সংক্রামক যৌনরোগ গনোরিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডে। তবে এখনই সবাইকে এই টিকা দেওয়া হবে না।

প্রাথমিকভাবে টিকার মূল লক্ষ্য সমকামী ও উভকামী পুরুষ, যাঁদের একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা অথবা যৌনরোগে ভোগার (এসটিআই) ইতিহাস রয়েছে।

গনোরিয়ার টিকা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কার্যকর। তবে ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) আশা করছে, এই টিকাদান কর্মসূচি দেশটিতে গনোরিয়া সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা থামাতে সাহায্য করবে।

২০২৩ সালে ইংল্যান্ডে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ গনোরিয়ায় সংক্রমিত হন। ১৯১৮ সাল থেকে হিসাব রাখা শুরু হওয়ার পর এটাই বার্ষিক সংক্রমণের সবচেয়ে উঁচু হার।

গনোরিয়ায় সংক্রমিত হলে সব সময় শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে কখনো কখনো শরীরে ব্যথা, অস্বাভাবিক স্রাব, যৌনাঙ্গে প্রদাহ এবং বন্ধ্যত্বের মতো উপসর্গ হতে পারে।

কত মানুষকে গনোরিয়ার টিকা দেওয়া হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি এই টিকাটি জনপ্রিয়তা পায়, তাহলে এটি আগামী এক দশকে ১ লাখ গনোরিয়া সংক্রমণ রোধ করতে পারবে এবং এতে এনএইচএসের প্রায় ৮০ লাখ পাউন্ড সাশ্রয় হতে পারে।

যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালান ম্যাক্স। তিনি বিবিসি নিউজবিটকে বলেন, তিনি এক বছরের মধ্যে দুবার গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি এই টিকা শতভাগ নেবেন।

গনোরিয়ার টিকা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কার্যকর। তবে এনএইচএস ইংল্যান্ড আশা করছে, এই টিকাদান কর্মসূচি দেশটিতে গনোরিয়া সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা থামাতে সাহায্য করবে। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ গনোরিয়ায় সংক্রমিত হয়েছেন।

ম্যাক্স আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি সত্যিই দারুণ কিছু। এটি ক্লিনিকগুলোর চাপ অনেকটা কমিয়ে দেবে—সব দিক থেকেই এটি একটা বড় অর্জন।’

আগামী আগস্ট মাস থেকে ইংল্যান্ডে গনোরিয়ার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। যৌনস্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এই টিকা দেওয়া হবে।

স্কটল্যান্ডের স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ পাবলিক হেলথ স্কটল্যান্ড বলেছে, তারাও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নিজেদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।

টিকা কি যথেষ্ট কার্যকর

ইংল্যান্ডে যে টিকা দেওয়া হবে, সেটি আসলে গনোরিয়ার সংক্রমণ আটকাতে তৈরি হয়নি। এটি মেনিনজাইটিস বি টিকা, যেটি বর্তমানে শিশুদের দেওয়া হয়।

তবে যে ব্যাকটেরিয়া এই দুই রোগের জন্য দায়ী, সেগুলো খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এ কারণে মেনিনজাইটিস-বি টিকা গনোরিয়ার সংক্রমণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যেহেতু এই টিকা গনোরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি পুরোপুরি দূর করতে পারবে না, তাই যৌনস্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে এই বিষয়ে সংবেদনশীলভাবে রোগীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন হবে। সাধারণত কনডম ব্যবহার না করে যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে গনোরিয়া সংক্রমণ ছড়ায়।

‘আমি মনে করি, এটি সত্যিই দারুণ কিছু। এটি ক্লিনিকগুলোর চাপ অনেকটা কমিয়ে দেবে—সব দিক থেকেই এটি একটি বড় অর্জন।’ম্যাক্স, যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা প্রচারকর্মী

তবে টিকা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া যৌথ কমিটি জেসিভিআইয়ের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, ‘এটি মাত্র ৩০ শতাংশ কার্যকর হলেও টিকা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং এই টিকা সামগ্রিকভাবে বড় প্রভাব ফেলবে।’

রেকর্ডসংখ্যক মানুষ গনোরিয়ায় সংক্রমিত হয়েছেন শুধু এ কারণে টিকাদান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং এই রোগের চিকিৎসা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুনগনোরিয়াকে অবহেলা নয়১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাত্র একবার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে গনোরিয়ার চিকিৎসা করা হয়।

কিন্তু এই রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলার দীর্ঘ ৮০ বছরের ইতিহাস রয়েছে।

বর্তমানে গনোরিয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কিছু চিকিৎসক এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভয়, একদিন হয়তো গনোরিয়া নিরাময়-অযোগ্য রোগে পরিণত হতে পারে।

যে টিকাটি দেওয়া হবে, সেটি আসলে গনোরিয়ার সংক্রমণ আটকাতে তৈরি হয়নি। এটি মেনিনজাইটিস-বি টিকা, যেটি বর্তমানে শিশুদের দেওয়া হয়। তবে যে ব্যাকটেরিয়া এই দুই রোগের জন্য দায়ী, সেগুলো খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এ কারণে মেনিনজাইটিস-বি টিকা গনোরিয়ার সংক্রমণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যেকোনো ওষুধপ্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ মোকাবিলার সর্বোত্তম উপায় হলো—সংক্রমণ এড়ানো, যেন ওষুধের প্রয়োজনই না পড়ে।

এনএইচএস ইংল্যান্ডের পক্ষে ড.

আমান্ডা ডয়েল বলেন, ‘গনোরিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বে প্রথম নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির সূচনা যৌনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি। এটি অনেক মানুষের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করবে এবং ক্রমবর্ধমান হারে অ্যান্টিবায়োটিকপ্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিকাশ প্রতিরোধে সহায়ক হবে।’

‘এটি মাত্র ৩০ শতাংশ কার্যকর হলেও টিকা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং এই টিকা সামগ্রিকভাবে বড় প্রভাব ফেলবে।’অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (জেসিভিআই) চেয়ারম্যান

যুক্তরাজ্যে গনোরিয়া সংক্রমিত ব্যক্তিদের বড় অংশ ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী, সমকামী ও উভয়কামী পুরুষ এবং আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত।

গনোরিয়ার টিকার প্রতি ডোজের দাম প্রায় ৮ পাউন্ড। পুরো কিশোর জনগোষ্ঠীকে এই টিকা দেওয়ার চেয়ে প্রাথমিকভাবে মূলত সমকামী ও উভকামী পুরুষদের টিকা দেওয়াটা সাশ্রয়ী ও যৌক্তিক বলে ভাবা হচ্ছে।

আরও পড়ুনযৌনবাহিত রোগ বাড়ছে অস্ট্রেলিয়ায়০৬ নভেম্বর ২০১৭

তবে এ বিষয়ে চিকিৎসকদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা যৌনস্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে যাঁদের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করবেন, তাঁদেরও এই টিকা দিতে পারেন।

লোকজনকে একই সঙ্গে এমপক্স (আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত), এইচপিভি এবং হেপাটাইটিসের টিকাও দেওয়া হবে।

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সেক্সুয়াল হেলথ অ্যান্ড এইচআইভির সভাপতি অধ্যাপক ম্যাট ফিলিপস বলেন, ‘এটি দারুণ খবর এবং ইংল্যান্ডে যৌনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। রোগীর সংখ্যা হিসাব রাখা শুরু হওয়ার পর গনোরিয়ার রোগনির্ণয়ের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই প্রবণতা পাল্টে ফেলতে এই টিকা আমাদের সহায়তা করতে পারে।’

এই টিকার সুরক্ষা শরীরে কত দিন থাকবে অথবা কতবার বুস্টার ডোজ নিতে হতে পারে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এই টিকার সুরক্ষা কত দিন থাকবে অথবা কতবার বুস্টার ডোজ নিতে হতে পারে, তা এখনো জানা যায়নি।

যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জেসিভিআই) টিকাদান কর্মসূচির সুপারিশ করার প্রায় দেড় বছর পর এ সিদ্ধান্ত এসেছে।

এই দীর্ঘ অপেক্ষার সমালোচনা করেছেন যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা। তবে শেষ পর্যন্ত একটি সিদ্ধান্তের ঘোষণাকে তাঁরা স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি বড় বিজয়।

আরও পড়ুনরোগ সারাতে পারছে না অনেক অ্যান্টিবায়োটিক০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক র যকর এই ট ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুকে ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর গুজব, যা বলছে পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন ধরে ঢাকার মহাখালীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন লালনসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন। শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় শুরুতে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাঁকে এখনো আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার রাত থেকে খবর ছড়িয়েছে, ফরিদা পারভীন মারা গেছেন। ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষ তাঁর ছবি পোস্ট করে মৃত্যুর খবর ছড়াচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বিব্রত শিল্পীর পরিবার।
শিল্পীর স্বামী যন্ত্রসংগীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ভুয়া খবর। আমরা আছি অসুস্থ মানুষটাকে নিয়ে চিন্তার মধ্যে। কোথায় সবাই দোয়া করবেন, সেখানে হুট করে কে বা কারা ছড়িয়েছে মৃত্যুর খবর! মানুষের এসব কোন ধরনের মানসিকতা!’

মঞ্চে শিল্পী ফরিদা পারভীন

সম্পর্কিত নিবন্ধ