যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক ঝাঁকির মধ্যেই আজ শনিবার সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে সিঙ্গাপুরে। স্বাধীনতার আগে থেকে ক্ষমতায় থাকা পিপল’স অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) এবারও নিরঙ্কুশ জয় পাবে বলে ধারণা সবার। তাই আসন নয়, বিশ্লেষকদের নজর ভোটের ব্যবধানের দিকে। দেশটিতে মাত্র ৯ দিনের নির্বাচনী প্রচার অনুষ্ঠিত হয়। এবারের ভোটের প্রচারে জীবনযাত্রা ব্যয়বৃদ্ধি ও আবাসনের চাহিদাই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। খবর রয়টার্সের

আজ শনিবার ভোটের দিন সকালে ভারি বৃষ্টি হলেও কিছুক্ষণেই মধ্যেই তা থেমে যায়। দুপুরের মধ্যেই প্রায় অর্ধেক ভোটার ভোট দিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে মোট ১ হাজার ২৪০টি কেন্দ্রে চলছে ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। সিঙ্গাপুরে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক।

১৯৫৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের প্রতিটি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে পিএপি। প্রায় প্রতিবারই পার্লামেন্টের ৯০ শতাংশের বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন দলটির প্রার্থীরা। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে সেই ধারায় ছেদ পড়ে। সেবার পিএপির ভোট কমে দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ১ শতাংশে, আর বিরোধী ওয়ার্কার্স পার্টি পায় রেকর্ড ১০টি আসন, যা ছিল সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে বিরোধীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য, আর পিএপির জন্য সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। তাই, এবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রথম নির্বাচনে ওয়ং চেষ্টা করছেন সেই ব্যবধান কমাতে।

সিঙ্গাপুরের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধী কণ্ঠ দমিয়ে রাখা এবং বিরোধীদলকে নানা কোণঠাসা করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। ৫২ বছর বয়সী ওং গত বছর দায়িত্ব নেন দীর্ঘদিনের নেতা লি সিয়েন লুংয়ের কাছ থেকে। এবার তার নেতৃত্বেই ৯৭টি আসনে লড়ছে পিএপি। ওয়ার্কার্স পার্টি লড়ছে মাত্র ২৬ আসনে।

প্রধানমন্ত্রী ওয়ং বোটানিক গার্ডেনসের কাছে একটি কেন্দ্রে দুপুরে ভোট দেন। এর আগে বা পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।

রয়টার্স লিখেছে, বিশ্বের ব্যয়বহুল শহরগুলোর একটি সিঙ্গাপুরে বর্তমানে ভোটারদের প্রধান উদ্বেগের জায়গা- জীবনযাত্রার ব্যয় ও বাসস্থান সঙ্কট। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের অভিঘাতে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতিতে অস্থিরতার শঙ্কাও তাদের তাড়া করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পিএপির ভোট কিছুটা কমলেও বড় অঘটনের সম্ভাবনা নেই। তবে তরুণদের মধ্যে বিকল্প কণ্ঠের চাহিদা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ল্যাম পেং ইর বলছেন, পিএপির জনপ্রিয়তায় কিছুটা পতন দেখা যেতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। এবার তা যদি ৫৭ বা ৫৮ শতাংশে নামে, তাতে জনগণ খুব বেশি অবাক হবে না, পিএপিও হবে না।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, বাড়িতে হাজির পুলিশ

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করে প্রশংসায় ভাসছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়ার বৃদ্ধ মো. সাদেক আলী প্রামানিক।

গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঘোষিত বিএসএস পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ২.৭৫ সিজিপিএ পেয়ে পাস করেছেন। 

সাদেক আলীর এমন সাফল্যে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জেলা পুলিশও। শনিবার (৩ মে) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী সাদেক আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এবং নলডাঙ্গা থানার (ওসি তদন্ত) মো. মোনোয়ার জাহান।

পেশায় কৃষক সাদেক আলী প্রামানিক এক ছেলে এবং দুই মেয়ের বাবা। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাদেক আলী প্রামানিক ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৬ এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটন এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থেকে তিনি দূরে সরে যাননি। 

তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে বাউবির অধীনে নাটোর দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাদেক আলীর পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়। সেই ভাঙা পা নিয়ে তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়ে ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। 

সোমবার প্রকাশিত ২০২২ সালের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে তিনি উত্তীর্ণ হওয়ায় সাদেক আলী ও তার পরিবারসহ খুশি এলাকাবাসী। 

সাদেক আলী প্রামানিকের ছেলে নাটোরের দিঘাপাতিয়া এমকে কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “বাবা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের কখনোই ছাড় দিতেন না। আমাদের তিন ভাইবোনকেই তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমতে এখন সবাই আমরা প্রতিষ্ঠিত। বাবা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছিলেন, তারপর আর্থিক অনটনের জন্য আর পড়তে পারেননি। তবে ২০২০ সালে বাবা ইচ্ছে প্রকাশ করেন ডিগ্রি কমপ্লিট করবেন।”

তিনি আরো বলেন, “প্রথমে আমরা মনে করেছি যে তিনি এমনিতেই বলছেন। পরে তার ইচ্ছায় তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়। আল্লাহর রহমতে তিনি পাসও করেছেন। বাবার এমন সাফল্যে আমরা ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই অত্যন্ত খুশি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।”

সাদেক আলী প্রামানিক বলেন, “আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী ছিলাম। প্রত্যেক ক্লাসেই আমার রোল ১ ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে সেভাবে পড়াশোনা করা হয়নি। দীর্ঘ দিন চলে যায়। তবু কেন জানি মনে হচ্ছিল জীবনে কিছু একটা বাদ আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ডিগ্রি পরীক্ষা দেব। পরীক্ষার ভেতর আমার পা ভেঙে যায়। সেভাবেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে পাস করেছি।” 

তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন পড়াশোনার কথা। আমি প্রমাণ করেছি যে পড়াশোনার কোনো বয়স নেই। যে কোনো সময় যে কোনো মানুষ পড়াশোনা করতে পারে, জ্ঞান অর্জন করতে পারে।”

নলডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জিয়াউল হক জিয়া তার নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে লিখেছেন- ‘‘ভাঙা পা নিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে ৭৫ বছর বয়সে এ অর্জনে প্রমাণ হয়েছে দৃঢ়বিশ্বাস এবং কঠিন মনোবল থাকলে সব সম্ভব। সাদেক আলী প্রামাণিক শিক্ষাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন বলে এ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়ে দিয়েছেন।”

নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাদেক আলীকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন, “৭৫ বছর বয়সে তিনি (সাদেক আলী) স্নাতক পাস করেছেন- এটা সত্যিই আনন্দ, অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহের। তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে কোনো বয়সেই যে কোনো বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। সাদেক আলীর জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটোর উপ-আঞ্চলিক পরিচালক তানিয়া তালুকদার বলেন, “সাদেক আলীর অদম্য ইচ্ছা আর অক্লান্ত পরিশ্রমই এ বয়সে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। এটি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) জন্য একটি গর্বের বিষয়।”

ঢাকা/আরিফুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস, বাড়িতে হাজির পুলিশ
  • মতবিরোধ ভুলে রাজপরিবারের সঙ্গে আবারও একত্র হতে চান হ্যারি: বিবিসিকে সাক্ষাৎকার