বাংলাদেশ সফররত তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান হালুক গরগুন মঙ্গলবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস এ তথ্য জানায়।

বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান হালুক গরগুন মঙ্গলবার সকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এই আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক্সে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোস্টে জানানো হয়েছে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান সেনা সদরে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। হালুক গরগুন বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। সেনাপ্রধান তুরস্কের সহযোগিতায় দেশে বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, হালুক গরগুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাঁরা পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদারে কারিগরি সহায়তা এবং প্রযুক্তি আদান-প্রদানসংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদলের এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে এবং দুই রাষ্ট্রের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স জন য স ক ষ সহয গ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যে অস্বস্তিকর যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তাতে ১২ দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার অবসান ঘটেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সংঘাতে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করেছেন। একুশ শতকের স্বল্প স্থায়ী একটি যুদ্ধ হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

ইরানও এই যুদ্ধে বিজয় দাবি করেছে। ১৯৮০-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে যেমন করে ইরান বিজয় দাবি করেছিল, এবারের ঘটনাটি অনেকটাই তার সঙ্গে মিলে যায়। সেই যুদ্ধ ছিল বিশ শতকের অন্যতম দীর্ঘ প্রথাগত যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনও বিজয় দাবি করেছিলেন।

দুটি ক্ষেত্রেই ইরান আক্রান্ত হয়েছে। ইরানের শাসকেরা দুটি সংঘাতকেই ‘আরোপিত যুদ্ধ’ বলে চিত্রিত করেছেন এবং দাবি করেছেন এই যুদ্ধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত’ ছিল।

দুটি ক্ষেত্রেই ইরান তাদের বিজয় ঘোষণার ক্ষেত্রে কৌশলগত ধৈর্য (সব্র-ই রাহবর্দি) প্রদর্শনের নীতি নিয়েছে। অর্থাৎ সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারসাম্যকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার নীতি অবলম্বন করেছে ইরান।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর, ইরান অপেক্ষা করে ছিল। সময় ও পরিস্থিতিকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরান নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রই ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সাদ্দামের গণবিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংস করেছিল। এরপর ২০০৩ সালে তাঁকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।

তেহরানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে আজকেও তারা সেই একই কৌশলগত ধৈর্যের নীতি প্রয়োগ করছে।

বর্তমান যুদ্ধবিরতিকে প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়েছে ইরান। কিন্তু দেশটির শাসকেরা বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামরিক মহল এটিকে একটি কৌশলগত যুদ্ধবিরতি হিসেবে দেখছেন। তাঁরা এটাকে টেকসই শান্তি হিসেবে দেখছেন না।

ইরানের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে এই যুদ্ধবিরতি একটি স্পষ্ট কৌশলগত উদ্দেশ্য বহন করছে।

এই কৌশলগত ঘাটতি পূরণে, ইরান এখন জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও সু-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের উদ্যোগ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান নেওয়ার বিষয়টিকেও ইরান এখন বিবেচনা করবে। কেননা, সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় চীনের যুদ্ধবিমান সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

ইরানের এই কৌশলগত ধৈর্যের নীতিতে সময়কে একটি সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরান এখন সময়কে পারমাণবিক কৌশল পুনর্মূল্যায়নের, আঞ্চলিক জোট সম্প্রসারণের এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের দৃঢ়তার সীমা পরীক্ষার উপায় হিসেবে গ্রহণ করবে।

এই সময়ে ইরানের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে আবার পর্যালোচনা করবেন। বিশেষ করে নৌবাহিনীর সক্ষমতা এবং সাইবার অপারেশনের সক্ষমতার মতো বিষয়গুলো তাঁরা আবারও মূল্যায়ন করবেন। আর এসব কিছুর লক্ষ্য হচ্ছে, একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করা।

সময়, তেহরানের সামনে তিনটি জায়গায় নতুন করে চিন্তাভাবনা করার গুরুত্বপূর্ণ ফুরসত এনে দিয়েছে। প্রথমত, নেতৃত্ব পুনর্গঠন; দ্বিতীয়ত, অস্ত্রভান্ডার পূর্ণ করা এবং তৃতীয়ত, একটি আন্তর্জাতিক পরিসরে কূটনৈতিক আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা।

১৯৮১ সালের জুন মাসে ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টির কার্যালয়ে বোমা হামলা করা হয়। এতে দলটির মহাসচিব মোহাম্মদ বেহেশতিসহ ৭৪ জন উচ্চপদস্থ কর্তা নিহত হন। ওই একই মাসে, ইরান ইরাক সীমান্তে এক লড়াইয়ে দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার মোস্তাফা চামরান নিহত হন।

১৯৮১ সালের আগস্ট মাসে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ-আলি রাজাই এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ-জাভাদ বাহোনার তেহরানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বোমা হামলায় নিহত হন।

এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল মুজাহিদিন-ই-খালক নামে সশস্ত্র গোষ্ঠী। বিরোধী এই গোষ্ঠী ইসলামিক রিপাবলিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছিল।

বোমাটি স্থাপন করেছিল মাসউদ কেশমিরি। তিনি ছিলেন মুজাহিদিন-ই-খালকের সদস্য। নিরাপত্তা কর্মকর্তার ছদ্মবেশে তিনি সরকারে অনুপ্রবেশ করেছিল। বিস্ফোরণে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় পুলিশের প্রধান, জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা এবং সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যসহ আটজন পদস্থ কর্তা নিহত হয়েছিলেন। যুদ্ধের শুরুর বছরে এটি ছিল ভয়ানক একটি নাশকতা।

এত বড় ক্ষয়ক্ষতির পরেও ইরান পাল্টা আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়েছিল। ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইরাকের সমস্ত সেনাকে বিতাড়িত করেছিল।

গত ১৩ জুন ভোররাতে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান শুরু করে।

এই হামলা শুধু পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না। ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল ইসরায়েল। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি, এবং অ্যারোস্পেস প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ। বেশ কয়েকজন পারমাণুবিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাকেও হত্যা করেছিল ইসরায়েল।

এরপরও ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে সক্ষম হয়। ইসরায়েলের বহুল প্রশংসিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে চরম চাপের মুখে ফেলে দেয়। এই যুদ্ধে ইরানের স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত কমেছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শান্তির এই নতুন পর্যায়ে, ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার পূর্ণ করা এবং আধুনিকায়নে অগ্রাধিকার দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ ও খাইবার শেকানের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের যেকোনো আকস্মিক হামলার আশঙ্কা মাথায় রেখে ইরান এখন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও জোরদার করবে।

সদ্যসমাপ্ত যুদ্ধ থেকে ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে, একটি আধুনিক যুদ্ধে একটি সক্ষম ও উন্নত বিমানবাহিনী ছাড়া বিজয় অর্জন সম্ভব নয়।

যদিও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনভিত্তিক প্রতিরোধব্যবস্থা কিছুটা কৌশলগত শক্তি দেখিয়েছে। কিন্তু এর বড় ধরনের দুর্বলতাও উন্মোচিত হয়েছে। আধুনিক বিমান ও বৈদ্যুতিন যুদ্ধের সক্ষমতা আছে, এমন শক্তির বিরুদ্ধে শুধু এই ব্যবস্থা সেভাবে কাজ করে না।

এই কৌশলগত ঘাটতি পূরণে, ইরান এখন জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও সু-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের উদ্যোগ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান নেওয়ার বিষয়টিকেও ইরান এখন বিবেচনা করবে। কেননা, সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় চীনের যুদ্ধবিমান সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

এ ছাড়া ইরানের সামরিকবিদেরা আরেকটি বড় ঘাটতিকে চিহ্নিত করেছেন। সেটা হলো, এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বা আকাশপথে কোনো আক্রমণ হলে আগেভাগেই সতর্ক করার প্রযুক্তি না থাকা।

সবচেয়ে উন্নত ভূমিভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সক্ষমতাও মারাত্মকভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম ছাড়া। এ কারণে তেহরান এখন চীন বা রাশিয়া থেকে এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম সংগ্রহে অগ্রাধিকার দেবে।

এর বাইরেও ইরান এখন কূটনৈতিক ও আইনি পাল্টা আক্রমণ শাসানোর ভূমি প্রস্তুত করবে।

মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

মোহাম্মদ ইসলামি, পর্তুগালের মিনহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক

ইব্রাহিম আল-মারাশি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মারকোসের মধ্যপ্রাচ্য ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তেহরানের অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকার শিক্ষা
  • ইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হচ্ছে