নির্বাচন কমিশন (ইসি) শুরু থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা এই আচরণ মেনে নেবে না। তারা ইসির পুনর্গঠন চায়। ইসিকে জবাবদিহিতে আনার জন্য স্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের কথাও বলেছেন দলটির নেতারা।

ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এনসিপি। এনসিপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী জোনের ব্যানারে এই সমাবেশে এনসিপির নেতারা এ কথা বলেন।

দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এস এম শাহরিয়ার বলেন, বর্তমান ইসি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় না। আরেক যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মুহাম্মদ মুরসালিন বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন বিএনপির পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কারা চায় না, এটা সবাই জানে। সরকার ঘোষিত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আর ২১ কার্যদিবস বাকি আছে। এর মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। ফ্যাসিবাদী আমলের বিতর্কিত আইনে গঠিত সেই ইসির পুনর্গঠন করতে হবে। ইসিকে জবাবদিহিতে আনার জন্য স্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হবে।

বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বাংলাদেশে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন আনতে চায়। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অচল করার পেছনে যে বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন, সেগুলো ঢেলে সাজাতে হবে।

আরও পড়ুনফেসবুকে উপদেষ্টা ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের পোস্ট৭ ঘণ্টা আগে

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাসের খান বলেন, বিএনপি গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে হটিয়ে নোংরা কায়দায় ক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে। বিএনপি সংস্কার শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশনারদের বসিয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেলকে বসিয়েছে। একইভাবে উচ্চ ও নিম্ন আদালত, আমলাতন্ত্রসহ অন্য সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজেদের লোক বসিয়েছে। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হলেও তেমন কোনো পরিস্থিতি এখন নেই। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর মধ্যেই ফেসবুকে ঐক্যের আহ্বান দেখা যায়।

দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এস এম শাহরিয়ার বলেন, বর্তমান ইসি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় না। আরেক যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মুহাম্মদ মুরসালিন বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন বিএনপির পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কারা চায় না, এটা সবাই জানে। সরকার ঘোষিত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আর ২১ কার্যদিবস বাকি আছে। এর মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির কদমতলী থানার প্রতিনিধি মো.

সাদিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার প্রতিনিধি লাকি আক্তার, মিরাসাদ হোসেন, ওয়ারী থানার প্রতিনিধি রিফাত খান, যাত্রাবাড়ী থানার প্রতিনিধি মো. রিয়াদ প্রমুখ।

ঐক্যের আহ্বান

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দাবি সামনে আনে এনসিপি। দুই পক্ষ পাঁচজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও সামনে আনে। এরই মধ্যে গতকাল বিকেল থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির ঐক্যের আহ্বান নিয়ে ফেসবুকে সরব হতে দেখা যায় এনসিপির নেতাদের।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, ‘আগেকার যেকোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল—সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সরকারে আর এক দিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই।’

এনসিপির উল্লেখযোগ্য নেতাদের কেউ কেউ মাহফুজ আলমের এই পোস্ট কপি ও শেয়ার করেন। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাদের অনেকেও মাহফুজের পোস্ট কপি ও শেয়ার করেন। সন্ধ্যার পর এনসিপি নেতারা ফেসবুকে ঐক্যের ডাক দিতে শুরু করেন। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।’ এ ছাড়া এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’ কবিতাটি পোস্ট করে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর মধ্যেই ফেসবুকে ঐক্যের আহ্বান দেখা যায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য গ ম ম খ য সমন বয়ক এনস প র উপদ ষ ট ফ সব ক র জন য ন বল ন ইসল ম ব এনপ সরক র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিলীন আরও ২০০ মিটার বাঁধ, হুমকির মুখে তিন গ্রাম

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ ধসের এক দিন পর শরীয়তপুরের জাজিরায় মঙ্গলবার ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পদ্মার প্রবল স্রোতে সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-সংলগ্ন রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, সোমবার বিকেলে শুরু হওয়া ভাঙনের স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ৯টি বসতবাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে মাঝিরঘাট বাজারসহ আশপাশের তিনটি গ্রাম। আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে অন্তত ২৫টি পরিবার। কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকেই তাদের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

ভাঙনের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মঙ্গলবার সকাল থেকেই জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার (ডাম্পিং) কাজ শুরু করে। তবে প্রবল স্রোত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত নভেম্বর ও চলতি বছরের জুনে ২ দফায় প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভাঙনের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পাউবো, জাজিরা উপজেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বরে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়। প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

এদিকে অবস্থার অবনতি ঠেকাতে সোমবারই পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ। তিনি বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জিও ব্যাগ ফেলা ও ব্লক বসানোর কাজ দ্রুত শুরু হবে।
আমরা দেখেছি, ভাঙনের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা নদী ভাঙনের মুখে পড়ি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। চোখের সামনে মাত্র এক
ঘণ্টায় ১০টি ঘর নদীতে চলে গেল। আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। সরকারের কোনো প্রতিনিধি নজর রাখে না। বর্ষার শুরুতে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো কোনো কাজেই আসেনি। শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস—বাস্তব ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক, না হলে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানো সুজন ফকির বলেন, ‘বাড়িতে দুপুরে খাবার খেতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনি—পদ্মা সব ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। এসে দেখি
নদীর ভেতরে আমার দোকানটি পড়ে আছে। সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। সর্বনাশা নদী প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার
সময়ও দিল না। এখন পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, বুঝতে পারছি না।’

বাড়ি হারানো খলিল মাদবর বলেন, ‘হঠাৎ করে পানিতে কিছু একটা ভেঙে পড়া শব্দ পাই। গিয়ে দেখি কয়েকটি দোকান ভেঙে নদীতে চলে গেছে।
এরপর ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। আধা ঘণ্টার মধ্যেই পদ্মা আমার বাড়ি কেড়ে নিল। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই রইলো না। গত বছর বাঁধ ভাঙার পর যদি দ্রুত মেরামত করা হতো, তাহলে হয়তো আজকের এই দুর্দিন দেখতে হতো না।’

স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, সাময়িক সহায়তার পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, প্রায় ১২-১৩ বছর আগে সেতু বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। বর্তমানে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়েছে। আমরা পাউবো এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় নদীর গভীরতা বেড়েছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে উজান ও ভাটি মিলিয়ে আনুমানিক ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে
জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। বাঁধ মজবুতকরণের জন্য একটি ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে আগামী বর্ষার আগে পুরোপুরি বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়।

গত বছরের নভেম্বরে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের তীর রক্ষা বাঁধে প্রায় ১০০ মিটার ভাঙন দেখা দেয়। পদ্মা সেতুর ১ হাজার ৭০০ মিটার পূর্বদিকে মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকায় সেই ভাঙন শুরু হয়।

পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মার ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। শুধু ২০১৮ সালেই ৫ হাজার ৫০০ পরিবার ঘরবাড়ি হারায়, হারিয়ে যায় নড়িয়ার পাঁচটি বাজার। হাসপাতাল ভবনও রেহাই পায়নি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ