একটি সময় ছিল, যখন সুপারম্যান মানেই ছিল ভরসা। লাল-নীল কেপ, বুকের মাঝে ‘S’ চিহ্ন। এমন একজন, যিনি শুধু দুষ্টের দমন করেননি, বরং মনুষ্যত্বও রক্ষা করতেন। সময় বদলেছে। আজকের দর্শক আর শুধু আকাশে উড়তে পারা নায়কের গল্প শুনতে চায় না। তারা চায় জটিলতা, বাস্তবতার ছায়া এবং নায়কের ভেতরের মানুষের গল্প। ঠিক এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক জেমস গান। তিনি সুপারম্যানকে ফিরিয়েছেন, তবে এবার ভিন্ন এক রূপে। এক নতুন ধরনের সংকট, সংশয় ও সংবেদনশীলতার আবরণে।

এবারের সুপারম্যান সিনেমার শুরুতেই দেখা যাবে ক্লার্ক কেন্ট যেন আগের সেই অপরাজেয় মানুষটি আর নেই। আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরেছে। বিশ্ব তাকে আর আগের মতো দেখে না। এক সময়কার ‘সুপারম্যান’ এখন নিজের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন করে– ‘আমি কি আদৌ কারও জন্য অপরিহার্য?’ এই প্রশ্ন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতিগত, এমনকি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। নির্মাতা জেমস গান এখানে সুপারম্যানকে এক ‘আলটিমেট ইমিগ্র্যান্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। একজন ভিনগ্রহবাসী, যে পৃথিবীতে এসে খুঁজে ফিরছে তার স্থান, ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা। তার ক্ষমতার যেমন সীমা আছে, তেমনি আছে ক্লান্তি, যন্ত্রণা ও দ্বন্দ্বও।

সুপারম্যানের জীবনে লুইস লেন বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এবার লুইস লেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন র‍্যাচেল ব্রোসনাহান, যিনি চরিত্রটিকে দিয়েছেন এক আধুনিক, বাস্তব রূপ। তিনি শুধু প্রেমিকা নন, বরং ক্লার্কের এক নৈতিক আয়না; যার সামনে দাঁড়িয়ে ক্লার্ক নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব ও সত্য দেখতে পান। তাদের সম্পর্কেও নেই কোনো অতিনাটকীয়তা। ঝগড়া আছে, বোঝাপড়ার অভাবও আছে, আবার আছে দায়িত্ব ভাগাভাগির ইচ্ছাও। 

এবারের সিনেমায় ভিলেন হিসেবে নিকোলাস হল্টের লেক্স লুথর একেবারেই নতুন ধাঁচের। তিনি সেই চিরচেনা পাগল বিজ্ঞানী নন। এখন তিনি করপোরেট বিশ্বের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের খেলোয়াড়। তাঁর প্রশ্ন, ‘একজন ভিনগ্রহবাসীকে আমরা কতটা বিশ্বাস করতে পারি?’ এই এক প্রশ্নের মধ্য দিয়ে জেমস গান টেনে এনেছেন অভিবাসন-রাজনীতি, জাতীয়তাবাদ এবং বিশ্বাস-সংকটের জটিল বিষয়গুলো।

সুপারম্যান সিনেমার একটি উল্লেখযোগ্য প্লট কাল্পনিক বরাভিয়া দেশের জারহানপুর আক্রমণ এবং তাতে সুপারম্যানের হস্তক্ষেপ। যদিও সুপারম্যান জানান, তিনি শুধু প্রাণ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন, তবু এতে তিনি পড়ে যান আন্তর্জাতিক বিতর্কে। বরাভিয়ার পাশে থাকা লেক্স লুথর ও তাঁর করপোরেট সংস্থার অস্ত্র জোগান। সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে নিখুঁত এক ভূরাজনৈতিক থ্রিলার। বরাভিয়ার পক্ষের ‘হ্যামার অব বরাভিয়া’ নামের এক সুপারহিরোও উপস্থিত হন। তাঁর চরিত্র ডিসির রুশ সুপারহিরো ‘রকেট রেড’-এর অনুরূপ, যদিও পরিচালক সরাসরি কিছু উল্লেখ করেননি।

জেমস গান তাঁর নিজস্ব রসবোধ থেকে সরে আসেননি। সুপারম্যানের পোষা কুকুর ‘ক্রিপ্টো’ হয়ে উঠেছে সিনেমার অপ্রত্যাশিত নায়ক। শিশুর জন্য আনন্দ, বড়দের জন্য দার্শনিকতা। এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রাখতে চেয়েছেন তিনি। কিছু দৃশ্য আছে, যেখানে ক্লার্ক কেন্ট একা বসে আছে, চারপাশে যুদ্ধ চলছে, হাতে কফির কাপ, মুখে প্রশ্ন ‘আমি কি সত্যিই মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?’ 

সিনেমার প্রোডাকশন ডিজাইন একদিকে রেট্রো, অন্যদিকে আধুনিক। বিশাল গ্লোব, ব্যস্ত নিউজরুম, নিউজপ্রিন্টের গন্ধ–সবই ঐতিহ্য রক্ষা করে। আবার অন্যদিকে আজকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুগের সঙ্গে তাল মেলানো সেট ডিজাইন ও দ্রুত কাট-টু-কাট সম্পাদনা রয়েছে। সিনেমায় ব্রাইট কালার, ফিউচারিস্টিক সেটের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।

ডেভিড কোরেনসওয়েটের সুপারম্যান চরিত্রটি একাধারে কোমল, নিরীহ এবং বিপ্লবী। তাঁর চোখে সবসময় একটি ‘সাধারণ হয়ে ওঠার লড়াই’ স্পষ্ট। র‍্যাচেল ব্রসনাহান অভিনীত লুইস লেন দৃঢ় ও আবেগপ্রবণ। তবে কিছু দর্শকের মতে, নিকোলাস হল্ট লেক্স লুথর চরিত্রে সেই ভয়ংকর শক্তি পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেননি।

উল্লেখযোগ্য একটি চরিত্র মিস্টার টেরিফিক; যার ভূমিকায় এডি গাথেগি দীর্ঘদিনের টেলিভিশন পার্শ্ব চরিত্র থেকে এবার মূল চরিত্রে দেখা মিলছে। তৃতীয় অঙ্কে সিনেমাটি কিছুটা বেশি ভিএফএক্স-নির্ভর। ‘সুপারম্যান’ (২০২৫) কেবল একটি সুপারহিরো মুভি নয়–এটি একজন দেবতার মতো শক্তিশালী অথচ একাকী, দুঃখী মানুষটির আত্ম-অনুসন্ধানের গল্প। পরিচালক জেমস গান সুপারম্যানকে এমন এক রূপে ফিরিয়েছেন, যিনি আর কেবল আকাশে উড়ে বেড়ানো একজন রক্ষক নন, বরং একজন যিনি মানুষের মতো ভালোবাসেন, কাঁদেন, ভেঙে পড়েন এবং আবার উঠে দাঁড়ান। এই সিনেমা প্রমাণ করে–একজন নায়ক হতে হলে শুধু ‘শত্রু ধ্বংস’ করাই যথেষ্ট নয়, দরকার নিজেকে বোঝা, ভুল স্বীকার করা এবং সংকটকে আলিঙ্গন করা। সে কারণেই এই সুপারম্যান আমাদের আরও আপন, আরও মানবিক, আরও বাস্তব। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর ভ য় চর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির