মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার পাঁচ বাংলাদেশিকে দেশটির দুটি কারাগারে রাখা হয়েছে। বুধবার ওই পাঁচ বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি জানায়, ওই পাঁচ বাংলাদেশিকে ‘কনস্যুলার সেবা’ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। দেশটির কারা কর্তৃপক্ষ কনস্যুলার সেবার অনুমতি দিয়েছে। হাইকমিশনের কর্মকর্তারা তাঁদের আইনি সহায়তা কিংবা অন্যান্য মৌলিক সহায়তার প্রয়োজন কি না, তা জানবেন। তাঁদের কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিলে মালয়েশিয়া পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার পাঁচজন বাংলাদেশির দুজন বর্তমানে দেশটির সেলাঙ্গর কারাগারে আর তিনজনকে জোহর বারু কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার পুলিশ পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলাঙ্গর ও জোহর অঞ্চলে গত ২৪ এপ্রিল থেকে তিন ধাপে এ অভিযান চালায়।

আরও পড়ুনজঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার২৭ জুন ২০২৫

গ্রেপ্তার ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে কারাবন্দী পাঁচজনকে সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জনকে মালয়েশিয়া থেকে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে। বাকি ১৬ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অধিকতর তদন্ত চলছে।

কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশের সন্ত্রাস দমন বিভাগের আলাদা আলাদা অভিযানে ৩৬ জন নয়, ৩৫ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন।

অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে ওই ১৪ জনকে হস্তান্তর করা হয় ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে। বাকিদের মধ্যে পাঁচজনকে সন্ত্রাসবাদের অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। আর ১৬ জনের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত চলছে বলে কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্র জানায়। ওই সূত্র জানায়, যে ১৪ জনকে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে ছয়জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

কুয়ালালামপুর হাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশের সন্ত্রাস দমন বিভাগ যখন এই অভিযান চালায়, সে সময় দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠান অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজন বাংলাদেশির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছিল। বিশেষ করে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কারও অতীতে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল কি না, তা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, নামের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কারও অতীতে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার কোনো অভিযোগ বাংলাদেশে ছিল না।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওই কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার অনানুষ্ঠানিক অনুরোধে সে সময় তাদের তথ্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু দেশটির পুলিশ যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কোনো অভিযান চালাচ্ছে, তা সে সময় হাইকমিশনকে জানানো হয়নি।

ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আটক ৩৫ জনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা চেয়ে শুরু থেকেই মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক টন ত ক দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় স্বামীর সহযোগিতায় তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৫

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্বামীর সহায়তায় এক তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানার পর ওই তরুণীর স্বামীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শনিবার বিকেলে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে তাঁদের চৌদ্দগ্রামের মিরশ্বানি এলাকা থেকে আটক করা হয়। আজ সকালে ওই তরুণী তাঁর স্বামীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ওই তরুণীর স্বামীর (২৬) বাড়ি নোয়াখালীতে। গ্রেপ্তার অপর চারজনও একই এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন বেলাল হোসেন (৩৫), হৃদয় (২৫), মহিন উদ্দিন (২৬) ও আবুল কালাম (৪৫)। তাঁরা সবাই ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই পারিবারিকভাবে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই বছর তিনি স্বামীর বাড়িতে ছিলেন। তবে স্বামীর মাদকাসক্তি ও অসদাচরণের কারণে ছয় মাস আগে তিনি বাবার বাড়ি ফিরে যান। পরে সালিসের মাধ্যমে প্রায় ১০ দিন আগে আবার স্বামীর বাড়িতে ফেরেন ওই তরুণী। ১৫ অক্টোবর তাঁকে শহরে রাখার কথা বলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি ইটভাটায় নিয় আসেন স্বামী। ওই দম্পতিকে থাকার ব্যবস্থা করেন আসামি বেলাল হোসেন। ১৬ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে বেলাল হোসেন ও আবুল কালামকে নিয়ে আসেন তাঁর স্বামী। এরপর স্বামীর সহায়তায় ওই দুজন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, এমন ঘটনারও পরও ভয় আর লজ্জায় চুপ ছিলেন তরুণী। ১৮ অক্টোবর মধ্যরাতে একইভাবে স্বামীর সহায়তায় হৃদয় ও মহিন উদ্দিন ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ ২০ অক্টোবর রাতে হৃদয় আবারও এসে ধর্ষণের চেষ্টা করলে চিৎকার করেন ওই তরুণী। ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করেন স্বামী এবং মুখ খুললে হত্যার হুমকি দেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার তরুণীকে উদ্ধার করেন তাঁর বাবা।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পেরে রাতেই অভিযান চালিয়ে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ সকালে থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিত তরুণী। পরে সেই মামলায় তাঁর স্বামীসহ পাঁচজনকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে ওসি বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নরসিংদীতে ঘুমন্ত স্ত্রী-সন্তানসহ ছয়জনের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন, গ্রেপ্তার ১
  • কুমিল্লায় স্বামীর সহযোগিতায় তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৫