প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (পারভেজ) হত্যার প্রতিবাদ এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা কালো ব্যানার ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেন। এ সময় তাঁদের হাতে ‘গুম–হত্যা আর খুন, মানি না মানব না’, ‘যে হাতে বই ছিল তা আজ রক্তে রাঙা, সংস্কারের নামে চলছে খুন আর দাঙ্গা’, ‘কাটতে হবে দোসর লেজ, আমরা আছি পারভেজ’সহ নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। যেখানে আমরা সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কারা এ ব্যানারকে কলুষিত করতে চায়? আজ থেকে আপনাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলবে না, আপনাদের ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যমুখী হয়ে পড়েছে।’

ছাত্রদল বাংলা সিনেমার শাবানা নয় উল্লেখ করে সংগঠনটির এই নেতা বলেন, ‘আড়াই ঘণ্টা একটা চলচ্চিত্রে শাবানা খুব কষ্ট-দুঃখ করে। তবে যখন তার ভালো সময় আসে, তখন তিনি ক্ষমা করে দেন। আমাদের সামনের সারির নেতৃত্ব যদি আহত বা নিহত হয়, আমরা শাবানার মতো ক্ষমা করতে পারব না। আমাদেরও রক্ত গরম হয়, আমাদেরও শরীর গরম হয়।’

শিক্ষার্থীরা একটি ট্রমার (মানসিক আঘাত) মধ্যে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দেয়াল থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা চুপ করে ছিলাম। আমরা মনে করেছি, শিক্ষার্থীরা যেহেতু একটি ট্রমার মধ্যে আছে, আমরা যদি প্রতিক্রিয়া দেখাই, তাহলে ভুল–বোঝাবুঝি হবে। কিন্তু এখন আনাচকানাচে নামে-বেনামে মঞ্চ তৈরি হয়েছে।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে ‘মবোক্রেসি’ (বিশৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ কাজ) চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে মবোক্রেসি চালু করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের রক্তে ক্যাম্পাস রঞ্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর কেউ যদি ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্রদল কোনো গুপ্ত সংগঠন নয়।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে আর কোনো ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর হব।’

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহসভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন প্রমুখ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

জাহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল এবং সদস্যসচিব শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে, আমি কে, পারভেজ পারভেজ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘আমরা দ্রুত পারভেজ হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি এবং যারা হত্যাকারী, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে, সে জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।'

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার দাবিতে আজ সোমবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র ল ইসল ম র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিএনপির দুই পক্ষের পৃথক মানববন্ধন, ইটপাটকেল নিক্ষেপ

ভোলার তজুমদ্দিনে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার আসামিদের শাস্তির দাবিতে পৃথক মানববন্ধন করেছে উপজেলা বিএনপির দুটি পক্ষ। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার পর উপজেলা সদরে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় ‘তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ‘উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় উপজেলা শ্রমিক দল।

উল্লেখ্য, তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নে স্বামীকে রাতভর নির্যাতনের পর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তজুমদ্দিন থানায় সোমবার একটি মামলা হয়। গত রোববার সকালে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে উল্লেখ করে ওই মামলায় শ্রমিক দল, যুবদল ও কলেজ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী গৃহবধূকে মঙ্গলবার ডাক্তারি পরীক্ষার (ফরেনসিক) জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যানারে সন্ধ্যা ছয়টায় উপজেলা সদর রোডে ‘নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবিতে’ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়। নেতারা ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ বলেন, ‘এই বর্বর ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যে–ই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ‘উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে’ সদর রোডের মোল্লা পুকুর পাড়ে গণধর্ষণ মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মোল্লা পুকুর পাড়ে কয়েক শ মানুষ জমায়েত হলে তাঁদের ওপর অতর্কিত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় তজুমদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মামুনুল ইসলাম, প্রস্তাবিত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক প্রার্থী মেহরাব হোসেন, চাঁদপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির তালুকদার, কলেজ ছাত্রদলের নির্বাহী সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে এবং বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক প্রার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, তাঁরাই প্রথম উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মোল্লা পুকুর পাড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেন। কিন্তু বিএনপির আরেক পক্ষ ওই একই স্থানে মানববন্ধনের ডাক দেয়। পরে ওই পক্ষ শহরে মানববন্ধন করে তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি পণ্ড করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

তবে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত। কে বা কারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন, তা জানেন না। হয়তো ধর্ষক পক্ষের কেউ হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শহরে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ 
  • গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবিতে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন 
  • বিল্ডিংয়ের বাড়তি অংশ ভাঙার দাবিতে দক্ষিণখানে মানববন্ধন
  • রাজশাহীতে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি
  • সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি
  • প্রবাসফেরত স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় স্ত্রীর বিচার দাবি
  • যশোরে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্তের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন
  • তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: গ্রেপ্তার হয়নি মূল আসামিরা
  • তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিএনপির দুই পক্ষের পৃথক মানববন্ধন, ইটপাটকেল নিক্ষেপ
  • সুনামগঞ্জে ধর্ষণ মামলায় কারাগারে পুলিশ সদস্য