কোনো ব্যক্তি, ঘটনা কিংবা বিষয়বস্তুকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হলে স্থান-পাত্রের বাইরে ওই সময় সম্পর্কেও সম্যক ধারণা থাকা চাই। তা না হলে এমন মূল্যায়ন সঠিক না হয়ে একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠতে পারে। বিগত দেড় দশক আমাদের দেশে অন্য সব ক্ষেত্র তো বটেই, বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রটি খুবই স্মরণযোগ্য। টানা সরকার বা দেশ শাসনের ধারাবাহিকতা বলতে আমরা যা বুঝি, তা ছিল ওই সময়ে। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন; টানা প্রায় ১৬ বছর। নুরুল ইসলাম নাহিদ টানা দুই মেয়াদের শিক্ষামন্ত্রী; অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী পুরো মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। তাঁর মেয়াদ শেষে দ্বিতীয়বার তাঁকে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা গেলে কিংবা তিনি থাকতে পারলে সেটাও হতো আরেক ইতিহাস। ধারাবাহিক তিন-চার মেয়াদের সরকার, দুই মেয়াদের শিক্ষামন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরপর দুই মেয়াদের উপাচার্য– ব্যতিক্রম কেবল মঞ্জুরি কমিশন। বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ পদাসীন থাকার কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
বিগত ৫৩ বছরের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী বা শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ৩৬ জনের মধ্যে মাত্র চারজন রয়েছেন, যারা পুরো মেয়াদ পদে সমাসীন ছিলেন। এই চারজনের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগ আর একজন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী। এমন ধারাবাহিকতায় নুরুল ইসলাম নাহিদের পর ডা.
সাত কলেজ ইস্যুটি অবশ্যই নতুন নয়, বরং বেশ পুরোনো। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি স্তরে পাঠদানকারী সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি আনুমানিক ২৩শ কলেজ থেকে ঢাকার মাত্র সাতটি সরকারি কলেজকে ছাড়িয়ে এনে নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় বা নির্দেশে কাজটি করা হয়েছে। আসলে বিষয়টি ঠিক এমন নয়। সেশনজট নিরসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী দেশের সব ক’টি সরকারি কলেজকে অঞ্চলভিত্তিক তিনটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) অধীনে আনা যায় কিনা, ভেবে দেখতে বলেছিলেন (১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত ডিগ্রি কলেজগুলো যে অবস্থায় ছিল)। তখন থেকেই এ নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুরু হয় টানাপোড়েন। এভাবে বেশ সময় অতিবাহিত হয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-কর্মসূচিসহ অনেক কিছুর পর শেষ পর্যন্ত সাত কলেজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে; চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও শিক্ষার্থী ও দায়দায়িত্ব ‘আদান’ ও ‘প্রদান’ নিয়ে সংঘটিত নানা নাটকীয় ঘটনার কথা দুই উপাচার্যেরই ভালো মনে থাকার কথা; সচেতন মহলের তো অবশ্যই সবকিছু জানা। এমন পরিস্থিতিতে একটি সময় ভুক্তভোগী সাত কলেজের আনুমানিক দুই লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক বেশ ত্যক্ত-বিরক্ত এবং অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ভয়াবহ সেশনজট এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে শিক্ষার্থীরা। অনন্যোপায় হয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে চালিয়ে যেতে থাকে আন্দোলন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এমনিতেই বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এরই মধ্যে সামনে চলে আসে সাত কলেজ ইস্যু। এ নিয়ে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। সেই সঙ্গে অভিভাবকরাও। দুর্ভোগ-ভোগান্তি আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যেন মানুষের পিছু ছাড়ছে না। কিন্তু আর কতকাল? সবার স্বার্থে সুন্দর সমাধান কাম্য। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজ বেরিয়ে গেছে। এখন এ নিয়ে কমিটি কাজ করছে। আমরা আগে পারিনি, এবার পারব– এ প্রত্যাশা সবার।
বিমল সরকার: অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ত কল জ শ ক ষ মন ত র স ত কল জ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত