স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭ বছর ধরে পুলিশের দখলে
Published: 23rd, May 2025 GMT
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কার্যালয় দখল করে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ৭ বছর ধরে পরিবার পরিকল্পনা সেবা মিলছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো সমাধান আসছে না।
ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের কাটখাল বাজারে কাটখাল ইউনিয়নে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চারতলা ভবনে ৭ বছর ধরে চলছে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র।
স্থানীয় বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, এমনিতেই হাওর এলাকার মানুষ কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা সেভাবে পান না। তার ওপর এখানকার মানুষ অনেক অসচেতন। এ রকম একটি এলাকায় পরিবার কল্যাণকেন্দ্র তৈরি হয়েও চালু না হওয়ায় প্রজননসংক্রান্ত জ্ঞান ও সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
বিল্লাল মিয়া নামে একজন বলেন, ‘বাড়ির কাছেই একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়েছে। সেটি দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় এলাকার মানুষকে কয়েক মাইল পাড়ি দিয়ে মিঠামইন সদরে অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে গিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।’
কাটখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম রাজনৈতিক মামলার কারণে আত্মগোপনে। পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার কল করলেও তাঁর ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল মিয়া জানিয়েছেন, এ ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যে পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি রয়েছে, সেটি প্রায় ৭ বছর ধরে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোনো কর্মী নেই, কোনো সেবাও দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর ভাষ্য, গণপূর্ত বিভাগ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের জন্য নতুন একটি তিনতলা ভবন করেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সমস্যার কারণে সেটি এখনও চালু হয়নি। পয়ঃনিষ্কাশন লাইনটি যেহেতু বাইরে নিতে হবে, সেই কারণে গণপূর্ত বিভাগ সেটি করতে পারছে না। তবে কর্তৃপক্ষ তহবিল দিলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সেটি করে দেওয়া যাবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মিঠামইন থানার ওসি আলমগীর কবীরের সঙ্গে। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন তিনি। ওই এলাকায় পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের জন্য গণপূর্ত বিভাগ একটি তিনতলা ভবন করে দিয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে তদন্তকেন্দ্র স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে প্রশ্ন করলে বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছিল। মূল ভবন এলাকায় জলাবদ্ধতাসহ কোনো সমস্যা থাকলে তা সংস্কার ও সেটি গণপূর্ত বিভাগ করে দিতে পারে। পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পয়ঃনিষ্কাশনের লাইনটি অন্যের জায়গার ওপর দিয়ে নিতে হবে। এজন্য গণপূর্তের কাছে আলাদা কোনো তহবিল বরাদ্দ নেই। ইউনিয়ন পরিষদ যেহেতু পরিষেবা বিল নেয়, ফলে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের।
ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়ে কথা হয় কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তিনি এ জেলায় যোগদান করেছেন গত ৯ এপ্রিল। আগের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি লিখেছেন। তিনিও চিঠি লিখবেন।
তবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে জনবল সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ জেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৬০ শতাংশ পদই শূন্য। নিয়োগ পরীক্ষা হলেও মামলার কারণে নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। ২০১৪ সালে একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। মামলার কারণে নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। ২০২২ সালেও একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। এবারও মামলার কারণে নিয়োগ বন্ধ। তিনি জানান, ইউনিয়নের সংখ্যা অনুযায়ী একেকটি উপজেলায় ৮ থেকে ১০টি পরিবার কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কোনো কোনো কর্মীকে একাধিক কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এসব কারণে প্রত্যাশামতো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ গণপ র ত ব ভ গ প ল শ তদন ত এক ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
নজরুলের ‘দারিদ্র্য’
জন্মগতভাবে সর্বতোমুখী প্রতিভার অধিকারী কাজী নজরুল ইসলাম যাপিত জীবনে অর্জন করেছিলেন বৈচিত্র্যমুখী অভিজ্ঞান; যার অনেকখানিই আনকমন ও অনন্য। তাঁর কবিতায় ও সংগীতে সেই অনন্যতার ছাপ ফুটে উঠেছে সোনালি রঙের সচ্ছলতায়। তাঁর ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি যাপিত জীবন ও ব্যতিক্রমী শৈল্পিক সক্ষমতার উজ্জ্বলতর শিল্প হয়ে আছে। কবিতাটি তাঁর সুচারুতায় সমৃদ্ধ শিল্পের জমিনে ধারণ করেছে দারিদ্র্যের নিবিড়তম, গভীরতম ও সূক্ষ্মতম ছাপ। অর্থনীতিবিদরা বহুদিন যাবৎ দারিদ্র্যের নানাবিধ সংজ্ঞা প্রদান এবং সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ করে আসছেন। সেসব সংজ্ঞায় মূলত দারিদ্র্যকে খাদ্যগ্রহণের ক্যালরি এবং কতিপয় মৌলিক চাহিদা পূরণের-অপূরণের মাপকাঠিতে চেনানোর চেষ্টা আছে। নজরুল সেটাকে হিসাবে রেখে তার সঙ্গে দারিদ্র্যের আরও কিছু ডাইমেনশন যোগ করেছেন। কবিতার শুরুতেই তিনি বলেছেন যে, দারিদ্র্য মানুষকে সত্য কথা বলার দুঃসাহস জোগায়, দান করে অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস। দারিদ্র্যের প্রভাবে তাঁর মুখের কথা এবং লেখার বাণী ক্ষুরধার তরবারির মতো শানিত হয়ে ওঠে। দরিদ্র মানুষেরা নির্ভীকভাবে সত্য কথা উচ্চারণ করতে পারেন, তারা ন্যায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। তাদের কোনো পিছুটান থাকে না। কিন্তু যাদের ধনসম্পদ বেশি থাকে, তারা প্রতিষ্ঠানবিরোধী সংগ্রামে শরিক হতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কিংবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জমিদার নন্দন-ধনবান ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-জোতদাররা অংশগ্রহণ করেননি বলেই চলে। কারণ, তাদের ধনসম্পদ এবং আয়েশি জীবনের পিছুটান ছিল। কিন্তু ছাত্র-কৃষক-দিনমজুরের সেই পিছুটান ছিল না। তাই সেসব সংগ্রামে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপকভাবে বেশি। এভাবে দারিদ্র্য মানুষকে ব্যক্তিগত পিছুটান ফেলে মহত্তর ও বৃহত্তর কাজে শরিক হওয়ার প্রণোদনা দান করে, প্রেরণা জোগায়। নজরুল তাঁর ‘দারিদ্র্য’ কবিতার শুরুতেই তাই বলেছেন– ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।/ তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান/ কণ্টক-মুকুট শোভা!– দিয়াছ, তাপস,/ অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;/ উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি, বাণী ক্ষুরধার,’। এই প্রশংসার ভেতরেই দারিদ্র্যের নেতিবাচক দিক স্পষ্ট। ‘কণ্টক-মুকুট’ কিন্তু রাজার মুকুটের মতো পুষ্পশয্যার সুখ দেয় না, তার কাজ নিত্য যন্ত্রণাদান। আর বীণা যখন শাপে তরবারি হয়ে যায়, তখন যুদ্ধ করাই হয়ে ওঠে নির্মম নিয়তি। যাকে সারাজীবন যুদ্ধ করতে হয়, তার জীবন হয় আঘাতের ও রক্তপাতের, বিশ্রামহীনতার ও স্বস্তিহীনতার। সে জীবনে সুখ থাকে না।
প্রতিটি পিতামাতা চান তাদের সন্তান যেন দুধেভাতে থাকে কিন্তু দুধভাত সংগ্রহে রাখার সামর্থ্য গরিব মানুষের থাকে না। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। একজন অনাহারক্লিষ্ট অর্থাৎ দারিদ্র্যপীড়িত মা তাঁর দুধের শিশুকে বুকের দুধ দিতেও ব্যর্থ হন। কারণ, খাদ্যের অভাবে শীর্ণ-জীর্ণ শরীরে বুকের স্তনে মাতৃদুগ্ধ সঞ্চিত হয় না।