কক্সবাজার-বান্দরবানের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা না থাকায় দেশটি থেকে মাদক, অস্ত্র ও চোরাই পণ্যের চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও ঘটছে অহরহ। এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে একদল শিক্ষার্থী। থার্মাল ক্যামেরার (তাপ সংবেদনশীল) সাহায্যে তারা স্মার্ট বর্ডার সিকিউরিটি সিস্টেমের প্রস্তাব করেছে।

খুদে এই বিজ্ঞানীরা কক্সবাজার সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের মতো জেলার ৪৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্প ঝুঁকি, পানি ও বিদ্যুৎ–সংকট নিরসনে প্রযুক্তিনির্ভর ৪৫টি উদ্ভাবনী প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় খুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন দেখে মুগ্ধ দর্শকেরা।

শহরের বায়তুশ শরফ জব্বাবিয়া একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাঙ্গণে গত বুধবার সকালে তিন দিনব্যাপী ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু হয়। উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইদুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা, বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এম এম সিরাজুল ইসলাম, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল ও কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবুর রহমান।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। টেকনাফ, উখিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার শহরসহ জেলার ৪৫টি স্কুল-কলেজ মেলাতে অংশ নেয়। মেলায় উপস্থাপন করা সব কটি প্রকল্প ছিল কক্সবাজারকেন্দ্রিক। আজ শুক্রবার দুপুরে এই মেলা শেষ হবে।

বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির পাঁচজন শিক্ষার্থী উপস্থাপন করছে ‘ভূগর্ভস্থ পানির সংকট ও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ প্রকল্প’। দলের নেতা রনভির দেবনাথ প্রথম আলোকে বলে, আগে কক্সবাজার শহরে ২০-৩০ ফুট নিচে নলকূপে সুপেয় পানি পাওয়া যেত, এখন ২০০-৩০০ ফুট নিচেও পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে ভূগর্ভস্থ পানির বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপায় বাতলে দিচ্ছে এই দলের খুদে বিজ্ঞানীরা।

সৌর ও জলশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস-জৈবসার উৎপাদন করে মানুষজনের সংকট নিরসনের প্রকল্প উপস্থাপন করেছে উখিয়া বহুমুখী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির চারজন শিক্ষার্থী। দলনেতা ফয়েজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কক্সবাজার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রতিবছর সৈকত ভ্রমণে আসেন ৫০-৬০ লাখ পর্যটক। বিদ্যুতের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন ৮০ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য উৎপাদন হলেও এসব ফেলার ডাম্পার নেই। অধিকাংশ বর্জ্য সাগরে পানিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করছে।

কক্সবাজার ডিসি কলেজের চার ছাত্রী নিয়ে আসে ‘স্বয়ংক্রিয় ও নিরাপদ যানবাহন প্রকল্প’। এ প্রকল্পের মাধ্যমে চালকবিহীন যানবাহন চালানো যায়। দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। অপেক্ষাকৃত কম খরচ ও জ্বালানিসাশ্রয়ী।

গতকাল দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রবীণ শিক্ষক এম এম সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। এর আগে তিনি প্রকল্পগুলো দেখে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলায় তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান শিক্ষার্থী আছে মাত্র ১ হাজার ৩০০ জনের মতো। ল্যাব-শিক্ষক সংকটের কারণে জেলায় বিজ্ঞান শিক্ষার্থী দিন দিন কমে যাচ্ছে। জেলার অর্ধেকের বেশি প্রায় ৭০০ বিজ্ঞান শিক্ষার্থী পড়ছে তাঁর এই প্রতিষ্ঠানে। এই বিজ্ঞান মেলা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিজ্ঞানচর্চা জরুরি। মেধার বিকাশ ঘটাতে বিজ্ঞানের বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের এই প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান মেলা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে আরো অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

ইউক্রেনের ওপর লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই নিয়ে কয়েকদিন আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এবার তিনি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। 

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক আক্রমণের প্রেক্ষিতে দেশটিকে আত্মরক্ষার সুযোগ দিতে নতুন করে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের জানান, “আমরা আরো কিছু অস্ত্র পাঠাতে যাচ্ছি। আমাদের এটা করতেই হবে। ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার সুযোগ দিতে হবে।”

কী কারণে এই সিদ্ধান্ত তাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “রাশিয়া এখন প্রচণ্ডভাবে ইউক্রেনকে আঘাত করছে। সেখানে এর ফলে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা ইউক্রেনে আরো কিছু অস্ত্র পাঠাতে চলেছি। এতে তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।”

আরো পড়ুন:

মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন

ইউক্রেনের লুহানস্ক পুরোপুরি দখলে নেওয়ার দাবি রাশিয়ার

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই হোয়াইট হাউজ ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মার্কিন অস্ত্রের চালান স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। তারা বলেছিল, অস্ত্র সরবরাহ কমলে রাশিয়ার আকাশ ও স্থল হামলা প্রতিহত করা কঠিন হবে। এই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতেও সমালোচনা হয়েছে।

সোমবার (৭ জুলাই) সেই হোয়াইট হাউজেই সাংবাদিকদের ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর কথা জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “ইউক্রেনে আমাদের আরো অস্ত্র পাঠাতে হবে। প্রাথমিকভাবে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র পাঠানো হবে।” তবে কী ধরনের অস্ত্র পাঠানো হবে তা জানাননি তিনি।

এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যেভাবে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে তাতে তিনি ‘অসন্তুষ্ট’।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের জন্য একাধিকবার পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবারও তাদের দুজনের মধ্যে ফোনে কথা হয়। তবে আলোচনা যে ফলপ্রসূ হয়নি তাও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, “পরিস্থিতি খুবই কঠিন। রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। তিনি কেবল মানুষ হত্যা চালিয়ে যেতে চাইছেন। তা কখনই ভালো বিষয় নয়।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে, ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সামরিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। কিন্তু ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার বিষয়ে সন্দিহান এবং তিনি প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করেননি। এই বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কিয়েভের জন্য কোনো নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেননি।

রাশিয়া গত কয়েক দিনে ইউক্রেনের একাধিক শহরে বড় আকারে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দাবিও জানান তিনি।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ