অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত একটি সংস্কারও করতে পারেনি: মান্না
Published: 21st, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে ৯ মাসে একটি সংস্কারও করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
আজ বুধবার দুপুরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের ‘ফ্যাসিবাদ, গণ–অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও সংবিধান বিতর্ক’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই সভা শুরু হয়। সভার আয়োজক ‘কালের দাবি প্রকাশনা’।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ হলো নির্বাচনের, সংস্কারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু একটা সংস্কারও এই সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।
মান্না বলেন, ‘ড.
স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাইবার সিস্টেমের কর্তৃত্ব বিদেশিদের কাছে চলে যাচ্ছে কি না অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বর্তমানে দেশে বিদেশি পাসপোর্টধারী কতজন আছেন, সেই হিসাব পাওয়া মুশকিল বলে উল্লেখ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ওই রকম একজন মানুষ, যিনি বাংলাদেশে এর আগে কখনো সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ছিলেন না, তাঁকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন আবার শুনছি সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার আর্মির ওপর কন্ট্রোল নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করছেন। জানি না। তবে এগুলো মানুষের মধ্যে গুজব বা সংশয় তৈরি করছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার তার এজেন্ডার বাইরে গিয়ে অনেক কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে উচ্চ আদালতের রায়ে একজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। একই উচ্চ আদালতের রায়ে বিএনপির ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কিন্তু সেটি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রিট করা হয়েছে। তার মানে আইন কি একেক শহর বা ব্যক্তির জন্য একেক রকম?
মিয়ানমারে করিডর বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে সরকারের খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, এটি নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কতটা সাহায্য বা বিপদজনক করে তুলবে, সেটির বাস্তব বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না বলেও মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার বিষয়ে মাহবুব উল্লাহ বলেন, আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাইরের এজেন্সিকে দিয়ে কিছু কাজ করানো অযৌক্তিক কিছু নয়। সে জন্য পুরোনো মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আরেক সদস্য আকবর খান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, লেখক অনিন্দ্য আরিফ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কবি মোহন রায়হান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুন নুর।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫