সংস্কারবিরোধী দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংস্কার অধ্যাদেশ বাতিল, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন সহকারী একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সরকার সম্প্রতি একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের উদ্যোগ নেয়। এতে প্রশাসন ক্যাডারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব ব্যবস্থা চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আরো পড়ুন:

‘বিভাজনমূলক’ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ উপদেষ্টা মাহফুজের

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ৫ সিদ্ধান্ত

স্মারক লিপিতে বলা হয়, ‘দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব আহরণের প্রাণভোমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির অধ্যাদেশটি অত্যন্ত গোপনে, অতি দ্রুততার সঙ্গে এবং প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে অজ্ঞাত রেখে জারি করা হয়েছে। উক্ত অধ্যাদেশে জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা প্রভাবশালী মহলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্য ও পেশাগত স্বকীয়তাকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল কাঠামো বিনষ্ট করে রাজস্ব আহরণের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রমটি বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অযাচিত হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, গত ২০ মে অর্থ উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর ১৩ জন প্রতিনিধি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেয়। আমাদেরকে উক্ত আলোচনা সভায় নিজেদের মতামত ও উদ্বেগ প্রকাশ এবং তার সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে বলে সভার আগে আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। অনাকাঙ্খিত স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া এবং সেই মতামত অর্থ উপদেষ্টা আমলে না নেওয়ায় দুঃখজনক হলেও জানাতে হচ্ছে যে, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।’

এতে বলা হয়, ‘এই নতুন বাংলাদেশ তরুণদের আকাঙ্ক্ষার ওপর দাঁড়িয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বরাবরই তরুণদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা অনুরোধ করছি, তারই প্রতিফলন হিসেবে রাজস্ব সংস্কার নিয়ে এনবিআরের এই তরুণ অফিসারদের আকাঙ্ক্ষার কথা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে আমাদের স্বপ্নের কথা শুনেন।’

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ‘জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে আমরা আশা করি, আপনি দেশ, জনগণ ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম, বাস্তব জ্ঞাননির্ভর, দক্ষ ও কার্যকর একটি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সদ্য জারিকৃত অধ্যাদেশটি বাতিলসহ আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিবেন।’

আরো বলা হয়, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, আপনি এনবিআরের ইতিবাচক ও টেকসই সংস্কারের লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ নিশ্চিত করবেন এবং এই প্রক্রিয়ায় কর, কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও অবদানকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তাদের হৃত পেশাগত সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন।’

স্মারকলিপিতে সবশেষ বলা হয়, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-আপনার নেতৃত্বে দেশ একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উপযুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক রাজস্ব ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবে।’

আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে স্মারকলিপি পৌঁছে দেন অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস) হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, উপ কর কমিশন শিহাবুল ইসলাম কুশল, কর পরিদর্শক মুতাসিম বিল্লাহ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মো.

শফিউল বসর।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট স ম রকল প উপদ ষ ট র কর মকর ত আম দ র স ম রক

এছাড়াও পড়ুন:

জি এম কাদেরের আদেশ মানবেন না বিরোধীরা

জি এম কাদেরের আদেশ মানবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের বিরোধীরা। দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মুজিবুল হক চুন্নু একযোগে বলেছেন– তারা এখনও স্বপদে বহাল। 
এই তিন নেতা বলেছেন, মহাসচিব পদে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ অবৈধ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই তিন নেতা। আনিসুল ইসলাম বলেন, গত নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির আড়াই কোটি টাকার হিসাব জি এম কাদের দেননি। দলীয় তহবিলে আসা চাঁদা এবং অনুদানের হিসাবও দেননি। হিসাব চাওয়ায় গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 
গত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নেওয়া জাপা গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পায় আগেই। অভ্যুত্থানের নেতারা এখন দলটিকে স্বৈরাচারের দোসর বলছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চাপে রয়েছে জাপা। নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের পর সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, মহাসচিব মুজিবুল হককে সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জি এম কাদের। 

আনিসুল ইসলাম বলেছেন, প্রেসিডিয়ামের যে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা বলে জি এম কাদের মহাসচিবকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তা অবৈধ। কোরামও পূরণ হয়নি। গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে মহাসচিব প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান এবং আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করবেন। মহাসচিব চুন্নুর অজ্ঞাতে তথাকথিত সভা হয়েছে। গত মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র বা কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্মেলন হবে। চেয়ারম্যান পদে আনিসুল ইসলাম এবং মহাসচিব পদে রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থিতার ঘোষণা দেন। জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের কাছ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা পাওয়া জি এম কাদেরকে সরাতে তৎপর হন জ্যেষ্ঠ নেতারা। 
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মসূচি থাকায় চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না– এ কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেন জি এম কাদের। কিন্তু ২৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি ছিল না। ক্ষুব্ধ আনিস ও হাওলাদার ২৮ জুনেই কাকরাইলে সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। এটি ঠেকাতে জি এম কাদের একই স্থানে একই দিনে সমাবেশের ডাক দেন। পরে দুই পক্ষই পিছিয়ে যায়। 
গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, জাপা চেয়ারম্যান দলের যে কাউকে যে কোনো সময়ে বহিষ্কার করতে পারেন, পদও দিতে পারেন। এ ধারা বাতিলের দাবি তুলেছিলেন চুন্নু। আনিসুল ইসলাম বলেছেন, যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই জাপার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু জি এম কাদের মৃত্যুপথযাত্রী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে জোর করে সই নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। 

গত বছর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জি এম কাদেরকে ছেড়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জি এম কাদের একে একে সবাইকে বের করে দিয়েছেন। 
আক্ষেপ করে চুন্নু বলেন, ‘এমন কী অপরাধ করলাম– প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দিলেন! মহাসচিব থেকে অব্যাহতি নিয়ে আপত্তি নেই। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জাপায় আছি। 
আনিসুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর কাউকে বাদ দেওয়া, পদ দেওয়ার ক্ষমতা নেই চেয়ারম্যানের। ফলে চুন্নুই মহাসচিব পদে রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীমের নিয়োগ অবৈধ। 
সংবাদ সম্মেলনে রওশনের নেতৃত্বাধীন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও ছিলেন। ছিলেন প্রেসিডিয়ামের সাবেক ও বর্তমান সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রত্না, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা প্রমুখ। এ ছাড়া ছিলেন জাপার ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পদে থাকা নেতারা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ