নগদের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৪ জনের নামে মামলা
Published: 4th, February 2025 GMT
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুকসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৬৪৫ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আমীর খসরু মতিঝিল থানায় এ মামলা করেন।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল নগদের কার্যক্রম বিশদভাবে পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে নগদ লিমিটেডের ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টগুলোয় ইস্যু করা ই-মানির বিপরীতে ১০১ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি দেখা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২১ আগস্ট ডাক বিভাগের সম্মতিতে নগদে প্রশাসক দল নিয়োগ করে। বর্তমানে প্রশাসক দল ডাক বিভাগের ‘নগদ’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ঘাটতিসহ আরও কিছু গুরুতর আর্থিক অনিয়মের তথ্য তাদের নজরে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমকালকে লিখিত বক্তব্য পাঠান নগদের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মামলা হয়েছে। মামলায় তারা বলেছেন, ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ঘাটতি রয়েছে নগদে। এই তথ্যটা বানাতে গিয়ে তারা হয়তো খেয়াল করেননি, নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে পরিষ্কার বলা আছে, নগদে ই-মানির ঘাটতি ৪৮ কোটি ৬০ লাখ কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন হলো, সরকার বদলের পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের যে প্রশাসক দল নগদ দখল করে নেয়, এই টাকার ঘাটতি কি তারাই করেছে? যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে এই দায় তাদের। ফলে মামলা হলে তাদের বিরুদ্ধেই হওয়া উচিত। তারাই বরং এখন আমাদের ওপর এই দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। খুব তাড়াতাড়ি আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫