ভোলার তজুমদ্দিনে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার আসামিদের শাস্তির দাবিতে পৃথক মানববন্ধন করেছে উপজেলা বিএনপির দুটি পক্ষ। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার পর উপজেলা সদরে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় ‘তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ‘উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.

ফরিদ উদ্দিনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় উপজেলা শ্রমিক দল।

উল্লেখ্য, তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নে স্বামীকে রাতভর নির্যাতনের পর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তজুমদ্দিন থানায় সোমবার একটি মামলা হয়। গত রোববার সকালে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে উল্লেখ করে ওই মামলায় শ্রমিক দল, যুবদল ও কলেজ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী গৃহবধূকে মঙ্গলবার ডাক্তারি পরীক্ষার (ফরেনসিক) জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যানারে সন্ধ্যা ছয়টায় উপজেলা সদর রোডে ‘নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবিতে’ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করা হয়। নেতারা ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ বলেন, ‘এই বর্বর ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যে–ই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ‘উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে’ সদর রোডের মোল্লা পুকুর পাড়ে গণধর্ষণ মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মোল্লা পুকুর পাড়ে কয়েক শ মানুষ জমায়েত হলে তাঁদের ওপর অতর্কিত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় তজুমদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মামুনুল ইসলাম, প্রস্তাবিত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক প্রার্থী মেহরাব হোসেন, চাঁদপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির তালুকদার, কলেজ ছাত্রদলের নির্বাহী সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে এবং বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক প্রার্থী জাহিদুর রহমান বলেন, তাঁরাই প্রথম উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মোল্লা পুকুর পাড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেন। কিন্তু বিএনপির আরেক পক্ষ ওই একই স্থানে মানববন্ধনের ডাক দেয়। পরে ওই পক্ষ শহরে মানববন্ধন করে তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি পণ্ড করতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

তবে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ওমর আসাদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত। কে বা কারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন, তা জানেন না। হয়তো ধর্ষক পক্ষের কেউ হতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র উপজ ল র ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ দিন ধরে চলমান আন্দোলন এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে গত কয়েকদিন ধরে চলা অনশনকারীদের ওপর হামলা ও ধাওয়া দেওয়া হয়েছে। এতে আন্দোলনকারী অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীরা।

এদিন সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের আয়োজনে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যহত করার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলের পরপরই আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহত শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্মৃতি সংসদের নেতৃত্বে জাহিন-রাফি

রাকসু ফান্ডে জমা ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, হল সংসদের ফান্ড অস্পষ্ট

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।

তিনি বলেন, “১৩ আগস্ট বরিশালে সফরে এসে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সেই পুরনো সিন্ডিকেট দালাল চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় অনশনরত শিক্ষার্থীসহ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।”

তিনি আরো বলেন, “বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবায় অবহেলা এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আমরা ১৮ দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্ব-শরীরে বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেবেন। কারণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরবর্তী যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা অধিকাংশই বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত।”

রনি বলেন, “যে কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো উপদেষ্টার কাছে বলতে চেয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা না এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বরিশালে পাঠিয়েছেন। মহাপরিচালক বরিশালে মতবিনিময় সভা করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কোনো প্রতিনিধি না রেখে বরং অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এ কারণেই হাসপাতালের স্টাফরা আন্দোলনকারী ও অনশনরতদের ওপর হামলা চালাতে সাহস দেখিয়েছেন। আমারা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করব।”

অপরদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্ররা আমাদের কটূক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এ সময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।”

এর আগে, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল থেকে শহরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা আহত হন এবং আন্দোলনরত কয়েকজনকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঢাকা/পলাশ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেত্রকোনায় বিকাশকর্মী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
  • রংপুরে শ্বশুর-জামাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
  • বরিশালে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিনসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
  •  সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিসহ তিন কর্মকর্তার পত্যাহার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন
  • মহিউদ্দিন রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
  • বরিশালে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
  • সাদাপাথর লুটে মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন