ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পতনের পর নতুন নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হন সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক ফারুক আহমেদ। শুরুতে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একই সভায় পদত্যাগ করেন সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এরপর বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব পান ফারুক। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি বিসিবির কয়েকটি এফডিআর বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর করায় উঠেছে সমালোচনার ঝড়। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে— ফারুক কি আগের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন? এমন প্রশ্নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বর্তমান বিসিবি সভাপতি। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট কারও সঙ্গেই তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

শনিবার (৩ মে) তৃতীয় বিভাগ বাছাই টুর্নামেন্টের ফাইনালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব ইস্যুতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। যদি থাকত, তাহলে আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। এটা সম্পূর্ণ বানানো ও ভিত্তিহীন কথা।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি নতুন সরকারের অধীনে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েছি। যদি আমার আগের সরকারের সঙ্গে সামান্যও সংশ্লিষ্টতা থাকত, তাহলে এই দায়িত্ব পেতাম না।’

সমালোচনার বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে ফারুক বলেন, ‘ভালো কাজ অনেক সময় চাপা পড়ে যায় অপ্রয়োজনীয় সমালোচনার কারণে। গঠনমূলক সমালোচনাকে আমি স্বাগত জানাই, কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক বা ভিত্তিহীন সমালোচনা শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতে চাওয়া একটি পক্ষ এই সমালোচনায় উসকানি দিচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। আমি চাই, সত্য তুলে ধরুন, পক্ষপাতিত্ব নয়। আমার দায়িত্ব বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এখানকার ত্রুটি তুলে ধরার চেষ্টা করব, তারপর বাকি কাজ।’

এদিন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের আয়োজন প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এক দশকের বেশি সময় পর আবারও তৃণমূল পর্যায়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। এখান থেকে ইয়াং টেরিপাস ক্লাব ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব তৃতীয় বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে। এই উদ্যোগ যেন চলমান থাকে, সেটাই চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

অভিনয় থেকে দূরে প্রিয়দর্শিনী

একটা সময় ছিল, যখন তাঁর একটুখানি হাসি, চোখের দৃষ্টি কিংবা নিঃশব্দে ঘুরে যাওয়া চুলের ভঙ্গিমাও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিত। নাম তাঁর মৌসুমী। ‘প্রিয়দর্শিনী’– এ নামটা যেন তাঁর জন্যই সৃষ্টি। শুধু অভিনয় দিয়ে নয়; নিজের ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য এবং কোমল আচরণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটি ভক্তের হৃদয়ের রানী। 

মৌসুমী এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। দুই বছর ধরে সেখানেই। মায়ের অসুস্থতা আর মেয়ের পড়াশোনার কারণে পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে পর্দায় দেখা মিলছে না তাঁর। ফলে ক্যামেরার ঝলক, শুটিং সেটের কোলাহল কিংবা মেকআপ রুমের আয়নায় প্রতিফলিত হয় না প্রিয়দর্শিনীর মুখ। তিনি আছেন শুধুই আপনজনের সঙ্গে– নীরবে, নিশ্চুপে। ওমর সানী– যিনি একসময় ছিলেন পর্দার নায়ক, বাস্তবে আছেন তাঁর জীবনসঙ্গী হয়ে। সম্প্রতি তিনি বললেন এক গভীর বিষাদের কথা, ‘মৌসুমী ভুলে যেতে চাইছে, সে কখনও মৌসুমী ছিল।’

ওমর সানীর এই কথায় আছে তীব্র এক নীরবতা। যে অভিনেত্রী একসময় সিনেমা হলের অন্ধকার ভেঙে আলো হয়ে উঠতেন, তিনিই আজ নিজেকে পেছনে সরিয়ে রাখছেন সময়ের গহ্বরে। সিনেমাকে ভালোবেসে এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া সেই মৌসুমী কি তবে বিদায় নিতে চাইছেন? কারণ? একটা সময় আসে, যখন মানুষ নিজেকেই প্রশ্ন করে– আর কতদূর? কী পেলাম? আর কী চাই? মেয়ের পড়াশোনা, অসুস্থ মা, পরিবার– এসব হয়তো ‘উত্তর’ নয়, তবে ব্যাখ্যা। 

তবু প্রশ্ন থাকে, এত সহজে কি বিদায় বলা যায়? একজন মৌসুমী কি হারিয়ে যেতে পারেন? তিনি তো শুধু একজন অভিনেত্রী নন; একসময়ের আবেগ, এক প্রজন্মের ভালোবাসা। নতুন প্রজন্ম হয়তো তাঁর নাম জানে, ছবিগুলো চেনে, কিন্তু অনুভব করে না তাঁর পর্দার উপস্থিতি। সেই সৌজন্যবোধ, সেই মায়া– সব যেন ধীরে ধীরে আটকে যাচ্ছে সময়ের ফ্রেমে। একজন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো অভিনেতা তাঁর চরিত্রের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন, তবে সে-ই সত্যিকারের কিংবদন্তি।’ মৌসুমী ঠিক তেমনই একজন। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে যাঁর যাত্রা শুরু, তা থেমে থেমে নয়; বরং গানে, গল্পে, কান্নায় আর ভালোবাসায় ছিল পূর্ণ। সেই সিনেমায় সালমান শাহর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।

এখন প্রশ্ন মৌসুমী কি কখনও চলে যেতে পারেন? তিনি তো আমাদের স্বপ্নের মতো সুন্দর। যারা মৌসুমীর সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, যারা আজও তাঁর পুরোনো ছবির গান শুনে একা রাতে জানালার বাইরে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাদের জন্য খবরটা যেন হারিয়ে যাওয়ার গল্প– একটা সময়ের, একটা আবেগের, একটা ভালোবাসার। 

হয়তো এ বিরতিটা তাঁর প্রয়োজন ছিল। হয়তো তিনি আর ফিরবেন না। অথবা একদিন, হঠাৎ করেই আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে বলে উঠবেন– ‘আমি ফিরেছি।’ যদি না-ই ফেরেন, তাহলেও মৌসুমী ঠিক যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। স্মৃতির মণিকোঠায়, আলো-ছায়ার কল্পনায় আর কোটি ভক্তের ভালোবাসায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ