একটাই দিন। একটি বিশেষ উপলক্ষ। কিন্তু দুইটি ভিন্ন ভেন্যুতে আয়োজনের ভাবনা ছিল একই- ‘সুরের ছোঁয়ায় শান্তি ও সুস্থতা’। ২১ জুন ছিল বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বজনীন সংহতি, সাম্য ও মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ায় ছিল দিবসের লক্ষ্য।
জাতীয় নাট্যশালায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যানারে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’-এর নিবেদনে এক মরমি পরিবেশনা। দুই মঞ্চে দুই রকম সুর, তবে চেতনায় অভিন্ন।
বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেলে এক আন্তরিক আয়োজন করে ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’। যার শিরোনাম ছিল ‘সুরের ছোঁয়ায় শান্তি’। মূল উদ্দেশ্য, সংগীতকে মানুষের কাছে একটি নিরাময় শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা, যাকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে যুদ্ধহীন এক মানবিক সমাজ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, ‘সংগীতের শক্তি এমনই যে, তা হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে মননে আলোক ছড়াতে পারে। সংগীতই পারে হানাহানিমুক্ত পৃথিবীর পথে মানুষকে নিয়ে যেতে।’
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সদস্যসচিব অলক দাশগুপ্ত। আয়োজনের সূচনায় চর্যাপদের পদ, আবৃত্তি ও আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের এক ব্যতিক্রমধর্মী কম্পোজিশন পরিবেশন করেন লাইসা বিনতে কামাল, রত্না দত্ত, সন্দীপা বিশ্বাসসহ একঝাঁক তরুণ শিল্পী। নৃত্য পরিবেশন করেন অংকিতা অথৈ। এছাড়া একক সংগীত, দলীয় পরিবেশনা ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন বর্ষা রাহা, রজত শুভ্র, ফয়সাল আহমেদ, সানোয়ারা জাহান নিতু, ব্যান্ডদল ‘ব্রেথলেস’সহ অনেকেই।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হয় আরেক আয়োজন-‘সুরের সম্মিলন’। সন্ধ্যায় নাট্যশালার সম্মুখে জাতীয় সংগীতের সুর ও বেলুন উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীরা।
সভাপতির বক্তব্যে ওয়ারেছ হোসেন বলেন, ‘যে দেশে যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চা হয়, সে দেশে যুদ্ধ ও সহিংসতা টিকে থাকতে পারে না। সংগীত মানুষের হৃদয়ের কালো দাগ মুছে দিতে পারে।’
শোভাযাত্রার পর মূল মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রথমে ছিল যন্ত্রসঙ্গীত ও কণ্ঠসংগীতের কোলাজ পরিবেশনা। এরপর মঞ্চে আসে আদিবাসী ব্যান্ড ‘চিম্বুক’ ও ‘বম শিল্পীগোষ্ঠী’। পরে জনপ্রিয় তারকা শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনায় মুখর হয় মিলনায়তন। শেষ পর্বে কোলাজ ব্যান্ডের পরিবেশনায় জমে ওঠে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, বিশ্ব সংগীত দিবসের সূচনা হয় ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে, তৎকালীন সংস্কৃতি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং ও সংগীত পরিচালক মরিস ফ্লেয়োরে’র উদ্যোগে। ২১ জুন, গ্রীষ্মের দীর্ঘতম দিনে, সংগীতকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে এই দিবস উদযাপন শুরু হয়, যা এখন বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স স ক ত চর চ ব শ ব স গ ত দ বস এক ড ম র অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির রজতজয়ন্তী উদযাপনে বড় আয়োজন বিসিবির
বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর পূর্তির উপলক্ষকে স্মরণ করে উদযাপন করতে বড় আয়োজন হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আগামীকাল শনিবার থেকে পাঁচ বিভাগীয় শহর ও রাজধানী মিরপুরে হবে ‘ক্রিকেট কার্নিভ্যাল’ শীর্ষক সিক্স-এ-সাইড অনূর্ধ্ব-১২ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এক দিনব্যাপী এসব আয়োজনে থাকবে ছোট দৈর্ঘ্যের ম্যাচ ও চিত্র প্রদর্শনী। ‘তৃণমূলে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্যও এই রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে কাজে লাগাতে চাইছেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ‘প্যারেন্টাল/ফ্রি ফর অল কোচিং সেন্টার’ নামের আয়োজনের মাধ্যমে আগ্রহী অভিভাবকদের ক্রিকেট কৌশল ও খেলার মূল ধারণা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।
২০০০ সালের ২৬ জুন দশম দল হিসেবে আইসিসি থেকে টেস্ট খেলার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে নভেম্বরে ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। যে টেস্টে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম। কাকতলীয়ভাবে তার হাত ধরেই এবার রজতজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ।
২১ জুন খুলনা থেকে শুরু হবে রজতজয়ন্তীর এই আয়োজন। পরবর্তীতে রাজশাহী (২২ জুন), সিলেট (২৩ জুন), চট্টগ্রাম (২৪ জুন), ঢাকার রিয়া গোপ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স (২৫ জুন) এবং রংপুর ও বরিশাল (২৮ জুন) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এই উদযাপন।
একই সময়ে স্কুল–কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য পেসার ও স্পিনার হান্টের আয়োজনও করা হবে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখিয়ে এতে অংশ নেওয়া যাবে। প্রতিটি ভেন্যুতে একটি করে কমেন্ট্রি বুথও থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভিডিওগুলো সেখানে উপস্থাপন করা হবে। আগ্রহী দর্শকরা চাইলে ভিডিওর ওপর ধারাভাষ্য দিতে পারবেন।
টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর ছবি আঁকার জন্য একটি ছবি আঁকা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে বিসিবি। দর্শকদের জন্য থাকবে হিট দ্য স্টাম্প চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া দর্শকরা চাইলে ‘গুড লাক উইশ’ বোর্ডে নিজেরা তাঁদের বিশেষ বার্তা ও শুভকামনা জানিয়ে যেতে পারবেন।
আগামী ২৬ জুন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান, নাম দেওয়া হয়েছে- ‘বাংলাদেশের ২৫ বছর টেস্ট ক্রিকেট যাত্রার উদযাপন’। সংবর্ধনা ছাড়াও প্রথম টেস্ট ঘিরে স্মৃতিচারণ করতে পারবেন সেই সময়কার খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। এ উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাদের মতবিনিময় পর্বও থাকবে। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলা বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররাও। আয়োজনের অংশ হিসেবে হতে পারে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা সঙ্গীতানুষ্ঠান।
ঢাকা/ইয়াসিন