মহাসড়কে সংকেতবিহীন একাধিক গতিরোধক, ঘটছে দুর্ঘটনা
Published: 1st, July 2025 GMT
মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক গতিরোধক। এসব গতিরোধক নির্মাণে কোনো নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
রং বা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ছাড়াই গতিরোধক নির্মাণ করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ঈশ্বরগঞ্জ অংশের অন্তত চারটি গতিরোধক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে, রাতে গতিরোধকগুলো দৃশ্যমান না হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
গত রোববার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার দত্তপাড়ায় ঘটে এক সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, একজন মোটরসাইকেল আরোহী পেছনে স্ত্রী ও মাঝখানে শিশু সন্তান নিয়ে যাচ্ছিলেন। পৌর এলাকায় একটি গতিরোধক অতিক্রম করার সময় মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। এতে স্বামী-স্ত্রী ও শিশুটি আহত হন। সেসময় বড় কোনো যানবাহন না থাকায় রক্ষা পান তারা। তিনি বলেন, ‘আমি চালককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি স্পিড ব্রেকারটি (গতিরোধক) তিনি দেখতে পাননি। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।’ এ সময় স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এ ধরনের দুর্ঘটনা এই এলাকায় প্রায়ই ঘটছে।
গত ২৮ মে দত্তপাড়া এলাকার ১ নম্বর মোড়ে বাসচাপায় বাবা-ছেলেসহ মাহেন্দ্রর ৩ যাত্রী নিহত ও ছয়জন আহত হন। এর পর ১৫ জুন একই স্থানে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ অবস্থায় এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ সেখানে পাশাপাশি দুটি গতিরোধক নির্মাণ করে। এর আগে ৭ এপ্রিল মহাসড়কের হারুয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা মহাসড়ক অবরোধ করে ঘটনাস্থলে গতিরোধক নির্মাণের দাবি জানান। উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করলে পরে সওজ কর্তৃপক্ষ সেখানে একইভাবে দুটি গতিরোধক নির্মাণ করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের দত্তপাড়া ১ নম্বর মোড় এলাকায় দুটি এবং হারুয়া এলাকায় দুটি গতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো এমনভাবে তৈরি যে, দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো গতিরোধক রয়েছে। গতিরোধকগুলোর দুই পাশে ছোট দুটি লাল নিশান রয়েছে। তবে সেগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই, কেন লাল নিশান দেওয়া হয়েছে। কারণ গতিরোধকের বিষয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী গতিরোধকে সাদা রং করার কথা, কিন্তু সাদা রং নেই সেখানে। যে কারণে চালকরা আগেভাগে বুঝতে না পারায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
হারুয়া এলাকার গতিরোধকে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও রুহুল আমিন নামে ইজিবাইক চালক জানান, প্রতিদিনই কেউ না কেউ এই গতিরোধকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। গতিরোধকগুলো মানুষের নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হলেও এগুলোই এখন মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় মহাসড়ক থেকে গতিরোধকগুলো অপসারণ করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জেব্রা ক্রসিং এবং গতিরোধক সাইনবোর্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতেই দুর্ঘটনা কমবে বলে দাবি তাদের।
ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রাম প্রসাদ পালের ভাষ্য, যেখানেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, সেখানেই গতিরোধক নির্মাণের দাবি ওঠে। আসলে গতিরোধক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোনো সমাধান নয়। সবার আগে দরকার সচেতনতা। আর প্রয়োজন অনুসারে গতিরোধক দিলেও তার আগে অবশ্যই সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দেওয়া আবশ্যক। যেন চালকদের দূর থেকেই এগুলো চোখে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুছ ছালামের সঙ্গে। সমকালকে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মহাসড়কে গতিরোধক দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় স্থানীয়দের দাবিতে চারটি গতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর একবার সাদা রং দেওয়া হলেও বৃষ্টিতে উঠে গেছে। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে স্থায়ী রং দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, যা দু-চার দিনের মধ্যেই শেষ হবে। এ ছাড়া গতিরোধক সাইনবোর্ড তৈরির অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তৈরি হলে উভয় পাশে চোখে পড়ার মতো করে বসানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রহমান জানান, মহাসড়কের ওপর গতিরোধকগুলোতে দ্রুত রং এবং সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপনের জন্য জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো
হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন অচিরেই এগুলো বাস্তবায়ন হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন র স ইনব র ড এল ক য় এক ধ ক সতর ক ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে মৃত্যুফাঁদ, ভয়ানক নৃশংসতা দেখাচ্ছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনিদের ওপর টানা ৩৬০ দিন ধরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে ইসরায়েল। একদিকে গুলি-বোমায় মরছে নিরপরাধ মানুষ, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে খাদ্যকেন্দ্রে পাতা হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ। পাশাপাশি ভাড়াটে সশস্ত্র গ্রুপের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছে গাজাবাসী। ইসরায়েলি নৃশংসতার এ এক ভয়ানক রূপ। বিশ্ববাসী এগুলো প্রত্যক্ষ করছে নির্লিপ্তভাবে। চোখের সামনে এই ভয়াবহতা ঘটলেও বিশ্বনেতারা নীরব। ক্যামেরার বাইরেও ঘটছে ধর্ষণ-নির্যাতন। রুশ গণমাধ্যম আরটির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গাজায় অনেক চিকিৎসককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। গত ১০০ দিন ধরে উপত্যকায় পূর্ণ অবরোধ কায়েম রেখেছে ইসরায়েল। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, খাবার পানি, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জ্বালানি সংকট সৃষ্টি করে অ্যাম্বুলেন্সগুলো অচল রাখা হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ নতুন নয়। এর আগে মূলত ১৭ বছর ধরে তারা উপত্যকাটিকে বারবার অবরুদ্ধ করেছে।
গত মে মাসের শেষ দিকে গাজায় মার্কিন ভাড়াটে সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় করা হয়েছে। তারাই খাবারের আশায় ত্রাণকেন্দ্রে আসা ক্ষুধার্তদের বুকে গুলি চালাচ্ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবিরাম বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। তারা হাসপাতালগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। চিকিৎসক, রোগীকে অপহরণ করা হচ্ছে। মসজিদ, গির্জা, স্কুল, জাতিসংঘ কেন্দ্রসহ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচার বোমা হামলা চলছে। ইসরায়েল ঘোষিত কথিত নিরাপদ অঞ্চলেই এসব ঘটছে। গাজায় ২০০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ইচ্ছা করেই চিকিৎসকদের মারা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৪ সালে ইসরায়েলিরা পাহাড়ের ধারে খাদ্য, পানি রেখে মৃত্যুফাঁদ পেতেছিল পৈশাচিক আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে। ২০০৯ সালে এক গুলিতে দুই অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করে উল্লাস করেছিল ইসরায়েলি স্নাইপাররা।
ইরানের ওপর আক্রমণের সময়ও গাজায় হামলা থামায়নি ইসরায়েল। মার্কিন-ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ক্ষুধার্তদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ছলনা করছে। ভাড়াটে বন্দুকধারীদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করে মৃত্যুফাঁদ পাতা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে।
দ্য ক্র্যাডলের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ত্রাণ লুটকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতা ইয়াসের আবু শাবাব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসএসের সঙ্গে যুক্ত। ইসরায়েলের ইন্ধনে তার দল গাজায় ত্রাণ লুট করছে। অথচ হামাসের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। হামাসের বিরুদ্ধে আরও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েল এই কৌশল নিয়েছে।
ফিলিস্তিনি মানবিক সমন্বয়বিষয়ক জাতিসংঘ কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) প্রধান জোনাথন হুইটল এই পরিস্থিতিকে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র বানিয়ে হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবও বলেছেন, ক্ষুধার্ত মানুষ পরিবারকে বাঁচাতে চাচ্ছে, অথচ তাদেরই গুলি-বোমায় হত্যা করা হচ্ছে। মূলত এভাবেই তারা গাজাবাসীর ওপর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে।
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের চেয়ারম্যান র্যামি আবদু’র মতে, খাদ্য নিতে আসা মানুষদের মাথা-বুকে নির্বিচারে গুলি করা হচ্ছে। শিশুদের মায়ের কোলে হত্যা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ল্যানসেটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে গাজায় কর্মরত নরওয়ের নাগরিক ড. ম্যাডস গিলবার্টের তথ্য আরও ভয়াবহ। তিনি অনুমান করেন, গাজায় আগে-পরে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াকভ গার্বের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রাণকেন্দ্রগুলো বিশেষ পরিকল্পনায় তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই সামরিক স্থাপনাসংলগ্ন এলাকায়। কেন্দ্রগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে একটি মাত্র প্রবেশপথ। একবার ঢুকলে বের হওয়া কঠিন।
মানবাধিকার আইনজীবী ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ক্রেগ মোখিবার সম্প্রতি এক পোস্টে লেখেন, ইসরায়েলের নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। তারা এখন নাৎসিদের মতোই ঘৃণিত। গণহত্যার দায় থেকে ইসরায়েল রেহাই পাবে না।