কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। গত ১০ মাসে ১০ হত্যাকান্ডসহ একের পর এক ঘটছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারসহ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রশাসনের কাছে গিয়েও প্রতিকার তারা পাচ্ছেন না। তারা প্রশাসনের নিস্ক্রীয়তাকে এ জন্য দায়ী করছেন। তবে দায় নিতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন। তারা বলছেন সব স্বাভাবিক রয়েছে।
এলাকার ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে ছিনতাই, অস্ত্রের মহড়া ও হামলার ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। নীরব চাঁদাবাজি তো রয়েছেই। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও মাদক ব্যবসাসহ নানা কারণে ঘটছে হামলা-মামলা এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা। প্রকাশ্য দিবালোকে ইউপি চেয়ারম্যান খুনসহ গত ১০ মাসে অন্তত ১০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে নিজ কার্যালয়ে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। ছাতারপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আপন দুই ভাইকে। এ ঘটনায় আহত হন কয়েকজন। মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম প্রামানিকের ছেলে রাজুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পদ্মার চরে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের জের ধরে পরদিন সকালে একই এলাকার সাঈদ মন্ডলের চরের বাথান থেকে অন্তত ৪৬টি মহিষ লুট করে সন্ত্রাসীরা। এমন অপরাধ কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন জনপ্রতিনিধিরাও।
দৌলতখালী দাড়পাড়া গ্রামে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় জাহানারা খাতুনকে। তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন। গোবরগাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিবাদে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহাফুজা খাতুনকে। দৌলতপুর সীমান্তে ঠোটারপাড়ায় মাদক চোরাচালান সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ মাদক চোরাকারবারীর হামলায় নিহত হন মোহন। এ ঘটনায় হৃদয় নামে এক মাদক চোরাকারবারী আহত হন।
মরিচা ইউনিয়নের ভুরকাপাড়ায় শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ জুন শেরপুর সেনপাড়া গ্রামের শিলা খাতুন নামে এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের দাবি। সর্বশেষ গত ২ জুলাই রাতে মথুরাপুর স্কুল বাজারে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আব্দুল আজিজ (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
উল্লেখিত হত্যাকান্ডে জড়িত অনেক ঘটনার প্রধান আসামিসহ অন্যান্য আসামি ধরাও পড়লেও তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায় অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ৭ ফেব্রুয়ারি একটি শিশু চুরির ঘটনায় দৌলতপুরে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শুধু হত্যাকান্ড নয়, ছিনতাইও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছর ২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ফিড ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে অস্ত্রের মুখে মারপিট করে ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় চল্লিশ বাহিনীর প্রধান রাখি ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন শিতলাইপাড়া এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী স্ত্রী। ১৪ জানুয়ারি বিকেলে হরিণগাছী এলাকায় নগদের মার্কেটিং অফিসারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে দৌলতখালী গ্রামে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৃষক দম্পতিকে বেঁধে রেখে গরু ও ছাগল লুট করা হয়। ১ মার্চ ভোরে ৪ জন গরু ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আরিফ বাহিনী এ ছিনতাই ঘটনার সাথে জড়িত বলে সেসময় স্থানীয় সূত্র জানিয়েছিল।
২ এপ্রিল সীমান্তের চরপাড়া এলাকায় ৭টি গরু লুট ও ছিনতাই হয়। একইদিন রাতে খলিসাকুন্ডি গ্রামে বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে ডাকাত দল। ১৪ এপ্রিল সোনাইকুন্ডি গ্রামে অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ীর আড়াই লাক্ষ টাকা ছিনতাই করে নেয় সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা। সিরাজনগর বেলতলীপাড়া গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী হায়দার আলীর বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাত দল বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৪ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।
দৌলতপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন দৌলতপুরের সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। তিনি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘‘পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্য রয়েছে। যার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।’’
তবে এসব ঘটনার দায় নিতে নারাজ দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
ঢাকা/কাঞ্চন//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ক ন ড প রক শ য ব যবস য় দ লতপ র স বর ণ ছ নত ই ঘটন য় র ঘটন ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
শাহজালালে বিমানে বোমা আতঙ্ক, ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত
নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইট বিজি-৩৭৩ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টায় ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
জানা যায়, ফ্লাইট ছাড়ার আগে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, বিমানে বোমা রয়েছে। এরপরই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিয়ে আসা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু করে তল্লাশি অভিযান।
আরো পড়ুন:
বেবিচকের নতুন চেয়ারম্যান মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক
ট্রলি টাগের আঘাতে বোয়িং বিমান ক্ষতিগ্রস্ত
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ বি এম রওশন কবীর বলেন, “একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, ফ্লাইটে বোমা রয়েছে। সে সময় উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের প্রস্তুতিতে ছিল। যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সবাইকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনা হয়।”
তিনি আরো জানান, বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় তল্লাশি চালাচ্ছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ