প্রজনন মৌসুমে হালদায় মরে ভেসে উঠল মা কাতলা মাছ
Published: 4th, May 2025 GMT
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে আবারও মা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। আজ রোববার বেলা ৩টার দিকে নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় মাছটি ভেসে ওঠে। এর ওজন প্রায় ৫ কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এর আগে গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ৬টি বড় মা মাছ ও ৩টি ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল। এরপর তেমন মা মাছ মরার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল আরও ৩টি।
মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বিকেলে জোয়ারের সময় আজিমের ঘাটে মরা কাতলা মাছটি ভেসে যেতে দেখে সেটি ডাঙায় তুলে আনেন নদীর স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে রাউজান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন এসে সেটির প্রাথমিক সুরতহাল করে মাটিচাপা দেন।
ভেসে ওঠা কাতলা মাছটি মা মাছ বলে নিশ্চিত করেছেন রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাছটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো কিছু দিয়ে এটির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন করে মাছটি মাটিচাপা দেওয়া হয়।
এদিকে হালদায় প্রজনন মৌসুমের শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলল। এর মধ্যে নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। সরঞ্জাম নিয়ে কয়েক শ ডিম সংগ্রহকারী নদীতে দিনরাত অবস্থান করছেন মা মাছেরা কখন ডিম ছাড়ে সে অপেক্ষায়। এর ভেতর নদীতে মা মাছ মরার এমন সংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেল। এখনো নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। এর মধ্যে মা মাছের মরে ভেসে ওঠা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে বিপুল পোনা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নদী গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিল থেকে জুনের শেষ হালদার মা মাছের প্রজনন মৌসুম। আগামী ৯ থেকে ১৫ মের মধ্যে জো আছে। তখন মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। এই মৌসুমে মা মাছ মরে ভেসে ওঠা দুশ্চিন্তার বিষয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রজনন ম স ম মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনার ধারে দেখা পাখিটি
সুন্দর এই লালঘাড় পেঙ্গা পাখি বাংলাদেশের অল্প কিছু জায়গায় বিস্তৃত। এ পাখি মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বনগুলোতে; বিশেষ করে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন বনে, শেরপুরের গারো পাহাড় ও মধুপুরের জাতীয় উদ্যানে পাওয়া যায়।
গত নভেম্বরে টাঙ্গাইলে যমুনা রেলসেতুর পূর্ব প্রান্তে নলখাগড়ার ঝোপ এলাকায় পাখি জরিপকাজে বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞ ডক্টর রশিদসহ কয়েকজন অংশ নিয়েছিলাম। সকালে ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখছিলাম ও ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ দূর থেকে দেখতে পেলাম, শালিকের মতো একটি পাখি। এই কম দেখা যাওয়া পাখিটির দেহ লালচে বাদামি এবং মুখ কালো এবং গলার পাশের দিকটায় লাল দাগ দেখতে পেলাম। পাখিটি শালিকও না, আবার বুলবুলিও না।
চেনার জন্য তাই ছুটে গেলাম পাখিটির কাছাকাছি, ততক্ষণে সঙ্গে আরও দুটি পাখি যোগ দিল। আমার হাতে থাকা জুম লেন্সের ক্যামেরা দিয়ে তাড়াতাড়ি কয়েকটি ছবি তুলে পর্যবেক্ষণ করলাম এবং বুঝতে পারলাম, এ তিনটি পাখি হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার ঝোপঝাড়ে মাঝেমধে৵ পাওয়া যায়, এমন একটি পাখি। যেটির ইংরেজি নাম Rufous-necked Laughing Thrush; বাংলা নাম লালঘাড় পেঙ্গা, বৈজ্ঞানিক নাম Garrulax ruficollis। অবাক হলাম কিছুটা; কারণ, এ পাখিটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) পাহাড়ি বনগুলোর ঝোপে পাওয়া যায়। তবে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বেশ কমই আগে দেখা গেছে। মধুপুরে আমি একবার দেখেছি। এই পাখিগুলোর কালচে ধূসর মাথা; কপাল, গাল, গলা ও বুক কালো; ঘাড়ে লালচে পট্টি। চোখ বাদামি, চঞ্চু কালচে বাদামি, পা কালচে বাদামি এবং তলপেট ও লেজের তলায় লাল। ই-বার্ডের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৬৬ প্রজাতির পেঙ্গা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় চার প্রজাতির পেঙ্গা। যেমন ধলাঝুঁটি পেঙ্গা, ছোট মালাপেঙ্গা, বড় মালাপেঙ্গা ও লালঘাড় পেঙ্গা।
তিন থেকে পাঁচটি পেঙ্গা পাখি একত্রে দলবদ্ধ অবস্থায় মূলত বেশি পাওয়া যায়। এরা পতঙ্গভুক ও গায়ক পাখি। মাটিতে শুকনা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় খুঁজে খুঁজে খেয়ে থাকে। তাই ফসলের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই প্রজাতির পাখি কীটপতঙ্গ খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রাণী ভক্ষণের মাধ্যমে এক প্রাণী থেকে খাদ্যশক্তি অন্য প্রাণীতে স্থানান্তরে সহায়তা করে। ফলে এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে পেঙ্গা পাখি প্রজনন করে থাকে। শুকনা ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে কাপ আকৃতির বাসা তৈরি করে। তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। যদিও এরা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাখি; নদীর ধারের কাশবন, জঙ্গল অথবা নলখাগড়া থাকে, এমন বাসস্থান এ পাখির খুবই পছন্দ। তাই এ ধরনের বাসস্থানগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। নির্জন এলাকায় বসবাস করতে এরা পছন্দ করে।
পেঙ্গা পাখির বাসস্থান এখন হুমকির সম্মুখীন। এই প্রজাতির পাখির জন্য বাসা বানানোর নিরাপদ স্থান বা বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত গাছের এখন খুবই অভাব। সহজে ও নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পারছে না বলে দিন দিন এ পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এদের বাসস্থান সংরক্ষণ ও বাসা বানানোর জন্য পছন্দের গাছ লাগানো এখন খুবই জরুরি। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে পতঙ্গভুক এ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাবে।
মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, অধ্যাপক ও প্রাণী-গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়