জয়া আহসানের নামের পাশে লেখা আছে—গেরিলা, দেবী, জিরো ডিগ্রী থেকে তাণ্ডব, উৎসবের মতো সিনেমার নাম। শুধুতে ঢাকাই চলচ্চিত্রেই তিনি সরব তা কিন্তু নয় ওপার বাংলার বিসর্জন, বিজয়া, রাজকাহিনী, অর্ধাঙ্গিনী, ক্রিসক্রস, দশম অবতার-এর নায়িকা তিনি। বলছি জয়া আহসানের কথা। আজ তার জন্মদিন। শুভজন্মদিন জয়া আহসান।
উইকিপিডিয়ার তথ্য, ১৯৭২ সালের ১ লা জুলাই জন্মগ্রহন করেছেন জয়া আহসান। হিসাব অনুযায়ী ৫৩তে পৌঁছালেন নায়িকা। যদিও জন্মসাল নিয়ে দ্বিমত আছে। জয়া আহসান একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তার জন্ম ১৯৮৩ সালে।
মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু জয়ার। এরপর নাটক ও সিনেমায় কাজ করে প্রতিটি ধাপে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন তিনি। ঢালিউড থেকে টলিউড, সেখান থেকে বলিউডেও পৌঁছে গেছেন জয়া। বাংলাদেশেরই এই সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেত্রীও বলা হয় জয়া আহসানকে।
আরো পড়ুন:
‘নাটকটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব না’
বুবলীর যে গুণে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েছিলেন তাপস
গল্পনির্ভর সিনেমায় তিনি অসাধারণ আর বাণিজ্যিক সিনেমায় অনন্য। বিশেষত করে নারীকেন্দ্রিক সিনেমাগুলোতে নিজের অভিনয়সত্তাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন জয়। অভিনয়ের জন্য জয় অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য সম্মাননা এবং অগণিত দর্শকের ভালোবাসা।
জয়া আহসান বলিউড অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির বিপরীতে কড়ক সিং-এ অভিনয় করেছেন।
জয়া অভিনীত একক নাটক ও টেলিফিল্ম
১.
২.গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প(২০০৭)
৩.হাটকুঁড়া(২০০৬)
৪.তারপর পারুলের দিন(২০০৮)
৫.না কমলা না মেহেরজান(২০১২)
৬.ফেরার কোনো পথ নেই থাকে না কোন কালে(২০১০)
৭.অফবিট(২০০৫)
৮.পাঞ্জাবীওয়ালা(২০০৯)
৯.স্বপ্নসিঁড়ি(২০০৪)
১০.আমাদের গল্প(২০১২)
১১. সম্পর্কের দানা(২০০৯)
১২.লীলাবতী(২০০৬)
১৩.নো ম্যানস ল্যান্ড(২০০৬)
১৪.মায়েশা(২০০৯)
১৫.এ জার্নি বাই বোট(২০১০)
১৬.অবাক সন্দেশ(২০০৮)
১৭.বিকল পাখির গান(২০০৯)
১৮.জোৎস্না নদী ও রহিমের কিছু দৃশ্যকাব্য(২০১২)
জয়া অভিনীত ধারাবাহিক নাটক
১.এনেছি সূর্যের হাসি(২০০৫)
২.টু-লেট(২০০৮)
৩.শঙ্খবাস(২০০৭)
৪.চৈতা পাগল(২০১০)
৫.৬৯(২০০৫)
৬.সংশয়(২০০৩)
জয়া অভিনীত সিনেমা
১.গেরিলা(২০১১)
২.বিসর্জন(২০১৭)
৩.খাঁচা(২০১৭)
৪.ডুবসাঁতার(২০১০)
৫.ফিরে এসো বেহুলা(২০১২)
৬.বিজয়া(২০১৯)
৭.এক যে ছিল রাজা(২০১৮)
৮.জিরো ডিগ্রী(২০১৫)
৯.দেবী(২০১৮)
১০.ভালোবাসার শহর(২০১৭)
১১.আবর্ত(২০১৩)
১২.রাজকাহিনী(২০১৫)
১৩.বিনিসুতোয়(২০২১)
১৪.অর্ধাঙ্গিনী(২০২৩)
১৫.বিউটি সার্কাস(২০২২)
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জয় আহস ন কর ছ ন আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
অ্যানথ্রাক্স রোগটি‘তড়কা’ নামেই বহুল পরিচিত। গ্রীক শব্দ ‘অ্যানথ্রাকিস’ বা কয়লা থেকে উদ্ভূত এই নামটি হয়তো অনেকেই জানেন না। তবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই অবগত।
অ্যানথ্রাক্স নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগটি শুধু বন্য বা গৃহপালিত পশুকে নয়, বরং মানুষের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বারবার।
আরো পড়ুন:
১৬ দিন ধরে অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ বাকৃবি ছাত্রশিবিরের
দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দেশের অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে আক্রান্ত করে এই ব্যাকটেরিয়া। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছে অন্তত ১ হাজার গবাদিপশু। আর আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের রিপোর্ট করেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এরইমধ্যে এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন, যা নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি মানব অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার সবগুলোই ছিল ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। তবে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৪টি পশুর অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯৮টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৭ শতাংশে।
গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বারবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মেহেরপুর জেলাকে ‘অ্যানথ্রাক্স বেল্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা ময়মনসিংহ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে যথাক্রমে উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে, বিশেষত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
অ্যানথ্রাক্সের মূল কারণ হলো- ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মৃত পশুর দেহে পাওয়া যায়। এটি এতই শক্তিশালী যে, জৈবিক অস্ত্র হিসেবেও এর ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে উড়ন্ত স্পোর তৈরি করতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের স্নাতক রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্ণব সাহা।
তিনি বলেন, “মানুষ তিনভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে— ত্বকের মাধ্যমে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে। এর মধ্যে ত্বকের অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এর সুপ্তিকাল সাধারণত দুই থেকে ছয়দিন।”
অন্যদিকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমিত অ্যানথ্রাক্সের সুপ্তিকাল গড়ে চারদিন, যা ১০-১১ দিন পর্যন্তও হতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৯১.৩ শতাংশ মানুষই ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে ভুগেছে, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এবং উভয় ধরনের সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৬.৫২ শতাংশ ও ২.৬৬ শতাংশ।
ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে চামড়ায় প্রথমে একটি চুলকানিযুক্ত লাল ফোঁড়া দেখা যায়, যা পরবর্তীতে কালো কেন্দ্রযুক্ত ব্যথাহীন ঘা হিসেবে প্রকাশ পায়। উলের কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাওয়ায় এটি ‘উল-সর্টার্স ডিজিজ’ নামেও পরিচিত।
সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যানথ্রাক্স। ব্যাকটেরিয়ার স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়, যা দ্রুত শ্বাসকষ্ট, শক এবং উচ্চ মৃত্যুহারের দিকে নিয়ে যায়।
অর্ণব বলেন, “প্রাণীদের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স হলে হঠাৎ মৃত্যু সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। মৃত পশুর নাক, মুখ ও মলদ্বার থেকে কালচে, জমাট না বাঁধা রক্ত বের হয় এবং পেট ফুলে যায়।”
রোগটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হলো জনসচেতনতার অভাব। অসুস্থ পশু জবাই করে তার মাংস কম দামে বিক্রি করার একটি প্রবণতা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। অনেক বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ জানেনই না যে, এই মাংস থেকে মানুষের শরীরেও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
“পাশাপাশি, মৃত পশুর দেহ সঠিক উপায়ে অপসারণ না করে খোলা মাঠে, নদী, খাল বা বন্যার পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে এই জীবাণু পরিবেশ ও পশুপালনের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে,” যুক্ত করেন ড. গোলজার।
তিনি বলেন, “অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এই রোগের বিস্তার রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম- জনসচেতনতা বৃদ্ধি। পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে জনশিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গবাদি পশুর মধ্যে নিয়মিত এবং ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করা। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। আমদানি করা ও জবাই করা পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
ড. গোলজার বলেন, “এছাড়া মৃত পশুর দেহ ও দূষিত পদার্থ সঠিকভাবে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে এবং অনুমোদিত মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে এবং পশু চিকিৎসকের পরীক্ষা করা মাংস বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ঢাকা/মেহেদী