নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম শাখাওয়াত হোসেন নৌবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আপনাদের স্যাক্রিফাইস, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত বলবে আমাদের সমুদ্রসীমা কতখানি অক্ষত থাকবে। আমরা এখন পর্যন্ত নেভীর সেই ক্যাপাসিটি পাইনি, যারা আমাদের নীল সম্পদ আহরণ ও রক্ষা করবে। দুটি সাবমেরিন হয়েছে। আরও বেশ কিছু সাবমেরিন যুক্ত হওয়া দরকার। যদি হয়, তাহলে আমাদের নেভী ছোট হলেও খুব কার্যকর হবে। যদিও অন্তবর্তী সরকারের সময় খুব কম। তারপরও আশা করছি আমরা এটি দেখে যেতে পারব।”

রবিবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে দশটায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বানৌজা শের-ই-বাংলা প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪৬৩ জন নবীন নাবিকের বুটক্যাম্প প্রশিক্ষণ শেষে বর্ণাঢ্য শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে অপারেশন জ্যাকপটের সময় নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রায় কিছুই ছিল না। আজকে নেভী অনেক উন্নত হয়েছে। শুধু যুদ্ধে নয়, শান্তিতেও নৌবাহিনীর প্রচুর অবদান রয়েছে।” 

শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পায়রা বন্দর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যদিও এটা নতুন। তবে আমি সেকেন্ড ভিজিটে এটা দেখেছি সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। যদি হয়, তাহলে আমাদের দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দর হবে। এই বন্দর রক্ষা করার কাজে আমি নৌবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি।”

নবীন নাবিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত আছেন, থাকবেন। আপনাদের উপরে সমুদ্রের নিরাপত্তা নির্ভর করছে। সেদিন দূরে নয়, যখন আমরা দেশের ২০০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রসীমার বাইরেও নিরাপত্তা দিতে পারব। নৌবাহিনীর এ ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নবীনরা ভবিষ্যতে পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতা অর্জন করবে।” 

দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন নাবিকসহ সকল নৌসদস্যকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ নবীনদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

এর আগে তিনি প্যারেড রাউন্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী নবীন নাবিকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। 

নৌবাহিনীর এ-২০২৫ ব্যাচের নবীন নাবিকদের মধ্যে মো.

গালিব আল মাহাদী অর্ণব পেশাগত ও সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা অর্জন করে সেরা চৌকশ নাবিক হিসেবে ‘নৌপ্রধান পদক’ লাভ করেন। 

মো. হাসিব হোসেন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ‘কমখুল পদক’ এবং মো. নাঈম গাজী তৃতীয় স্থান অধিকার করে ‘শের-ই-বাংলা পদক’ অর্জন করেন। 

শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের পিএসওগণ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, পটুয়াখালী, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং নবীন নাবিকদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/ইমরান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

‘মানুষ মধু কেনার সময় প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, খাঁটি হবে তো’

সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভেজাল ঠেকিয়ে এর মর্যাদা ধরে রাখাটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। সম্মিলিতভাবে সেই চেষ্টাটুকু করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। ‘সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি এবং মধু সংগ্রহ, বিপণন ও ভেজাল প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও অংশীজনদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা জানান তাঁরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনার গ্র্যান্ড দরবার পার্টি সেন্টারে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটির আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খুলনা কার্যালয়।

আরও পড়ুনগা ছমছম বাঘের রাজ্যে মহাঝুঁকির মধু আহরণ১৫ ঘণ্টা আগে

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খুলনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু চক্র মুনাফার আশায় এতে ভেজাল মিশিয়ে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে। অথচ আমাদের দেশে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হচ্ছে, শিশুদের জন্মের পরপরই মুখে মধু দেওয়া। কিন্তু মধুতে ভেজাল থাকলে জন্মের পর শিশুটির ভেজাল খাওয়ার মধ্য দিয়েই তার জীবন শুরু হয়, এটা নির্মম কাজ। ভেজালের কারণে এখন এমন অবস্থা যে মানুষ মধু কেনার সময় প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, খাঁটি হবে তো?’

মধুতে ভেজাল মেশানোকে আত্মঘাতী কাজ উল্লেখ করে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছেই যখন কেউ মধু চান, তখন ভয়ে ভয়ে দিই। কারণ, নিজে গিয়ে তো মৌচাক কেটে মধু আনা হয় না। কারও মাধ্যমেই নিতে হয়, তাঁরা যে ভেজাল দেয়নি তার নিশ্চয়তা কী! আসলে মধুতে ভেজাল মেশানো চরম আত্মঘাতী একটি কাজ। মধু সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত সবক্ষেত্রে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে।’

আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু, এখন বছরে ১০০ টন মধু কেনাবেচা করেন তিনি৩১ মিনিট আগে

দেশে প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন জানিয়ে মধু গবেষক সৈয়দ মইনুল আনোয়ার বলেন, জিআই স্বীকৃতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর নতুন ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই—তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাজ ভোক্তার হাতে খাঁটি জিনিস তুলে দেওয়া। সারা দেশের মধুওয়ালারাও তাদের সহযোগী হয়ে সেই কাজটি করবেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বিদেশেও এ মধু রপ্তানি করা সম্ভব। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য মধুর এই বাজার ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না।

মধুর সুনাম ধরে রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসাইন জানান, প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার হার বেশি হলে মধুতে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা কমবে।

বেশি লাভের আশায় ভেজাল হচ্ছে মধু

এদিকে আজ শুক্রবার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, মুদি, কাপড়, মুঠোফোনে টাকা লেনদেন, ওষুধ, ফল, পান-সিগারেট এমনকি জুতার দোকানেও সুন্দরবনের খাঁটি মধু দাবি করে বোতলে ভর্তি মধু বিক্রি করা হচ্ছে। প্রকারভেদে প্রতি কেজি মধু ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা চাইছেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মৌয়ালদের মোটা অঙ্কের টাকা দাদন দেন। তাঁরা মৌয়ালদের মধুর সঙ্গে চিনির সিরা ও অন্য উপকরণ মিশিয়ে বন থেকে লোকালয়ে আনতে বলেন।

উপজেলার একাধিক মৌয়াল জানান, বনে মধু আহরণ মৌসুমের শুরুতে গরান ও খলসি ফুলের মধু হয়। মৌসুম শেষের দিকে কেওড়া ফুলের মধুর মৌসুম। কিন্তু বনে গরান ও খলসি এই দুই জাতের গাছের সংখ্যা কম। আগের মতো মধুও পাওয়া যায় না। তাই একশ্রেণির অসাধু মৌয়াল বেশি লাভের আশায় ভেজাল মধু বানানোর জন্য বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে বস্তাভর্তি চিনি ও বড় বড় পাতিল নিয়ে বনে যান।

আরও পড়ুনক্ষুদ্র এক পতঙ্গের ওপর টিকে আছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনবিআরের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি ঘোষণা
  • হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে
  • ‘মানুষ মধু কেনার সময় প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, খাঁটি হবে তো’
  • দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর সুনাম