বেওয়ারিশ প্রাণী আমাদের পরিবেশের অদৃশ্য সৈনিক। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অংশ হিসেবে প্রাণীরা আমাদের পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্যে কিছু প্রাণী রয়েছে, মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখে। আবার কিছু প্রাণী আছে, আমাদের অবহেলার কারণে ‘বেওয়ারিশ’ হয়ে গেছে। এসব প্রাণী বিশেষত শহরাঞ্চলে, রাস্তার ধারে, পার্কে কিংবা বাসাবাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। তাদের জীবনের প্রতি দায়িত্ব ও সহানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অনেকের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।
এরা কখনোই নিজেদের জীবনধারণের জন্য অপরাধী নয়, বরং মানব সভ্যতার অবহেলার শিকার। এসব প্রাণীর অবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।
‘বেওয়ারিশ’ শব্দটি শুনলে অনেকেই ধারণা করি, এই প্রাণীরা কোনো অপরাধ করেছে অথবা তাদের কোনো অধিকার নেই। কিন্তু আমরা কি জানি, এসব বেওয়ারিশ প্রাণী একইভাবে জীবন ধারণের অধিকারী, ঠিক যেমন আমরা মানুষ হিসেবে অধিকারী? তাদের প্রতি আমাদের অবহেলা নয়; ভালোবাসা ও সহানুভূতির দাবি রয়েছে। 
বেওয়ারিশ প্রাণী বিশেষ করে কুকুর-বিড়াল আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। তাদের জীবনযাত্রার বাস্তবতা অনেক সময় আমাদের চোখে পড়ে না। এসব প্রাণী, যাদের কোনো নির্দিষ্ট মালিক নেই এবং যারা রাস্তা অথবা জনবহুল জায়গায় বসবাস করে, তাদের জীবন কাটে খাদ্যাভাব ও বিপদের মধ্যে।
বেওয়ারিশ প্রাণীরা সাধারণত মানুষের সাহায্য ছাড়াই জীবন যাপন করে। তারা নিজেরাই খাদ্য সংগ্রহ করে, ময়লা-আবর্জনা খেয়ে বাঁচে এবং নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক উদ্যোগের অভাব এসব প্রাণীর জীবনে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। এই প্রাণীদের সুরক্ষা ও সহায়তা জরুরি।
মানুষের মতো প্রাণীরাও প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে বেওয়ারিশ প্রাণীরা প্রায়ই অবহেলার শিকার হয়। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা কিংবা আশ্রয়ের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় নানা বিপদের সম্মুখীন হয়। মানবিকতা ও নৈতিকতার স্বার্থে বেওয়ারিশ প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া শুধু কোনো একক ব্যক্তি বা সংগঠনের নয়। বরং সরকার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই এ সমস্যার যথাযথ সমাধান সম্ভব।
বর্তমানে দেশে কিছু এনজিও এবং প্রাণিপ্রেমী ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেওয়ারিশ প্রাণীদের চিকিৎসা, খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছেন। দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই প্রয়াস অত্যন্ত অপ্রতুল। রাজধানী এবং বড় বড় শহরেও বেওয়ারিশ প্রাণীদের দুর্দশা চোখে পড়ার মতো। এমন বাস্তবতায় প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত ও টেকসই ব্যবস্থা, যাতে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে প্রাণীরাও সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়।
সরকারের উচিত বেওয়ারিশ প্রাণীদের সুরক্ষা ও সহায়তার লক্ষ্যে একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা। দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় বেওয়ারিশ প্রাণীদের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। 

nসেলিম রানা: গাজীপুর
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এসব প র ণ সহ ন ভ ত দ র জ বন র অবহ ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান প্রশ্নে রুল

নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধিত এমন বিধান প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশের ওই বিধান–সংবলিত ৯ অনুচ্ছেদ সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের (২৮, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ) সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না—রুলে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আইনসচিব, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নতুন ওই বিধান যুক্ত করে ৩ নভেম্বর আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। আগে কোনো রাজনৈতিক দল জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেত।

ওই বিধান–সংবলিত অধ্যাদেশের ৯ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। আজ রিটের ওপর শুনানি হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাহেদুল আজম। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জোট করলেও দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। বিএনপি মনে করে, জোটগত নির্বাচন করলেও নিজস্ব প্রতীকে ভোট করে ছোট দলগুলোর নেতাদের জয় সহজ হবে না। এর ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুফল পেয়ে যেতে পারে।

তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সংশোধনের পক্ষে। শেষ পর্যন্ত জোট করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে, শেষ পর্যন্ত এমন বিধান যুক্ত করেই ৩ নভেম্বর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

আরও পড়ুনজোটেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রেখে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি ০৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ