্যতম। এই মহামারিগুলো রোধে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মক্কায় মহামারি
মক্কায় মহামারির প্রথম লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে। ৯৬৮ সালে ‘আল-মাশরি’ নামক একটি মহামারি মক্কায় আঘাত হানে, যার ফলে অসংখ্য হজযাত্রী এবং তাঁদের বহনকারী উটের মৃত্যু হয়। এমনকি যাঁরা হজ পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁরাও অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান। এ ঘটনা মক্কার ইতিহাসে মহামারির প্রাথমিক প্রভাবের একটি উদাহরণ।
কলেরার প্রাদুর্ভাব
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে হজযাত্রা আরও সহজ ও ব্যাপক হয়। বাষ্পীয় জাহাজের প্রচলনের কারণে অধিক সংখ্যক হজযাত্রী স্বল্প সময়ে মক্কায় পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে এটি সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তারের সুযোগও তৈরি করে। এই সময়ে কলেরা বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়, এবং হেজাজ অঞ্চলও এর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল না।
কলেরা প্রথম ১৮১৭ সালে বাংলার যশোর অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেখা দেয় এবং দ্রুত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৩ সালের মধ্যে এটি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় মহামারি হিসেবে প্রভাব ফেলে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আরব উপদ্বীপে কলেরার প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৮২১ সালে। ১৮৩১ সালে মক্কায় এই রোগ প্রথম আঘাত হানে, যার ফলে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা অন্তত ২০ হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। এই মহামারি ভারতীয় হজযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় ছড়ায় এবং অভূতপূর্ব দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৮৪১, ১৮৪৭, ১৮৫১, ১৮৫৬-৫৭ ও ১৮৫৯ সালে কলেরা মক্কায় বহু হজযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয়।
আরও পড়ুনবদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন২০ জুলাই ২০২৩কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা
তৎকালীন ওসমানিয়া সাম্রাজ্য, যারা হেজাজ অঞ্চলের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ছিল, কলেরার বিস্তার রোধে ১৮৪০ সাল থেকে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রয়োগ শুরু করে। হেজাজের সীমান্ত এবং মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হতো।
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে কঠোর ছিল। এডেনে যাত্রাবিরতির পর, হজযাত্রীদের ইয়েমেনের উপকূলীয় কামারান দ্বীপে কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে নামানো হতো। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত হতে পারত। কোয়ারেন্টিন শেষে জাহাজ জেদ্দায় পৌঁছাত এবং পথে ইয়ালামলাম নামক স্থানে হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধতেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মিকাত (হজের নিয়ত ও ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক কলেরা সম্মেলন
কলেরা মহামারির বিশ্বব্যাপী বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে ১৮৬৬ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো একটি আন্তর্জাতিক স্যানিটারি কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা পরে ‘কলেরা কনফারেন্স’ নামে পরিচিত হয়। এই কনফারেন্সে ভারতীয় উপমহাদেশকে কলেরার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে আগত হজযাত্রীদের ওপর কঠোর স্বাস্থ্য নজরদারি ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলেরা মক্কায় ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হলেও ওসমানীয় সালতানাতের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশের হজযাত্রীদের মাধ্যমে কলেরার বিস্তার হলেও কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫