তজুমদ্দিনে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিএনপির দুই পক্ষের পৃথক মানববন্ধন, ইটপাটকেল নিক্ষেপ
Published: 1st, July 2025 GMT
ভোলার তজুমদ্দিনে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার আসামিদের শাস্তির দাবিতে পৃথক মানববন্ধন করেছে উপজেলা বিএনপির দুটি পক্ষ। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার পর উপজেলা সদরে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় ‘তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ‘উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
উল্লেখ্য, তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নে স্বামীকে রাতভর নির্যাতনের পর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তজুমদ্দিন থানায় সোমবার একটি মামলা হয়। গত রোববার সকালে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে উল্লেখ করে ওই মামলায় শ্রমিক দল, যুবদল ও কলেজ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী গৃহবধূকে মঙ্গলবার ডাক্তারি পরীক্ষার (ফরেনসিক) জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যানারে সন্ধ্যা ছয়টায় উপজেলা সদর রোডে ‘নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবিতে’ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়। নেতারা ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ বলেন, ‘এই বর্বর ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যে–ই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ‘উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে’ সদর রোডের মোল্লা পুকুর পাড়ে গণধর্ষণ মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মোল্লা পুকুর পাড়ে কয়েক শ মানুষ জমায়েত হলে তাঁদের ওপর অতর্কিত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় তজুমদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মামুনুল ইসলাম, প্রস্তাবিত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক প্রার্থী মেহরাব হোসেন, চাঁদপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির তালুকদার, কলেজ ছাত্রদলের নির্বাহী সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে এবং বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক প্রার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, তাঁরাই প্রথম উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মোল্লা পুকুর পাড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেন। কিন্তু বিএনপির আরেক পক্ষ ওই একই স্থানে মানববন্ধনের ডাক দেয়। পরে ওই পক্ষ শহরে মানববন্ধন করে তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি পণ্ড করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
তবে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত। কে বা কারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন, তা জানেন না। হয়তো ধর্ষক পক্ষের কেউ হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র উপজ ল র ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের অভিযোগ, নওগাঁয় ইউএনওর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন
নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান ও ধামুইরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালামের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ইউএনওর অপসারণের দাবিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, উপজেলার মঙ্গলকোঠা আবাসিক এলাকায় ধামুইরহাট পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার লোকজনের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। ময়লা ফেলতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান ও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মঙ্গলকোঠা এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুই নারীকে মারধর করেন।
গৃহবধূ সামিরন খাতুন বলেন, ‘পৌরসভার লোকজন গাড়িতে করে আমাদের এলাকায় ময়লা ফেলতে এলে এলাকার সবাই মিলে বাধা দিই। বসতবাড়ির আশপাশে ময়লা ফেললে সমস্যা হবে বলে ইউএনওকে ময়লা না ফেলতে এলাকাবাসী অনুরোধ করেন। কিন্তু ইউএনও আমাদের কথা না শুনে আমাকেসহ মিতুকে (অন্তঃসত্ত্বা নারী) নিজেই লাঠি দিয়ে মারধর করেন। আমরা ইউএনওর অপসারণসহ তাঁর কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে স্থানীয় আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ইউএনও আমার গর্ভবতী স্ত্রীর গায়ে তুলেছে সবার সামনে। একজন ইউএনওর আচরণ এমন হলে আমরা বিচার কার কাছে পাব?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা একটি খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি ওই এলাকায় গেলে এলাকার কিছু লোক তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেখানে কয়েকজন অবৈধ দখলদার নারী-পুরুষ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আনসারদের গায়ে হাত তোলেন। নারীদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘সেখানে কারও গায়ে হাত তোলা হয়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, আজ মানববন্ধন করে কিছু লোক ইউএনওর বিরুদ্ধে নারীকে মারধরের অভিযোগ করেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।