দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে আবারও মা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। আজ রোববার বেলা ৩টার দিকে নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় মাছটি ভেসে ওঠে। এর ওজন প্রায় ৫ কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এর আগে গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ৬টি বড় মা মাছ ও ৩টি ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল। এরপর তেমন মা মাছ মরার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল আরও ৩টি।

মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বিকেলে জোয়ারের সময় আজিমের ঘাটে মরা কাতলা মাছটি ভেসে যেতে দেখে সেটি ডাঙায় তুলে আনেন নদীর স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে রাউজান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের লোকজন এসে সেটির প্রাথমিক সুরতহাল করে মাটিচাপা দেন।

ভেসে ওঠা কাতলা মাছটি মা মাছ বলে নিশ্চিত করেছেন রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাছটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো কিছু দিয়ে এটির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন করে মাছটি মাটিচাপা দেওয়া হয়।

এদিকে হালদায় প্রজনন মৌসুমের শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলল। এর মধ্যে নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। সরঞ্জাম নিয়ে কয়েক শ ডিম সংগ্রহকারী নদীতে দিনরাত অবস্থান করছেন মা মাছেরা কখন ডিম ছাড়ে সে অপেক্ষায়। এর ভেতর নদীতে মা মাছ মরার এমন সংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেল। এখনো নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। এর মধ্যে মা মাছের মরে ভেসে ওঠা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে বিপুল পোনা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নদী গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিল থেকে জুনের শেষ হালদার মা মাছের প্রজনন মৌসুম। আগামী ৯ থেকে ১৫ মের মধ্যে জো আছে। তখন মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। এই মৌসুমে মা মাছ মরে ভেসে ওঠা দুশ্চিন্তার বিষয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রজনন ম স ম মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভারতকে পাল্টা জবাব দিতে হবে’: ট্রাম্পের শুল্ক ইস্যুতে শশী থারুর

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের জবাব দেওয়া উচিত।

কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।

সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের শশী থারুর বলেন, ‘প্রথমে আমাদের আলোচনায় বসা উচিত। জানি না, ট্রাম্প আমাদের ওপর এত রেগে আছেন কেন। চীনকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের মাত্র ২১ দিন। এখন যদি তারা শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, তবে আমাদের জবাবও হতে হবে পাল্টা শুল্ক।’

থারুর জানান, বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে গড়ে ১৭ শতাংশ শুল্ক নেয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদেরও সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা উচিত। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি এটা করে, আমরাও একই কাজ করব।’

বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।শশী থারুর, কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা

গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভারত বারবারই বলেছে, তার জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সস্তা তেল কেনা দরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।

ট্রাম্পের চাপের মুখেও ভারত কি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে—এমন প্রশ্নে থারুর বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে, কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।’

বর্তমানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা কার্যত স্থগিত রয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে কৃষিসহ বেশ কিছু কৌশলগত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার দিতে ভারতের রাজি না হওয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। দেশীয় কৃষকদের স্বার্থেই এমন অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।

ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারতের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। আমি জানি, এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী ও পশুপালকদের স্বার্থে ভারত প্রস্তুত।’

আরও পড়ুন‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী১ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষির সঙ্গে যুক্ত। সরকার যে–ই হোক—মোদির কিংবা আমাদের; কৃষকের পাশে দাঁড়াতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে থারুর বলেন, ‘বিদেশে আমাদের সত্যিকার বন্ধুরা বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু যাঁরা বুঝতে প্রস্তুত নন, আমাদের সম্পর্ককে আমাদের মতো করে মূল্য দেন না, তাঁদের বাদ দিয়ে আমাদের অন্য বন্ধু খুঁজতে হবে।’

আরও পড়ুনভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের, মোট দাঁড়াল ৫০১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ