গড়বড়ে ব্যাটিংয়ের পর বিবর্ণ বোলিং, ম্যাচের সঙ্গে সিরিজেও হার বাংলাদেশের
Published: 22nd, May 2025 GMT
আগের তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়েছেন রিশাদ হোসেন, নিয়েছেন ১ উইকেটও। ইনিংসের ১৬তম ওভারে এলেন নিজের চতুর্থ ওভার করতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তখনো ৫৩ রান দরকার। ব্যাটসম্যান আলিশান শরাফু প্রথম বলটাই পাঠালেন লং অফের দিকে, ক্যাচ হতে হতেও তানজিদ হাসানের সামনে দিয়ে বল বাউন্ডারির বাইরে।
অনেকক্ষণ চুপসে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডাগআউট এই এক ছক্কায় মুহূর্তেই চনমনে হয়ে উঠল। যেটুকু সংশয় ছিল, কেটে গেল তা নিমেষেই। আর সেই উজ্জীবনী শক্তির সৌজন্যেই কি না, রিশাদের ওই ওভারেই আরও দুটি ছক্কা মেরে বসলেন আসিফ খান। ম্যাচটা বাংলাদেশের নাগাল থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে গেল পাঁচ বলের মধ্যেই! শারজায় শেষ পর্যন্ত লিটন দাসের দলের ৯ উইকেটে ১৬২ রান সংযুক্ত আরব আমিরাত টপকে গেছে ৫ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই।
এই জয়ে স্বাগতিক আমিরাত বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতল ২–১ ব্যবধানে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের কাছে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ। যে সিরিজটি বাংলাদেশ খেলতেই নেমেছে পাকিস্তানের সিরিজের যাত্রাপথ কাজে লাগাতে। দুই ম্যাচের সিরিজ তিন ম্যাচের হয়েছে পাকিস্তান সিরিজ পিছিয়ে যাওয়ায় আমিরাতে বাড়তি সময়টা কাজে লাগাতে। কাল রাতে সেই বাড়তি ম্যাচেই সিরিজ হার নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ ম্যাচে পেছনে পড়ে গিয়েছিল নিজেদের ইনিংসেই। টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর বেশির ভাগ সময়ই বাংলাদেশের ব্যাটিং রীতিমতো কাঁপাকাঁপি করেছে। তানজিদ হাসানের প্রথম ওভারে এক চার ও এক ছক্কার ভালো শুরু মলিন হতে শুরু করে পরের ওভারের প্রথম বলে পারভেজ হোসেনের বিদায়ে। প্রথম টি–টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি আর দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে বিশ্রামে থাকা এই ওপেনার নিজের খেলা প্রথম বলই তুলে মারতে গিয়ে লং অফে সহজ ক্যাচ দেন। সে–ই শুরু। তানজিদকে এক প্রান্তে রেখে হায়দার আলীর বাঁহাতি স্পিনে তিন বলের মধ্যে ফেরেন লিটন দাস (১০ বলে ১৪ রান) ও তাওহিদ হৃদয় (২ বলে ০)।
পাওয়ার প্লের শেষ বলে একই বোলারের শিকার আগেভাগে নামার সুযোগ পাওয়া মেহেদী হাসানও (৯ বলে ২)। এক প্রান্তে উইকেট–মিছিল চললেও আরেক প্রান্তে চার–ছক্কায় রান তুলে যাচ্ছিলেন তানজিদ। আগের ম্যাচে ৫৯ রানের ইনিংস খেলা এই বাঁহাতির দমও অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৪ চার আর ৪ ছক্কায় ১৭ বলে ৪০ রান তুলে ফেলা তানজিদকে ফিরতে হয় আকিফ রাজার ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে। ৭ ওভারের মধ্যে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন বড় বিপর্যয়ে। বিপদ আরও ঘনীভূত হয় ১১তম ওভারে মতিউল্লাহর চার বলের মধ্যে শামীম হোসেন (১২ বলে ৯) আর রিশাদ হোসেনও (২ বলে ০) বিদায় নিলে। এক প্রান্তে থাকা জাকের আলীকে সঙ্গ দিতে পারেননি তানজিম হাসানও (১২ বলে ৬)।
১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৮৪। এক শর কমে অলআউটের শঙ্কা তো বটেই, উঁকি দিচ্ছিল নন–টেস্ট প্লেয়িং দেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার বিব্রতকর লজ্জাও। এমন বেকায়দা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই হাসানকে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন জাকের। নবম উইকেটে দুজন যোগ করেন ২৬ বলে ৪৪ রান, যার মধ্যে ১৬ বলে ৩২–ই জাকেরের। ৩৪ বলে ৪১ রান তোলা জাকের যখন উনিশতম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন, দলের রান ৯ উইকেটে ১২৮। পরের ১০ বলের মধ্যে হাসান আর শরীফুল মিলে যোগ করেন ৩৪। শুধু শেষ ওভার থেকেই আসে ২৬ রান। হাসান মারেন দুটি ছয়, শরীফুল ১টি করে চার–ছয়।
এক শর নিচে আটকে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা বাংলাদেশ দল জাকের আর লেজের দুই ব্যাটসম্যানের সৌজন্যে শেষ ছয় ওভারেই তোলে ৭৮ রান, শেষ ৪ ওভারে ৬৪। শেষ পর্যন্ত এই রানও পারেনি বাংলাদেশকে বাঁচাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬২/৯ (জাকের ৪১, তানজিদ ৪০, হাসান ২৬*, শরীফুল ১৬*; হায়দার ৩/৭, সগীর ২/৩৬)। সংযুক্ত আরব আমিরাত: ১৯.১ ওভারে ১৬৬/৩ (আলিশান ৬৮*, আসিফ ৪১*, জোহাইন ২৯, শরীফুল ১/২৪, রিশাদ ১/৩২)। ফল: সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: সংযুক্ত আরব আমিরাত ২–১ ব্যবধানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আলিশান শরাফু। ম্যান অব দ্য সিরিজ: মুহাম্মদ ওয়াসিম।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গিলের কীর্তিতে ভারতের দিন, বেকায়দায় ইংল্যান্ড
এজবাস্টন টেস্ট ভারতের জন্য হয়ে আছে এক দুঃস্বপ্নের নাম। মনসুর আলী খান পতৌদি থেকে কপিল দেব, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি কিংবা বিরাট কোহলি থেকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ যশপ্রীত বুমরা—কারও নেতৃত্বেই এজবাস্টন জয় করা সম্ভব হয়নি।
তবে ভারতের নতুন অধিনায়ক শুবমান গিল বোধ হয় তাঁদের ব্যর্থতা ঢেকে দেওয়ার লক্ষ্যেই খেলতে নামছেন। এজবাস্টন–জুজু কাটিয়ে ওঠার দায়িত্বটা তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। গতকাল ম্যাচের প্রথম দিনে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকা গিল আজ আউট হয়েছেন ২৬৯ রান করে। তাঁর এই মহাকাব্যিক ইনিংসে হয়েছে একগাদা রেকর্ড।
টেস্টে এটিই ভারতের কোনো অধিনায়কের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ, ইংল্যান্ডের মাটিতেও কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। এশিয়া মহাদেশের বাইরেও এটি দেশটির কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস। গিলের এমন কীর্তির দিনে স্বাভাবিকভাবেই দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে ভারত। সফরকারীরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৫৮৭ রানের পাহাড় গড়ে।
ভারতের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজ ভালোভাবে করলেও যশপ্রীত বুমরাহীন বোলিং আক্রমণ কেমন করে, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। মোহাম্মদ সিরাজ আর অনভিজ্ঞ আকাশ দীপ অনেকের ভুল ভেঙে দিয়েছেন। দুই পেসার ২৫ রানের মধ্যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ইংল্যান্ডকে বেকায়দায় ফেলেছেন। স্বাগতিকেরা দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৭৭ রান তুলে।
প্রথম ইনিংসে ভারতের চেয়ে এখনো ৫১০ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড, ফলো অন এড়াতে দরকার আরও ৩১১ রান। এরপরও ফলো অনের ‘শঙ্কা’ বলা যাচ্ছে না কারণ, শুরুর বিপর্যয়ের পর অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার জো রুটকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে গেছেন আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুক। চতুর্থ উইকেটে দুজন ৫২ রানের জুটি গড়ে দিনের শেষ ভাগ পার করে দিয়েছেন। আগামীকাল তৃতীয় দিন নিশ্চয় জুটিটাকে আরও বড় করতে চাইবেন তাঁরা।
হেডিংলিতে প্রথম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রানের ব্যবধানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন ভারতের মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। সেই দলটিই এজবাস্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট হারানোর পর যোগ করেছে আরও ৩৭৬ রান, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এতে গিলের পাশাপাশি অবদান দুই স্পিন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা আর ওয়াশিংটন সুন্দরের। ব্যাটসম্যানদের গড়া বিশাল সংগ্রহ থেকেই হয়তো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন বোলাররা।
আগামীকাল তাঁরা ইংল্যান্ডের বাকি ৭ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে বড় লিড এনে দিতে পারেন কি না, আপাতত সেটাই দেখার অপেক্ষা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত ১ম ইনিংস: ১৫১ ওভারে ৫৮৭ অলআউট (গিল ২৬৯, জাদেজা ৮৯, জয়সোয়াল ৮৭, সুন্দর ৪২; বশির ৩/১৬৭, ওকস ২/৮১, টাং ২/১১৯)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৭৭/৩ (ব্রুক ৩০*, ক্রলি ১৯, রুট ১৮*, পোপ ০, ডাকেট ০; আকাশ ২/৩৬, সিরাজ ১/২১)।
* দ্বিতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ড ৫১০ রানে পিছিয়ে।