তুলনামূলক বাড়তি দামেও টিসিবির লাইনে ভিড় কমেনি, রাজশাহীতে বিক্রি শুরু
Published: 22nd, May 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজশাহী নগরে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরের ১০টি ওয়ার্ডে পৃথক ট্রাকে করে ৩ ধরনের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। গত ঈদের তুলনায় এবার প্রতি কেজি সয়াবিন তেলে ৩৫ টাকা, মসুর ডালে ২০ টাকা, চিনিতে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার।
তবে পণ্যের দাম বাড়লেও লাইনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কেউ কেউ কয়েকবার পণ্য নিতে পারলেও অনেকের ভাগ্যেই পণ্য জোটেনি। টিসিবির লাইনে এই অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়। আগামী ১০ দিন নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে এসব পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা আছে।
টিসিবির রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ট্রাক থেকে তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে ১টি প্যাকেজে ৩টি পণ্য মোট ৫১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২৭০ টাকা, ২ কেজি মসুর ডালের দাম ১৬০ টাকা এবং ১ কেজি চিনির দাম ৮৫ টাকা। গত রমজানের ঈদে সয়াবিন তেল ১০০ টাকা লিটার, মসুর ডাল ৬০ টাকা কেজি এবং চিনি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার এসব পণ্যের দাম অনেকটা বেড়েছে। আগামী ৩ জুন পর্যন্ত শুক্র, শনিবারসহ এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।
আজ নগরের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় দিনব্যাপী পণ্যগুলো বিক্রি করা হয়। নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহমখদুম দরগার সামনে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টায়। ওই এলাকায় পণ্য নেওয়ার জন্য লোকজনকে হুড়োহুড়ি করতে দেখা গেছে। অনেকে একাধিকবার লাইনে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করেন। জায়গাটিতে নারীদের লাইনে ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। ডিলার হজরত আলী নিজেই ট্রাক থেকে নেমে লাইন ঠিক করছিলেন। পরে আবার টাকা নিয়ে পণ্যও হাতে তুলে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, পণ্যের দাম বেড়েছে, তবে মানুষ কমেনি।
ওই এলাকায় এক ঘণ্টা ধরে পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মজিবুর রহমান। তিনিও জানান, গতবারের তুলনায় এবার পণ্যের দাম বেড়েছে। তবুও এই বাজারের তুলনায় কম, তাই লাইনে ভিড় বেশি।
নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজীব চত্বরে পণ্য পাওয়ার জন্য রীতিমতো লাইনে ধাক্কাধাক্কি ও ঝগড়া পর্যন্ত বেঁধে যাচ্ছিল। এই জায়গায় কয়েকজন নারী একাধিকবার পণ্য নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। ডিলার নারীদের উদ্দেশে বারবার বলেন, তিনি দুবার পণ্য দেবেন না। বারবার তিনি উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি পণ্য বিক্রি করে চলে যান। তবে সেখান থেকে পণ্য না পেয়ে কয়েকজন নারী ফিরে যান।
জোছনা বেগম বেলা ১১টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বেলা একটার দিকে হঠাৎ লাইনে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে তিনি লাইন থেকে ছিটকে পড়েন। পরে তিনি আর লাইনে ঢুকতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে ডিলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তাঁকে পণ্য দেওয়া হয়।
টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে উন্মুক্ত ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ দিন এটি অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৪০০ জন পণ্য কিনতে পারবেন। একজন যেন একবারই পণ্য নিতে পারেন, সে জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে।
পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সব জায়গায় দাম বেড়েছে। পণ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে হয়তো সরকারও দাম বাড়িয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সমবায় খাতকে আধুনিক ও গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, সঞ্চয় ও ঋণদান এবং কুটিরশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
আরো পড়ুন:
মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
শনিবার (১ নভেম্বর) ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারো ১ নভেম্বর, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি সকল সমবায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “দেশ ও জনগণের উন্নয়নে গৃহীত যেকোনো কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত অপরিহার্য। সমবায়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ কাজ আমরা অনায়াসে করতে পারি। সমবায় সমিতিগুলো শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয় বরং সমাজের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় আন্দোলনের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম।”
তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, সমবায়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য ও সমতায় আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি নতুন বাংলাদেশ।”
প্রধান উপদেষ্টা ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। খবর বাসসের।
ঢাকা/সাইফ