উত্তর কোরিয়া গত বৃহস্পতিবার একটি যুদ্ধজাহাজ উদ্বোধনের সময় দুর্ঘটনার দায়ে তিন শিপইয়ার্ড কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম আজ রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বিবিসির।

পাঁচ হাজার টনের যুদ্ধজাহাজটি গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সময়  সেটির তলদেশের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে, যার ফলে জাহাজটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন উপস্থিত ছিলেন। 

কিম এই ঘটনাকে ‘অপরাধমূলক কাজ’ বলে বর্ণনা করেন, যার তদন্ত চলছে।

আরো পড়ুন:

যুদ্ধজাহাজ দুর্ঘটনা উত্তর কোরিয়ার ‘মর্যাদা ও গর্ব’ নষ্ট করেছে: কিম

ইউক্রেন যুদ্ধে সেনা পাঠানোর কথা স্বীকার করল উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে উত্তর চংজিন শিপইয়ার্ডের প্রধান প্রকৌশলী রয়েছেন। ওই শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে নির্মাণ প্রধান এবং একজন প্রশাসনিক ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনজন ‘দুর্ঘটনার জন্য দায়ী’।

এর আগে গত শুক্রবার কেসিএনএ জানায়, শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপক হং কিল হোকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তলব করেছে।

স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, যুদ্ধজাহাজটি নীল টারপলিন দিয়ে ঢাকা অবস্থায় পড়ে আছে, জাহাজের একটি অংশ স্থলে রয়েছে।

কিম বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, “দুর্ঘটনাটি ‘সম্পূর্ণ অসাবধানতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অবৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতাবাদ’ এর কারণে সৃষ্ট।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার নেতা আরো বলেছিলেন, “এক মুহূর্তের মধ্যে আমাদের জাতির মর্যাদা এবং গর্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”

তিনি আরো যোগ করেন, যারা ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ভুল’ করেছেন তাদের আগামী মাসে অনুষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ সভায় মোকাবিলা করা হবে।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কী শাস্তি হতে পারে তা স্পষ্ট নয়। তবে উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকারের রেকর্ড খুবই খারাপ।

সামরিক দুর্ঘটনার তথ্য উত্তর কোরিয়া সাধারণত প্রকাশ করে না, যদিও তারা অতীতে কয়েকবার এটি করেছে।

বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি উত্তর কোরিয়া দেশের পশ্চিম উপকূলে একটি নতুন পাঁচ হাজার টনের যুদ্ধজাহাজ উন্মোচনের কয়েক সপ্তাহ পরে ঘটলো। দেশটির কর্মকর্তারা সেসময় জানিয়েছিলেন যে, এ ধরনের যুদ্ধজাহাজ ৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সজ্জিত।

কিম এই যুদ্ধজাহাজকে দেশের নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে একটি ‘অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এটি আগামী বছরের শুরুতে মোতায়েন করা হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন জ হ জট

এছাড়াও পড়ুন:

তিনি হিমালয়ে উঠেছেন সাইকেল নিয়ে

বরফের ওপর সাইকেল নিয়ে সন্তর্পণে এগোচ্ছেন। একটু হড়কে গেলেই অবধারিত মৃত্যু, গিরিখাত বেয়ে একেবারে নিচে। কখনো সাইকেল চালিয়ে, কখনো কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। এভারেস্ট অঞ্চলের কংমা লা পাস অতিক্রম করার সময় একটু ভয় ভয় লাগছিল। কারণ, এখানটায় এসে মৃত্যুর অনেক ঘটনা আছে। ট্রেইলটা বেশ কঠিন। ১০ কেজি ওজনের সাইকেল কাঁধে, আর ছয়–সাত কেজির ব্যাগ নিয়ে ওপরে উঠতে হচ্ছিল।

‘ভয়ের সঙ্গে আবার সুন্দর মুহূর্তও আছে। পাসগুলো থেকে নামার সময় ভালো লাগত। অপূর্ব সুন্দর সব দৃশ্য,’ বলছিলেন আরিফুর রহমান উজ্জল (৪১)। কুমিল্লার মানুষ, উজ্জল নামেই পরিচিত। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাইকেল নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন এভারেস্ট অঞ্চলসহ হিমালয়ের নানা ট্রেক। এসব ট্রেকে সাধারণত পর্বতারোহীরা পায়ে হেঁটে যান। উজ্জল গেছেন দ্বিচক্রযানে চেপে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সর্বশেষ কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রায় দুই মাসের অভিযান শেষ করে কাঠমান্ডুতে এসেছেন।

চ্যালেঞ্জিং এই অভিযানে ছিল কাদামাখা পাথুরে পথ, অতি উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা, ভূমিধস, বরফে ঢাকা পথ, গ্লেসিয়ার ও একদম খাড়া টানা একেকবার ৩–৪ কিলোমিটার রাস্তা। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে রাতে না ঘুমিয়ে পরদিন ট্রেক করতে হয়েছে। বরফ ও রৌদের তাপ, জ্বর, হাতে ফ্রস্টবাইট, পায়ে মাসাল ক্র্যাম্প, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁকে একেকটা পাস অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেক পর্বতারোহীর কাছে এটি স্রেফ পাগলামি। এই অভিযানে উজ্জলকে কখনো সাইকেল চালাতে হয়েছে, কখনো কাঁধে বইতে হয়েছে, কখনোবা ঠেলে উপরে তুলতে হয়েছে।

মানাসলু সার্কিট ট্রেইল

পর্বতারোহণ এমনিতেই কষ্টসাধ্য কাজ। নিজের শরীরটা ওপরে টেনে তোলাই যেখানে বিরাট চ্যালেঞ্জ, সেখানে উজ্জল সাইকেল নিয়ে এক অভিযানেই ঘুরেছেন এভারেস্টসহ হিমালয়ের তিনটি ট্রেইলে। তিনি ঘুরেছেন নেপালের মানাসলু ও অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেইল। নেপালের পশ্চিমের এই দুটি ট্রেইলে ঘোরা শেষ করে পাড়ি দিয়েছেন ৭০০ কিলোমিটার পূর্বে এভারেস্টের তিন পাসে। পাস তিনটি হচ্ছে কংমা লা পাস, চো লা পাস এবং রেঞ্জো লা পাস।

৭ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করেন এই সাইক্লিস্ট। তার আগে ঢাকা থেকে বিমানে করে গেছেন কাঠমান্ডু। শুরুতেই মানাসলু সার্কিট ট্রেইল। এটা গিরিপথ, রাস্তা। মানাসলু পর্বতকে ঘিরে যে রাস্তা সেটাকে সার্কিট বলে। এই মানাসলুর সর্বোচ্চ বিন্দু, যার উচ্চতা ১৭ হাজার ৩৯০ ফুট। সেখানে নিজের প্রিয় দ্বিচক্রযানটির চাকার ছাপ রেখে এসেছেন। ১৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্কিট ট্রেইলটি শেষ করতে তাঁর ১১ দিন লেগেছে।

রেঞ্জো লা পাস

সম্পর্কিত নিবন্ধ