‘কখনোই এমন কাউকে ভালোবাস না, যে তোমাকে সাধারণ মনে করে।’ 
–অস্কার ওয়াইল্ড
ভালোবাসা সব সম্পর্কের মহৌষধ হলেও সব ভালোবাসা বা সম্পর্ক নিরাপদ হয় না। কিছু ভালোবাসার গল্পে সুখের সন্ধান কেবলই কল্পনার দৃশ্যপটেই সীমাবদ্ধ থাকে।
ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি; যা প্রতিটি সম্পর্কে উদারতা, সহানুভূতি, কমনীয়তা, দায়িত্ববোধ, পারস্পরিক মেলবন্ধন ও অন্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কিন্তু কোনো সম্পর্কে ভালোবাসা যখন পারস্পরিক বোঝাপড়ার নামে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, সহানুভূতির পরিবর্তে অহংকার ও অবজ্ঞার জন্ম নেয়, সে সম্পর্ক তখন ধীরে ধীরে মধুরতা থেকে নীরব বিষে পরিণত হয়। 
যেভাবে চিনবেন সম্পর্কটি টক্সিক কিনা
ব্যক্তিভেদে সম্পর্কের ধরন ভিন্ন হয়, আবার সম্পর্কের সংজ্ঞাও একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে আপনার সঙ্গী যদি প্রতিনিয়ত আপনাকে ছোট করে কথা বলে, সবার সামনে অসম্মান করে, যে কোনো কাজে জবাবদিহিতা চায়, নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, সব সময় আপনাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে তাহলে সেই সম্পর্ককে টক্সিক বলা যায়।
বেরিয়ে আসার উপায়
সীমানা নির্ধারণ করুন: টক্সিক সম্পর্ক থেকে মানসিক প্রশান্তির প্রধান উপায় হলো সুস্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা এবং প্রয়োজনে সম্পর্ক থেকে সরে আসা। সম্পর্কে মাঝেমধ্যে খুঁটিনাটি ঝগড়া, মতভেদ বা অসন্তোষ দেখা দিতেই পারে, তা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যখন দেখবেন এমন সমস্যা প্রায়ই পুনরাবৃত্তি ঘটছে এবং প্রতিবারই মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তখন তা প্রশ্রয় দেওয়া বা নীরবে মেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নিজের মনকে শক্ত করুন এবং স্পষ্টভাবে সেসব ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিরত থাকুন। এটা শুধু ফোনকল, টেক্সট, ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ বন্ধ নয় বরং এটি সামগ্রিক বিচ্ছিন্নতাকে বোঝায়। 
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: একটি টক্সিক সম্পর্ক যদি টেনে নিয়ে যান ভবিষ্যতে হয়তো আপনাকে আরও কষ্ট দেবে; যা থেকে আপনি চাইলেও বের হয়ে আসতে পারবেন না। তাই আপনার দুঃখ, রাগ, অস্বস্তি বা বিভ্রান্তি যাই হোক না কেন তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
নিজেকে সময় দিন: নিজের অনুভূতিগুলোর যত্ন নিন। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিজের যত্নে আলাদা করে সময় বের করুন এবং সেই সময়ই আপনার ভালো লাগার কাজগুলো করুন। যেমন– ছবি আঁকা, গান শোনা, বই পড়া, টিভি শো বা সিনেমা দেখা, ভ্রমণ করা ইত্যাদি। 
সুস্থ নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: আপনার বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু, মা-বাবা, ভাইবোন বা কাছের কেউ, যে কিনা আপনাকে সমর্থন করে এবং আপনার খেয়াল রাখে, তাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন এবং তাদের সঙ্গে একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। নিজের অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করুন। তাহলে দেখবেন নিজের হতাশা এবং বিষণ্নতা অনেকটা কমে যাবে।
ইতিবাচক ভাবুন: টক্সিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরই অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকেই নিজের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন; যা একদমই করা উচিত হবে না, বরং সেখান থেকে বেরিয়ে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন হোন এবং নিজেকে প্রস্তুত করুন। 
টক্সিক মানুষের আচরণ প্রসঙ্গে সরকারি তিতুমীর কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড.

মোহা. সোলায়মান আলী বলেন, ‘টক্সিক মানুষের আচরণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তারা বেশিমাত্রায় স্বার্থপর হয় ও বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই তাদের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা মেইনটেইন করে চলতে হবে। সমঝোতামূলক আচরণ করতে হবে। যেহেতু তার সম্পর্কে আপনি জানেন তাই সে যে কোনো ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখালেও কাউন্টার প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কেউ আপনার সঙ্গে প্রায়ই এ ধরনের আচরণ করেন, সম্ভব হলে এমন ব্যক্তি থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত।’ 
তাঁর মতে, নিজের মানসিক শান্তির জন্য টক্সিক সম্পর্ক ছেড়ে দেওয়া দুর্বলতা নয়। ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমান, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন পড়াশোনায় বা সৃজনশীল কাজে, নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন, সুস্থ সম্পর্কের দিকেই মনোনিবেশ করুন অথবা প্রয়োজনে কাউন্সেলিং গ্রহণ করুন। v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আপন র আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এবং ইসরায়েল–সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ভিড় করা মানুষের ওপর নির্বিচার হামলার অভিযোগ বাড়ছে। সেখানে কয়েক সপ্তাহে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে জিএইচএফ। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় অন্তত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৮৯১ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জিএইচএফ ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সংস্থাটির কর্মীদের পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীও ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে।

এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন। তাঁদের আচরণে তেমনটাই মনে হয়েছে।

আল–জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংখ্যার বিষয়ে বলেন, মর্মান্তিক বিষয় হলো তাঁরা সবাই ত্রাণ নিতে ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন এবং খাবারের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষায় করছিলেন।

হানি মাহমুদ গাজা নগরী থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের অবরোধে সৃষ্ট চরম সংকটের মধ্যে যখন ফিলিস্তিনিরা পরিবারের সদস্যদের জন্য একটু খাবার সংগ্রহ করতে মরিয়া, ঠিক তখনই ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। হিসাব করে খাবার খাচ্ছে। অনেক পরিবারই খাবার খেতে পারছে না। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।’

এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন। তাঁদের আচরণে তেমনটাই মনে হয়েছে।

আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’মজিদ আবু লাবান, জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত ফিলিস্তিনি

জিএইচএফ এপির প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং বলেছে, তাদের কাছে নিজেদের কার্যক্রম স্থলগুলোর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জুনের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন জিএইচএফের জন্য ৩ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত হওয়া মজিদ আবু লাবান বলেন, ‘আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’

আরও পড়ুনআগামী সপ্তাহেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে: ট্রাম্প০৫ জুলাই ২০২৫গাজায় নিহত ২৭

গাজায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা নগরীর কাছের এলাকা তুফাতে হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল। দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগের দিন শনিবার ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল।

উত্তরে গাজা সিটির কাছের এলাকা শেখ রাদওয়ানে একটি বাড়িতে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বাস্তুহারা অনেক ফিলিস্তিনি ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত হামাস০৫ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইফোনে ভিডিও কল আরও নিরাপদ করতে অ্যাপলের নতুন উদ্যোগ
  • সাংবাদিক এহসান মাহমুদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের প্রতিবাদ ৩২ নাগরিকের
  • দায়িত্বশীল আচরণ করলে ভয় নেই, সীমা লঙ্ঘনকারীদের দেখা হবে ভিন্নভাবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
  • চুন্নু বৈধ মহাসচিব, শামীম পাটোয়ারি নিয়োগ গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন
  • ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
  • ট্রাম্প আর পাগলা তত্ত্ব
  • মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির