১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে ডলার
Published: 1st, July 2025 GMT
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববাজারে ডলারের যে পতন হয়েছে, তা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় ধস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমেছে ১০ শতাংশের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র মুদ্রা ছাপানোর ক্ষেত্রে স্বর্ণমান থেকে বেরিয়ে আসার পর ১৯৭৩ সালে ডলারের বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল। স্মরণে রাখা দরকার, ওই সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। এরপর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় ডলারের ব্যবহার ও মান বেড়ে যায়।
এবারের পটভূমি ভিন্ন। এখন ডলারের এই পতনের পেছনে আছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা, বিশেষ করে আগ্রাসী শুল্কনীতি ও আত্মকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি। ট্রাম্পের শুল্কনীতি, মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা ও সরকারি ঋণের বাড়বাড়ন্ত—সব মিলিয়ে ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় বিনিয়োগকারীদের ক্রমেই আস্থা কমে আসা।
ডলারের দাম কমে যাওয়ায় মার্কিন নাগরিকদের বিদেশে ভ্রমণের খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এমন এক সময়ে বিষয়টি ঘটছে, যখন দেশটি আরও বেশি ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে ডলার দুর্বল হওয়ায় মার্কিন রপ্তানিকারকদের সুবিধা হয়েছে, যদিও আমদানির খরচ বাড়ছে। কথা হচ্ছে, মুদ্রা দুর্বল হলে স্বাভাবিকভাবে এসব ঘটে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির কারণে বাণিজ্যসংক্রান্ত এই ‘স্বাভাবিক’ বিষয়গুলোও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তবে যতই দিন যাচ্ছে, ততই ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি ক্ষীণ হচ্ছে। অর্থাৎ নীতিগতভাবে ট্রাম্প সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন শেয়ারবাজার চাঙা, বন্ডের বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ডলারের মান কমেই চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিদেশি মুদ্রা গবেষণা বিভাগের স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেন, ‘ডলার দুর্বল, না শক্তিশালী, এটা মূল প্রশ্ন নয়। মূল প্রশ্ন হলো, বিশ্বসমাজ তোমার অবস্থান কীভাবে দেখছে?’
ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরপর ডলার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল, ট্রাম্প ব্যবসাবান্ধব ও প্রবৃদ্ধিমুখী। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করা হলে বিপুল সুবিধা দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে ধারণা করা হয়েছিল, ট্রাম্প বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবেন এবং পরিণতিতে ডলারের চাহিদা বাড়বে।
কিন্তু সেই আশা স্থায়ী হয়নি। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময় ডলার সূচক সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছার পরই পড়তে শুরু করে। নতুন প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব হবে, সেই আশা দূর হয়ে শুরু হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক, উচ্চ সুদহারের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আর অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা।
এরপর আসে ট্রাম্পের ঘোষিত সেই ‘স্বাধীনতা দিবস’ অর্থাৎ ২ এপ্রিল, যেদিন তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। সেদিন তিনি একেবারেই অপ্রত্যাশিত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন; যে বিষয়টি অর্থনীতিবিদ, বিনিয়োগকারী কিংবা বিশ্লেষক—কেউই অনুমান করতে পারেননি। ফলে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে বন্ডের বাজার ও ডলার—সব ক্ষেত্রেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ডলার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা ছাড়ার আগে স্ত্রীকে যাত্রী সাজিয়ে চালকের আসনে জার্মান দূত
স্ত্রী বেটিনা টোস্টারকে রিকশায় সওয়ারি বানিয়ে চালকের আসনে বসলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম টোস্টার। চললেন কিছুটা পথও। জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে চার বছরের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। রিকশার চালক আর সওয়ায়ির ভিডিও দিয়ে এটাই ছিল জার্মান দূতাবাসের এক্স হ্যান্ডলে আখিমের শেষ পোস্ট।
আখিম ভিডিওতে বলছেন, ‘দারুণ চারটি বছর ঢাকায় কাটিয়ে ফিরে যাচ্ছি বার্লিনে। ঢাকা আর বার্লিনের দূরত্ব মাত্র ৭ হাজার কিলোমিটার।’
ভিডিওতে দেখা যায়, বাসার গেটে একটি রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আখিম টোস্টার। পরনে লুঙ্গি ও পোলো টি–শার্ট, মাথায় লাল চেকের গামছা, হাতে ঘড়ি ও পায়ে কালো জুতা। এরপর তাঁর স্ত্রী বেটিনা টোস্টার এলে তিনি হাতে ধরে তাঁকে রিকশায় ওঠান। তুলে দেন তাঁর ট্রলিও। এরপর স্ত্রীকে সওয়ারি করে রিকশা চালিয়ে পথে নামেন জার্মান রাষ্ট্রদূত।
দূতাবাসের এক্স হ্যান্ডলে তাঁদের নিরাপদ জার্মান যাত্রার পাশাপাশি পরবর্তী যাত্রার জন্য শুভকামনা করা হয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে ঢাকায় জার্মানির চতুর্দশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আখিম টোস্টার। ১৯৯০ সালে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়া এই কূটনীতিক বাংলাদেশের আগে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে নিজের দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। কূটনীতিক হিসেবে আখিম টোস্টার জেনেভা, মাদ্রিদ, বুখারেস্ট, সারায়েভোর জার্মান দূতাবাসে বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করেছেন।