কক্সবাজারের হিমছড়িতে মঙ্গলবার সকালে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একেএম সাদমান রহমান সাবাব নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্য দু’জনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারা সবাই ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 

নিখোঁজ দু’জন হলেন আসিফ আহমেদ ও অরিত্র হাসান। তিনজনই শহীদ ফরহাদ হলের ৫০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের সঙ্গে ছিলেন মো.

রিয়াদ ও দেওয়ান ফারহান নামে আরও দুই বন্ধু। এ দুইজন সাগরে না নামায় বেঁচে গেছেন।

সাবাব রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকার বাসিন্দা কেএম আনিসুর রহমানের ছেলে। নিখোঁজ অরিত্র হাসানের বাড়ি বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামে। আসিফ আহমেদের বাড়ি বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণ এলাকায়। এ ঘটনায় চবি ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এদিকে সাবাবসহ তিনজনের পরিবারে চলছে আহাজারি। 

চবি প্রতিনিধি জানান, সাবাবসহ পাঁচজন বান্দরবান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে পাহাড়ে টানা বৃষ্টির কথা বিবেচনা করে সোমবার তারা কক্সবাজার যান। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী দেওয়ান ফারহান জানান, তাদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় সোমবার। এদিন রাত ৯টার দিকে তারা কক্সবাজার পৌঁছেন। হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম ভাঙে। তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। তারা সৈকতের দিকে যান। এক মাঝির ছাতার নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। বৃষ্টি কমলে সাবাব বলেন, তিনি ভিজে গেছেন, গোসল করবেন। তার সঙ্গে যান আসিফ। কিছুক্ষণ পর অরিত্রও গোসল করতে যান। তারা তিনজনই সাঁতার জানতেন না।

সৈকতে তখন ঢেউয়ের গতি বাড়ছিল। পাশে থাকা স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের বারবার সাবধান করে বলছিলেন– এই জায়গায় কিছুদিন আগে একজন মারা গেছে। ফারহান আরও জানান, তিনি ও রিয়াদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই তিনজনকে ডাকছিলেন পাড়ে ফিরে আসতে। তারা ডাক শুনলেও সাড়া দিচ্ছিলেন না। হঠাৎ বিশাল ঢেউ এসে তিনজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। চোখের সামনে হারিয়ে গেলেন তারা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সাবাবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি টিম কক্সবাজার গেছে। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।’

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, নিখোঁজ দু’জনকে উদ্ধারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও তল্লাশি অভিযান চলছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ডের কর্মীরা সৈকতে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জন বাঁধের ওপরে ছিলেন। তিনজন বাঁধের নিচে এসে গোসলে নামেন। এ সময় ঢেউয়ের তোড়ে সাগরে ভেসে যান তারা। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সমস্যা হচ্ছে। হিমছড়ি সৈকতে গোসল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখারও কেউ নেই। নিখোঁজ দু’জন গুপ্তখালে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রামু থানার ওসি মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ এলাকার ক্যাম্প-ইন-কক্স রিসোর্টে পাঁচ বন্ধু উঠেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাদমানের লাশ সৈকতে ভেসে আসে। 

সাগরে গোসলে নেমে গত মাসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য ২৬ জন লাইফগার্ড রয়েছেন। তবে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানীসহ বাকি ১১৫ কিলোমিটার সৈকতে গোসলে নেমে কেউ নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো কেউ নেই।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, একমাত্র ছেলে অরিত্র হাসান নিখোঁজ হওয়ায় তাঁর মা পাগলপ্রায়। অরিত্রর বাবা-মা দু’জনই কক্সবাজার রওনা দিয়েছেন। এদিকে আসিফের বাবা-মা কক্সবাজার গেছেন। বাড়িতে দুই পরিবারের স্বজনের মধ্যে আজাহারি চলছে। অরিত্রর বাবা আমিনুল ইসলাম বগুড়া ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। দু’বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকায় দ্য নিউ এজ পত্রিকায় এডিটোরিয়াল বিভাগে কর্মরত। অরিত্রর মা বগুড়ায় থাকেন। 

আসিফের মা কোরাইশা বেগম ২ বছর আগে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন। আসিফরা দুই ভাই। বড় ভাই আবির আশরাফ একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন।   আসিফের বাবা রফিকুল ইসলাম বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী কলেজের শিক্ষক।   


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় মেলা ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে শোকজ

খুলনায় একটি মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির দুই নেতার বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে।

ওই দুই নেতা হলেন খুলনা মহানগর কমিটির সদস্যসচিব জহুরুল ইসলাম ওরফে তানভীর ও মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম ওরফে আজাদ। গতকাল সোমবার রাতে সংগঠনের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁদের শোকজের বিষয়টি জানানো হয়।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামের সই করা শোকজপত্রে বলা হয়, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নীতিমালার পরিপন্থী কার্যকলাপে যুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা সংগঠনের ভাবমূর্তির জন্য হানিকর।’ একই সঙ্গে তাঁদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না এলে একতরফা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ‘মন্টু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর স্বত্বাধিকারী  পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে অভিযুক্ত সাজ্জাদুল ইসলামের কণ্ঠসদৃশ একজনের কথোপকথন শোনা যায়। প্রথম আলো ওই অডিও স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

অডিওতে মেলার আয়োজক মন্টু মিয়াকে আঞ্চলিক টানে বলতে শোনা যায়, ‘আমার দ্বারা সবাইকে কি ঠান্ডা করা সম্ভব? আমার কাছে দুই টাকা রেডি আছে, আপনি বললে এখনই দিয়ে যাব।’ জবাবে সাজ্জাদুলের কণ্ঠসদৃশ একজন বলেন, ‘আমি পারব সবাইকে ঠান্ডা করতে, এ টু জেড—সবাই ঠান্ডা থাকবে, কেউ তাকাবে না, যদি ১০ টাকা দেন। আর যদি না দেন, তাহলে আজ এ গ্রুপ যাবে, কাল অন্য গ্রুপ যাবে, আপনি কয়জনকে ঠান্ডা করবেন?’

রেকর্ডের আরও অংশে আর্থিক লেনদেনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মেলার আয়োজক মন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওটা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) মেলা ছিল। তারপরও আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিন লাখ দিয়ে তাঁদের ঠান্ডা করেছি।’

তবে অভিযুক্ত দুই নেতা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, খুলনায় মেলা ঘিরে তাঁদের বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে।

এ বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মেলার মালিকানা নিয়ে ভিন্ন দাবি। রাসেল মিয়া নামের এক ব্যক্তি, যিনি খুলনায় ‘মেলা রাসেল’ নামে পরিচিত, এক ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেন, ‘মেলার প্রকৃত মালিক আমি। মন্টু মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন পক্ষকে বিভ্রান্ত করেছে। কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি। যা ছড়ানো হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার।’ তিনি মালিকানার চুক্তিপত্রও দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা একটা ষড়যন্ত্র। বড় শক্তি আমার বিপক্ষে লেগেছে। আপস না করে টিকে আছি। মেলার প্রকৃত মালিক চুক্তিপত্র দেখিয়েছেন এবং তিনিও বলেছেন, আমরা এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।’

অন্যদিকে জহুরুল তানভীর বলেন, ‘ঘটনাটি অনেক আগের। আমাদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা কেন্দ্রীয় তদন্তেই প্রমাণিত হবে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বক্তব্য জানাব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না’, ট্রাম্পকে লুলার হুঁশিয়ারি
  • ঠিকাদার উধাও, থমকে গেছে হাই-টেক পার্ক নির্মাণকাজ
  • ওয়েবসাইটের তথ্য জালিয়াতি প্রতারণার ফাঁদে ৭০০ শিক্ষক
  • নবীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৫
  • সুইমিংপুলের পানি সরিয়ে তৈরি হলো অফিস
  • বৃদ্ধ দম্পতিকে কুপিয়ে ঘরে লুট, একজনের মৃত্যু
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি, সাগরে তল্লাশি চলছে
  • খুলনায় মেলা ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে শোকজ
  • মিলেমিশে দুই ইজারাদারের সরকারি বালু আত্মসাৎ