রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভাগের মৌখিক পরীক্ষায় নিকাব খুলতে বাধ্য করার প্রতিবাদসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে মৌন মিছিল করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হল গেইট থেকে মৌন মিছিল শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবনে এসে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় কান দৃশ্যমান না হলে আবেদন ফর্ম প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা যাবে না। হিজাব-নিকাব পরিহিত কোনো শিক্ষার্থীকে প্রেজেন্টেশন ও ভাইভা বোর্ডে নিকাব খুলতে বাধ্য করা যাবে না। বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে (যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরিচয় শনাক্তকরণ এবং এই পদ্ধতি চালু না হওয়া পর্যন্ত নারী শিক্ষিকা বা কর্মচারীর মাধ্যমে পর্দানশীন ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

দাবিতে নারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিটি বিল্ডিংয়ে মেয়েদের নামাজ রুমের ব্যবস্থা করতে হবে, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়াতে মেয়েদের জন্য আলাদা কর্নারের ব্যবস্থা করতে হবে, দ্রুততম সময়ে সব বিভাগের হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে এবং হিজাব-নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “পরীক্ষার হলে ঢোকানোর আগে যদি মহিলা কর্মচারী দ্বারা ভালোভাবে সার্চ করা হয়, তাহলে তো আর কানে ডিভাইস নেওয়ার সুযোগ থাকে না। এজন্য পরীক্ষার হলে কান বের করে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। আর যদি এমন হয়, তাহলে পরীক্ষার হলে মহিলা শিক্ষিকা থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ক্লাসরুমের অভাব নেই। আমাদের জন্য আলাদা রুম রাখুক। আমরা সেখানে মুখ খুলে পরীক্ষা দেব। আমরা কেন পুরুষ মানুষের সামনে হিজাব খুলব?”

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “ধর্ম পালন করার অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। মুসলিম হিসেবে হিজাব আমাদের অধিকার। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ, এসব সমস্যা নানাভাবে সমাধান করা যায়। তাহলে কেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়? আমরা তো ভুল কিছু করছি না। আমরা ধর্মীয় নিয়মনীতি মানার অধিকার চাচ্ছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমাদের কাছে তারা স্মারকলিপি দিয়েছে। এটা একটি সেনসেটিভ বিষয়। আমরা এটি নিয়ে বসব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শোবার ঘরকে বানাল জাদুঘর

চীনের হেনান প্রদেশের ১৪ বছর বয়সী কিশোর শিয়ে ঝাওইউতং নিজের ছোট্ট শোবার ঘরকে এক ব্যতিক্রমী ইতিহাস জাদুঘরে পরিণত করেছে। প্রাচীন চীনের ইতিহাস ও সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে সে বছরের পর বছর ধরে সংগ্রহ করেছে নানা সামগ্রী। এতে রয়েছে মাটির পাত্র, চিনামাটি, প্রাচীন ইট, পুরোনো মুদ্রা, এমনকি তিন হাজার বছরের পুরোনো যুগের নিদর্শন।

ঝাওইউতংয়ের ঘরে বিছানা ছাড়া বাকি সব জায়গা দখল করে আছে এসব সংগ্রহ। সে নিজেই বলেছে, ‘বিছানাটা আমার দেহের, আর বাকি ঘর আমার আত্মার পাত্র।’

সম্প্রতি নিজের সংগ্রহ নিয়ে তৈরি ঝাওইউতংয়ের এক ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, যেকোনো একটি জিনিস বা বস্তু ধরে তার যুগ, পটভূমি ও ইতিহাস ব্যাখ্যা করছে সে। ভিডিওটি লাখো মানুষের মন কেড়েছে। অনেকে তাকে ‘প্রাচীন আত্মাধারী বালক’ বলে অভিহিত করেছেন।

ঝাওইউতংয়ের সংগ্রহের মধ্যে হান সাম্রাজ্য যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ২০৬ থেকে খ্রিষ্টাব্দ ২২০) কবরে ব্যবহারের মাটির চুলা, স্প্রিং অ্যান্ড অটাম এবং ওয়ারিং স্টেটস যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ৭৭১ থেকে ২২১ সাল) বিরল ‘স্পেড কয়েন’ বা কোদাল আকৃতির পয়সা রয়েছে।

এ ধরনের একটি মুদ্রা কিনতে সাধারণত কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার ইউয়ান খরচ করেছে ঝাওইউতং। সে জানায়, তার সংগ্রহে থাকা স্পেড কয়েনটি ‘গড় মানের’। এসব দুর্লভ প্রাচীন জিনিস কেনার জন্য সে নিজের জমানো অর্থ খরচ করে। এ জন্য সে কৃচ্ছ্র সাধন করে। ছিদ্র হয়ে গেলেও নতুন মোজা কেনে না। তবে কিছু জিনিস সে বিনা খরচে সংগ্রহ করেছে, যেমন লুয়োয়াং ভ্রমণের সময় হান যুগের ইটটি সে ঘাসের মধ্যে পেয়েছিল। তবে তার সংগ্রহে কত প্রাচীন জিনিস বা বস্তু আছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ছয় বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে ঝেংঝৌ মিউজিয়ামে ঘুরতে গিয়ে ইতিহাসের প্রেমে পড়ে ঝাওইউতং। পরে ‘চায়নিজ পোয়েট্রি কম্পিটিশন’ টিভি অনুষ্ঠানে পরিচিত এক বন্ধুর অনুপ্রেরণায় নিজের ঘরকে জাদুঘর বানানোর ধারণা পায়।

ইতিহাসের পাশাপাশি প্রাচীন ‘অরাকল বোন লিপি’র প্রতিও ঝাওইউতংয়ের গভীর আগ্রহ রয়েছে, যা চীনের সবচেয়ে প্রাচীন লিখনপদ্ধতি। তার সংগ্রহে নকল অরাকল বোন লিপিও আছে, যা শিয়ে নিজে খোদাই করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ